অর্থনীতিতে কি মন্দা ঘনিয়ে আসছে
Published: 15th, October 2025 GMT
প্রশ্নটি আমার নয়। তবে বোধ হয় অনেকেরই। সাম্প্রতিক আর্থিক খাতের এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে স্বয়ং অর্থ উপদেষ্টা সরাসরি না হলেও অনেকটা ইঙ্গিতে এ ধরনের চ্যালেঞ্জের কথাই বললেন। বিদেশিরা, বিশেষ করে বিনিয়োগকারীরা বরং নির্বাচনকেন্দ্রিক কিংবা নির্বাচন–পরবর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনেক কথা বলছেন।
কেউ কেউ আবার ন্যূনতম আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বর্তমান সরকারের দুর্বলতা নিয়ে বেশ চিন্তিত। তাঁরা চিন্তিত এই নিয়ে যে নির্বাচন নিয়ে হাঙ্গামা আরও বেড়ে যাবে কি না। দু-একজন আবার হাঙ্গামা দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না, বিমানবন্দর কিংবা সমুদ্রবন্দরে কাজকর্ম ব্যাহত হবে কি না, এটি নিয়ে চিন্তিত। চিন্তিত এ ধরনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করবে কি না, এ নিয়ে।
আমদানি দায় নিষ্পত্তি করা যাবে কি না, এ নিয়ে। নির্বাচনকালীন বা পরবর্তী হাঙ্গামা গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে কি না। আমি অবশ্য তাঁদের বলেই যাচ্ছি, আমি এ ধরনের পরিস্থিতির আশঙ্কা করছি না। কারণ, তাঁরাও যেটা জানেন, আমরাও দেখছি আমাদের প্রবাসী আয় বাড়ছে, রপ্তানি বাড়ছে, বৈদেশিক দায় বাড়লেও বিদেশি সাহায্য বাড়ছে, সরকারের আয় তেমন না বাড়লেও সরকার ঘোষিতভাবে কৃচ্ছ্রতা বজায় রাখার কথা বলছে। আমদানিকে কমিয়ে, বাজার থেকে ডলার কিনে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
আরও পড়ুনবাংলাদেশে ‘মাফিয়া অর্থনীতি’ দমন কতটা সম্ভব হচ্ছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫তবে আশঙ্কা যেন থেকেই যাচ্ছে। আশঙ্কিত সবাই নৈরাশ্যবাদী কি না, আমি অবশ্য জানি না। বিশ্বব্যাংক, এডিবি নৈরাশ্যবাদী কি না, তা–ও আমি জানি না। তবে গত অর্থবছরের শুরুতে ছাত্র-তরুণ নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উচ্চ সুদের হার ও লাগামহীন মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে। সার্বিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক দশকের মধ্যে অন্যতম নিম্নস্তর। মূল্যস্ফীতিতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, সুদের হার বৃদ্ধি, ঋণসংকট, ব্যাংক খাতের অনিশ্চয়তা ও নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের অনীহা অর্থনীতির গতি শ্লথ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ প্রতিবেদনেও অনেকটা এ চিত্র উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধীরগতি শুধু প্রবৃদ্ধিকেই নয়, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্ভাবনাকেও গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।
বিশ্বব্যাংকের উল্লিখিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। এই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপকভাবে কমে যায়, যা নতুন শিল্প ও উৎপাদন প্রকল্পে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। উচ্চ সুদের হার, ব্যয়বহুল কাঁচামাল ও অনিশ্চিত মুদ্রানীতি ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি নিতে নিরুৎসাহ করেছে। ফলে বিনিয়োগ স্থবিরতা সার্বিক প্রবৃদ্ধিকে টেনে নামিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ বাস্তবায়ন, জরুরি তারল্য সহায়তা (ইএলএ) চালু এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। অভিজ্ঞদের মতে, এখন প্রয়োজন নীতিগত স্থিতিশীলতা ও বাস্তবসম্মত সংস্কার, যাতে বিনিয়োগ আস্থা ফিরিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়।তবে একই সময়ে রপ্তানি খাত কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিক ও কৃষিপণ্য খাতের সাফল্যে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রবাসী আয়ও ইতিহাসের অন্যতম উচ্চপর্যায়ে উঠে এসেছে ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে। বলা হচ্ছে, এই দুটি খাতের ইতিবাচক প্রভাবেই অর্থনীতি পুরোপুরি সংকটে না পড়ে স্থিতিশীল থাকার চেষ্টা করেছে।
কৃষি খাত বছরের শেষ ভাগে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও শিল্প ও নির্মাণ খাতে প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে ছিল। সেবা খাতেও মন্দাভাব বিরাজ করেছে, বিশেষ করে বাণিজ্য, পরিবহন ও আবাসন খাতে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। শ্রমবাজারে সংকট আরও প্রকট; ২০২৪ সালে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ছিল ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে নেমে দাঁড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশে। বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় মোট কর্মসংস্থান অনুপাত ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে বেকারত্বের হার বেড়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুনব্যাংক সংস্কার: রাজনৈতিক অর্থনীতির সম্মিলিত সিদ্ধান্ত কেন প্রয়োজন০৩ জানুয়ারি ২০২৫অন্যদিকে ব্যাংক খাতে অস্থিতিশীলতা অর্থনীতির দুর্বলতাকে আরও স্পষ্ট করেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হিসাব করলে মার্চ ২০২৫ নাগাদ ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ১ শতাংশে, যা দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের তিন গুণের বেশি। মূলধনঝুঁকি অনুপাত কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে এসেছে, যা ন্যূনতম নিয়ন্ত্রক মান ১০ শতাংশের নিচে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে এবং নতুন ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ জারি করেছে।
বহিঃখাতে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে আট বছর পর দেশটি প্রথমবারের মতো চলতি হিসাব উদ্বৃত্তে এসেছে ১৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আমদানি কার্যক্রমের মধ্যেও বৈপরীত্য বিদ্যমান। খাদ্য ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি বেড়েছে, কিন্তু যন্ত্রপাতি ও মূলধনি পণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও উৎপাদন সম্প্রসারণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আরও পড়ুনবেকারত্ব: প্রবহমান সমস্যাটির সমাধান কী০৬ জুন ২০২৫রাজস্ব খাতের অবস্থা বেশ করুণ। কর আদায় জিডিপির অনুপাতে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ৬ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ভর্তুকি ও সুদের ব্যয় বেড়ে বর্তমান ব্যয় জিডিপির ৯ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছেছে, আর উন্নয়ন ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে। ফলে বাজেট ঘাটতি বেড়ে হয়েছে জিডিপির ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার রাজস্ব সংস্কারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন কর নীতি ও প্রশাসনের পৃথক্করণ, কর অব্যাহতির ব্যবস্থাপনা সংস্কার এবং বাধ্যতামূলক অনলাইন রিটার্ন দাখিল। তবু সরকারি ঋণ জিডিপির অনুপাতে আরও ভারী হয়েছে, যার প্রায় ৩৭ শতাংশ এখন দেশীয় ব্যাংকব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ২০২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা প্রায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমবে এবং ভোগব্যয় বাড়লে চাহিদা পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা, সংস্কার বিলম্ব ও জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতি আগামী বছরেও বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারের পথে বড় বাধা হিসেবে থেকে যাবে।
আরও পড়ুনপুঁজিক্ষুধার্ত বাংলাদেশে কীভাবে বিনিয়োগ আসবে০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫তাঁদের মতে, রপ্তানি বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প আগামী বছরও প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হবে। তবে আমদানি স্বাভাবিক হলে চলতি হিসাব আবার ঘাটতিতে যেতে পারে। রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ধীরে ধীরে ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে, যদিও কৃষি ও জ্বালানি খাতে ব্যয় এখনো বেশি থাকবে। সরকারি ঋণও বাড়ছে—২০২৭ সালের মধ্যে তা জিডিপির ৪১ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ বাস্তবায়ন, জরুরি তারল্য সহায়তা (ইএলএ) চালু এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। অভিজ্ঞদের মতে, এখন প্রয়োজন নীতিগত স্থিতিশীলতা ও বাস্তবসম্মত সংস্কার, যাতে বিনিয়োগ আস্থা ফিরিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়।
বিশ্বব্যাংকের কর্তাব্যক্তিরা যেমন সুশাসন আর সরকারের দক্ষতার ওপর জোর দিয়েছেন, তেমনি প্রশাসনের সক্ষমতা, গুণগত ব্যয় ব্যবস্থাপনা আর মানবসম্পদের উন্নয়নের কথাও বলেছেন। আমাদের মতো তাঁদের অনেকেই তাকিয়ে আছেন নির্বাচনের পর নতুন সরকার কীভাবে দেশ চালায়, শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে আর ব্যক্তি খাতকে প্রণোদিত করে।
মামুন রশীদ অর্থনীতি বিশ্লেষক
মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক প রব দ ধ ব শ বব য ব শ ষ কর ৪ দশম ক সরক র র অন প ত দ র মত দ র বল অন শ চ আরও প আমদ ন আশঙ ক বছর র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলত নঅ’ স্লোগানটি কেন আবার প্রাসঙ্গিক
ফেনী কলেজের ফটক দিয়ে ঢুকতেই লম্বা মাঠ। মাঠের একদিকে অনার্স ভবনের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি কলেজটির শিক্ষার্থীদের ফি বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-অসন্তোষের বিষয়টি জানতেই কলেজে আসা। আড্ডারত শিক্ষার্থীদের কাছে ফি বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করলে একজন বললেন, ‘আমাদের কলেজের একটি স্লোগান নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। কিন্তু এখন এটাই আমাদের বাস্তবতা। দীর্ঘ দিনের লুটপাটের কারণে কলেজের ফান্ডের(তহবিল) অবস্থা খারাপ। তাই বাড়তি ফি চাপানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর।’
‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলতো নঅ’— জনপ্রিয় এই স্লোগানটি কথা শেষে যোগ করে কিছুক্ষণ হাসলেন মুহাইমিন তাজিম নামের ওই তরুণ। কলেজের গণিত বিভাগের এই শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কও। তাঁর কথার সঙ্গে একমত হলেন সেখানে বসে থাকা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কথা, ফেনী কলেজের নানা অনিয়ম দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্লোগানটি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ফেনী কলেজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁরা জানালেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা খাতে দুর্নীতির কারণে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি ফি এর বোঝা চেপেছে। লুটপাটের কারণে কলেজের তহবিল সংকট পূরণ করতে বর্তমান অধ্যক্ষ শিক্ষার্থী প্রতি নতুন করে ১০০ টাকা ফি বাড়িয়েছেন।
কলেজটিতে চলতি বছর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার্থীর শাখায় ছাত্রদের ২ হাজার ৬৮০ টাকা, ছাত্রীদের ২ হাজার ৫৬০ টাকা এবং বিজ্ঞান শাখার ছাত্রদের ২ হাজার ৭৮০ ও ছাত্রীদের ২ হাজার ৬৬০ টাকা হারে ফি দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছে। বিগত বছরের এই ফি ১০০ টাকা বেশি।
ফি বৃদ্ধির যে কারণ দেখাল কর্তৃপক্ষ
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ফি বৃদ্ধি করা হয়। সভায় ‘অত্যাবশ্যকীয় নিরাপত্তা ফান্ড’ ৬৫০ টাকা স্থলে ৭৫০ টাকা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, কলেজের কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেতন ও বোনাস মিলিয়ে কর্মচারীদের পেছনে বছরে ব্যয় হয় ৭১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এই খাতে নতুন আরও আটজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় বছর শেষে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৭৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ছাড়াও এই খাত থেকে টাকা ব্যয় করা হয় ভূমিসংক্রান্ত মামলার উকিলের ফি, কলেজ আঙিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়। গড়ে বছরে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু এই খাতে শিক্ষার্থীদের থেকে বছরে আদায় হচ্ছে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
ফেনী কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবু হেনা আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কলেজের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ফেনী কলেজ নিয়ে জনপ্রিয় হওয়া স্লোগানের একটা ইতিহাস আছে। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় স্থানান্তরিত হয়। সেখানকার স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সঙ্গে কলেজের অর্থ নিয়ে বিবাদ তৈরি হলে ছাত্ররা এমন স্লোগান দেয়। আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদ থেকেই এই স্লোগানের জন্ম। এই পরিস্থিতিতে স্লোগানটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।উৎসব-অনুষ্ঠানের অতিরিক্ত ব্যয়
কলেজের বিবিধ খাতের টাকা থেকে উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিধান থাকলেও নিরাপত্তা খাত থেকে টাকা নিয়ে উৎসবে খরচ করা হয়েছে। কলেজের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্যয় করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৮ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২০ হাজার ৩০৪ টাকা। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ব্যয় কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা।
২০২৪ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা। তার আগের দুই বছর ২০২৩ সালে হয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০৬ টাকা। ২০২২ সালে হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮১১ টাকা।
বিগত কয়েক বছরে সরকারি দিবস কিংবা উৎসবে অস্বাভাবিক এমন খরচের পেছনে দুর্নীতিই মূল কারণ বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন। কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কিংবা শহীদ দিবস দিবসগুলো সরকারি ছুটি হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তেমন থাকত না। রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীসহ সব মিলিয়ে গড়ে উপস্থিতি থাকত দুই শতাধিক। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য খরচ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তাঁরা।
শতবর্ষ পুরোনো এই কলেজে বিভিন্ন বিভাগে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ফি বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে