অস্ট্রেলিয়ায় দুই বছর মুঠোফোনবিহীন শ্রেণিকক্ষ: ফলাফল কেমন
Published: 15th, October 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ার স্কুলে মুঠোফোন নিষিদ্ধ করার দুই বছর পর এর প্রভাব এখন অনেক বেশি স্পষ্ট। দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় এই নীতি কার্যকর হওয়ার পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা এর প্রভাব অনুভব করছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিশ্চিয়ান কলেজের মেলবোর্ন শাখায় ফোন নিষিদ্ধ করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনা। অধ্যক্ষ ক্যালেব পিটারসন বলেন, ‘যখন ফোন হাতের নাগালে থাকে, শিক্ষার্থীর মন কখনো পুরোপুরি শ্রেণিকক্ষে থাকে না। আমরা চাইছিলাম, তারা যেন আবার শেখার পরিবেশে মনোযোগী হয়।’ এখন শিক্ষার্থীদের ফোন ব্যাগ বা লকারে রাখতে হয়; হাতে ধরা পড়লে সেটি জব্দ করে দিনের শেষে ফেরত দেওয়া হয়।
দেশটির ভিক্টোরিয়া প্রদেশে ২০২০ সালে প্রথম ফোন নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ২০২৩ সালের মধ্যে একই পদক্ষেপ নেয়। ২০২৪ সালের শুরুতে কুইন্সল্যান্ডও নীতিটি কার্যকর করে। নীতিটি শুরু থেকেই অভিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়, অনেকে বিশ্বাস করতেন এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়বে, সামাজিক পরিবেশও উন্নত হবে ও শিক্ষক যত্নসহকারে পড়াতে পারবেন।
আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫দুই বছর পর শিক্ষকেরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বেড়েছে ও পাঠদানের পরিবেশ ভালো হয়েছে। এ ছাড়া বিরতির সময় মাঠে খেলাধুলা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরাসরি সামাজিক মেলামেশা বেড়েছে। ক্যালেব পিটারসন বলেন, ‘পাঠ শুরু এখন আরও শক্তিশালী, বাধা অনেক কমেছে, বন্ধুত্বও দৃঢ় হচ্ছে।’
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের (NSW Department of Education) জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৯৫% প্রধান শিক্ষক এখনো নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেন। ৮৬% বলেছেন সামাজিক মেলামেশা বেড়েছে, ৮৭% বলেছেন মনোযোগ বেড়েছে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার গবেষণায় ৭০% শিক্ষক মনোযোগ বাড়ার কথা বলেছেন এবং ৬৪% ফোনজনিত সংঘাত কমে যাওয়ার কথাও বলেছেন।
তবে সবাই আবার এই নীতিকে স্বাগত জানায়নি। পশ্চিম সিডনির সাবেক শিক্ষার্থী রুকাইয়া বলে, ‘ফোন কেড়ে নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়েছিল। তারা গোপনে ফোন ব্যবহারের উপায় বের করেছে।’ তার মতে, ফোন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার অনুভূতি দেয় আর সেটি হঠাৎ ব্যবহার করতে না দেওয়া বা কেড়ে নেওয়া অনেকের জন্য মানসিক চাপ তৈরি করেছে। তবু অনেক শিক্ষার্থী স্বীকার করেছে, ফোন না থাকায় অনলাইন প্রতারণা, হয়রানি ও গোপনে ছবি তোলার আশঙ্কা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
টনি মরদিনি মেলবোর্নের একটি সিলেকটিভ হাই স্কুলের অধ্যক্ষ। তিনি জানান, ফোন নিষিদ্ধের পর মনোযোগ বেড়েছে ও সাইবার বুলিং কমেছে। তবে তিনি এটাও বলেন, ‘ফোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণ উপকরণ ছিল, এখন স্কুলগুলোকে বিকল্প প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।’
স্কুলে এভাবে শিক্ষার্থীদের ফোন রেখে দেওয়া হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন য গ ব ড র মন য গ দ ই বছর বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়কে থাকার ঘোষণা এমপিও শিক্ষকদের
তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকাল থেকে চতুর্থ দিনের মতো ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। দুপুরের মধ্যে দাবি না মানলে পূর্ব ঘোষিত শাহবাগ মোড় ব্লকেড করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আন্দোলনকারী ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’–এর সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আমরা এনসিপির নেতাদের জন্য অপেক্ষা করছি। তারা আসার পর শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হবে।”
কর্মসূচিতে বাধা দিলে পরিস্থিতি খারাপ হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “আজকের শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচিতে প্রশাসন বাধা দিলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে। আপনারা আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ ব্লকেড কর্মসূচি পালন করতে দেন। আমরা কর্মসূচি শেষে পুনরায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফিরে আসবো।”
তিনি আরো বলেন, “যদি কর্মসূচিতে বাধা ও শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা হয় তাহলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাবে। তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।”
কিছু জেলায় কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে সংবাদ আসছে। যারা বাধা দিচ্ছেন তাদের হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, আপনারা হয়রানি বন্ধ করেন, নতুবা আপনাদের অফিস ঘেরাও করা হবে।”
এর আগে গতকাল বিকেলে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তবে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হাইকোর্ট মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পরে সেখানেই অবস্থান নেন তারা। সেখান থেকে রাতে নতুন কর্মসূচির কথা জানান শিক্ষকনেতা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। এতে সারা দেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেন। কিন্তু সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তাঁরা। লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে পানি ছুড়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও সংহতি জানান।
শিক্ষক-কর্মচারীদের বাকি দুটি দাবি হলো শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়ের জন্য চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করা।
ঢাকা/রায়হান/ইভা