ওডেসার মেয়রের ইউক্রেনীয় নাগরিকত্ব বাতিল করলেন জেলেনস্কি
Published: 15th, October 2025 GMT
রাশিয়ার পাসপোর্ট রাখার অভিযোগে ইউক্রেনের ওডেসা শহরের মেয়র হেন্নাদি ত্রুখানভের নাগরিকত্ব বাতিল করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই সিদ্ধান্তের ফলে ত্রুখানভকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হতে পারে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার সাবমেরিনকে ‘ল্যাংড়া’ বলে ন্যাটো প্রধানের ব্যাঙ্গ
রাশিয়ায় যুদ্ধে নিহত রাজবাড়ীর নজরুল, পরিবার জানল ৭ মাস পর
প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষ্ণ সাগরের তীরে অবস্থিত ইউক্রেনের বৃহত্তম বন্দর শহর ওডসা পরিচালনার জন্য সামরিক প্রশাসন নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ওডেসার জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরিত একটি ডিক্রির মাধ্যমে ওডেসার মেয়র হেন্নাদি ত্রুখানভের নাগরিকত্ব স্থগিত করা হয়েছে।”
এসবিইউ ওডেসার মেয়রের বিরুদ্ধে ‘আগ্রাসী দেশের বৈধ আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট রাখার’ অভিযোগ করেছে।
মস্কো ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন চালানোর কারণে ইউক্রেনের আইনে রাশিয়ার নাগরিকত্ব রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ত্রুখানভের নাগরিকত্ব বাতিল করায় তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে জানান, তিনি এসবিইউ-এর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৈঠকে সীমান্ত ও দক্ষিণাঞ্চলে রুশ গুপ্তচর চক্র ও সহযোগীদের কার্যক্রম প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে তাকে অবহিত করা হয়।
জেলেনস্কি বলেন, এসবিইউ প্রধান নিশ্চিত করেছেন- কিছু ব্যক্তির রাশিয়ান নাগরিকত্ব রয়েছে, তাদের বিষয়ে প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই আমি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছি।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “ওডেসার অনেক নিরাপত্তা সমস্যা অনেক দিন ধরেই উত্তরহীন রয়ে গেছে।” তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জেলেনস্কি প্রকাশ করেননি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ২০১৪ সাল থেকে ওডেসার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ত্রুখানভ। টেলিগ্রামে একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “আমি কখনও রাশিয়ান পাসপোর্ট পাইনি। আমি ইউক্রেনের নাগরিক।”
ত্রুখানভ জানান, তিনি যতদিন সম্ভব ‘নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাবেন’ এবং মামলাটি তিনি আদালতে নিয়ে যাবেন।
তার রাশিয়ান পাসপোর্টের ছবি ইউক্রেনের সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে।
একসময় রাশিয়াপন্থি রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ত্রুখানভ ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। তিনি ওডেসা শহরকে রক্ষা এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার পাশাপাশি প্রকাশ্যে মস্কোর সমালোচনা করেন।
সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, জেলেনস্কি আরো দুই ব্যক্তির ইউক্রেনীয় নাগরিকত্ব বাতিল করেছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টের তথ্যানুসারে, তারা হলেন- রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক ও ব্যালে নৃত্যশিল্পী সের্গেই পোলুনিন এবং সাবেক ইউক্রেনীয় রাজনীতিক ওলেগ স্যারিওভ।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউক র ন র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলত নঅ’ স্লোগানটি কেন আবার প্রাসঙ্গিক
ফেনী কলেজের ফটক দিয়ে ঢুকতেই লম্বা মাঠ। মাঠের একদিকে অনার্স ভবনের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি কলেজটির শিক্ষার্থীদের ফি বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-অসন্তোষের বিষয়টি জানতেই কলেজে আসা। আড্ডারত শিক্ষার্থীদের কাছে ফি বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করলে একজন বললেন, ‘আমাদের কলেজের একটি স্লোগান নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। কিন্তু এখন এটাই আমাদের বাস্তবতা। দীর্ঘ দিনের লুটপাটের কারণে কলেজের ফান্ডের(তহবিল) অবস্থা খারাপ। তাই বাড়তি ফি চাপানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর।’
‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলতো নঅ’— জনপ্রিয় এই স্লোগানটি কথা শেষে যোগ করে কিছুক্ষণ হাসলেন মুহাইমিন তাজিম নামের ওই তরুণ। কলেজের গণিত বিভাগের এই শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কও। তাঁর কথার সঙ্গে একমত হলেন সেখানে বসে থাকা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কথা, ফেনী কলেজের নানা অনিয়ম দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্লোগানটি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ফেনী কলেজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁরা জানালেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা খাতে দুর্নীতির কারণে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি ফি এর বোঝা চেপেছে। লুটপাটের কারণে কলেজের তহবিল সংকট পূরণ করতে বর্তমান অধ্যক্ষ শিক্ষার্থী প্রতি নতুন করে ১০০ টাকা ফি বাড়িয়েছেন।
কলেজটিতে চলতি বছর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার্থীর শাখায় ছাত্রদের ২ হাজার ৬৮০ টাকা, ছাত্রীদের ২ হাজার ৫৬০ টাকা এবং বিজ্ঞান শাখার ছাত্রদের ২ হাজার ৭৮০ ও ছাত্রীদের ২ হাজার ৬৬০ টাকা হারে ফি দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছে। বিগত বছরের এই ফি ১০০ টাকা বেশি।
ফি বৃদ্ধির যে কারণ দেখাল কর্তৃপক্ষ
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ফি বৃদ্ধি করা হয়। সভায় ‘অত্যাবশ্যকীয় নিরাপত্তা ফান্ড’ ৬৫০ টাকা স্থলে ৭৫০ টাকা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, কলেজের কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেতন ও বোনাস মিলিয়ে কর্মচারীদের পেছনে বছরে ব্যয় হয় ৭১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এই খাতে নতুন আরও আটজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় বছর শেষে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৭৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ছাড়াও এই খাত থেকে টাকা ব্যয় করা হয় ভূমিসংক্রান্ত মামলার উকিলের ফি, কলেজ আঙিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়। গড়ে বছরে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু এই খাতে শিক্ষার্থীদের থেকে বছরে আদায় হচ্ছে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
ফেনী কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবু হেনা আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কলেজের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ফেনী কলেজ নিয়ে জনপ্রিয় হওয়া স্লোগানের একটা ইতিহাস আছে। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় স্থানান্তরিত হয়। সেখানকার স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সঙ্গে কলেজের অর্থ নিয়ে বিবাদ তৈরি হলে ছাত্ররা এমন স্লোগান দেয়। আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদ থেকেই এই স্লোগানের জন্ম। এই পরিস্থিতিতে স্লোগানটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।উৎসব-অনুষ্ঠানের অতিরিক্ত ব্যয়
কলেজের বিবিধ খাতের টাকা থেকে উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিধান থাকলেও নিরাপত্তা খাত থেকে টাকা নিয়ে উৎসবে খরচ করা হয়েছে। কলেজের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্যয় করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৮ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২০ হাজার ৩০৪ টাকা। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ব্যয় কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা।
২০২৪ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা। তার আগের দুই বছর ২০২৩ সালে হয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০৬ টাকা। ২০২২ সালে হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮১১ টাকা।
বিগত কয়েক বছরে সরকারি দিবস কিংবা উৎসবে অস্বাভাবিক এমন খরচের পেছনে দুর্নীতিই মূল কারণ বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন। কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কিংবা শহীদ দিবস দিবসগুলো সরকারি ছুটি হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তেমন থাকত না। রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীসহ সব মিলিয়ে গড়ে উপস্থিতি থাকত দুই শতাধিক। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য খরচ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তাঁরা।
শতবর্ষ পুরোনো এই কলেজে বিভিন্ন বিভাগে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ফি বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে