রাকসু নির্বাচন : ঘষা দিলেই উঠে যাচ্ছে, আমদানি করা কালির মান নিয়ে প্রশ্ন
Published: 16th, October 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট দেওয়ার পর আঙুলে দেওয়া কালি উঠে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভোটার। এ বিষয়ে প্রথম অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবন কেন্দ্রের ভোটাররা।
ওই কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর শিক্ষার্থী আবু আল হেলাল বলেন, ‘ঘষা দিলে কালি উঠে যাচ্ছে। পানি দিয়ে ঘষা দিলেই উঠে যাবে।’
ভোট দিয়ে বেরিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ পরান বলেন, ‘কালিটা উঠে যাচ্ছে। এটা পার্মানেন্ট হলে ভালো হতো। যদিও ভোট জালিয়াতির সুযোগ কম, তারপরও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার ছিল। সবচেয়ে ভালো কালি আনা দরকার ছিল। আমরা জেনেছি, কালিটি আমদানি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুনরাকসু নির্বাচন : চার কেন্দ্রে সকালে ভোটারদের উপস্থিতি কম৪৪ মিনিট আগেতবে নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য, বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভোট দিতে হচ্ছে। তাই জালিয়াতির সুযোগ নেই।
একই কেন্দ্রে ভোট দেন ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফজলে রাব্বি মো.
শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবনের শহীদ জিয়াউর হলের কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা ভেরিফাই (যাচাই) করব। কালি উঠে যায় কি না, চেক করা হয়নি। এটা আমাদের দায়িত্ব না।’
এ বিষয়ে জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি তা ধরেননি। তবে শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবন পরিদর্শনে গিয়ে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কয়েকটি লেভেলে চেক করা হচ্ছে। কালি হচ্ছে শেষ ধাপ। বিষয়টি তিনি নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন।
আরও পড়ুনরাকসু নির্বাচন : কেন্দ্রে যাচ্ছে ব্যালট বাক্স-পেপার, ভোট শুরু সকাল ৯টায়২ ঘণ্টা আগেএর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে সিনেট ভবনে নির্বাচন কমিশন সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে অমোচনীয় কালির প্রসঙ্গ ওঠে। নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ তখন জানান, তাঁরা শুধু অমোচনীয় কালির ওপর নির্ভর করছেন না। তাঁরা থ্রিডি লেভেলের (ত্রিমাত্রিক পর্যায়) নিরাপত্তাব্যবস্থা রেখেছেন। যে শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র নিয়ে আসবেন, প্রথমে সেটির অথেনটিসিটি (সত্যতা) যাচাই করা হবে। প্রতি ভোটারের জন্য একটি ইউনিক আইডি দেওয়া হয়েছে, সেটিও যাচাই করা হবে। এরপর তাঁর ছবিযুক্ত ভোটার আইডি আছে। সেটি তাঁরা মিলিয়ে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করবেন। এ বিষয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ তৈরি হলে একটি বিশেষ গোপনীয় কিউআর কোডও আছে।
অমোচনীয় কালির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, ‘আমরা আপনাদের এটুকু বলি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের মেজার নিয়েছে। আমরা অতি উন্নত মানের যে পার্মানেন্ট ইংক (অমোচনীয় কালি) যেটি আছে, সেটি আমরা আমদানি করেছি রাবি নির্বাচনকে সফল করার জন্য, যেন কোনো ধরনের প্রশ্ন না উঠতে পারে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনাথ আশ্রমে একটি বেদনা বেলা
আমার মেয়ে শুমশুমাকে নিয়ে প্রথমবারের মতো এতিমখানায় গেলাম। জীবন কত অসহায়ত্বে ভরপুর হতে পারে- তাই দেখানোর ইচ্ছা ছিল আমার। আমি মনে মনে সব সময়ই ভাবি আমার শুমশুম একদিন শিশুদের জন্য অত্যন্ত দরদী হয়ে উঠবে। বাবা নেই, মা নেই এমন ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে একটা বেলা কাটানো ছিল আমার জন্য এক অচেনা অজানা পরানপুরা অভিজ্ঞতা যেন।
বারে বারেই মনে হচ্ছিলো আলহামদুলিল্লা স্রষ্টা আমাদের ওপর কত বড় রহমত প্রদানকারী, এদের মতন এমন নিঃসঙ্গ একা একা বেড়ে ওঠার জীবন উনি আমাদের দেননি।
আরো পড়ুন:
সন্তান পরীক্ষায় ফেল করেছে, বাবা-মায়ের করণীয়
ত্বক সতেজ রাখতে এই ফল খেতে পারেন
দেশে এলে প্রতিবারই আমার পরলোকগত পিতা ও মরহুম শ্বশুর-শ্বাশুড়ির জন্য কিছু মিলাদের আয়োজন করি।এবারও তাই, তবে এবার একটু অন্য রকম ছিল। প্রতিবারের মতন মিলাদের পর খাবারের প্যাকেট বিতরণ করে চলে আসিনি। আমরা কিছু দুঃখী শিশুর পাশে গিয়ে বসতে চেয়েছিলাম কিছুটা সময়। কিছুটা সময় ওদের সাথে থাকার চেষ্টাতে ওদের হয়তোবা তেমন কোন লাভ হয়নি কিন্তু আমার মনে হয়েছিলো, আহারে মানব জীবন।
সেদিন বৃষ্টি ছিল খুব। তারপরও আমরা অদম্য। ৩ অক্টোবর, ২০২৫ মুষল ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিলো, আমরা হাজির হলাম ছোটোখাটো এই এতিম আশ্রমে। বলেছিলো ১৬০ জন এতিম আছে কিন্তু ছিল আরো কম, শুক্রবার বলে অনেকে অনুপস্থিত, তারা গিয়েছে তাদের আত্মীয়দের কাছে। আমাদের আয়োজন ছিল ১৬০ জনেরই। আসরের নামাজের পর ফিরে আসবে ওদের অনেকেই, তারাও তখন খাওয়া পেয়ে যাবে বলে জানালো।
রান্না হয়েছে এতিমখানার মাঠে, মিলাদ হয়েছে মসজিদে, দোআ হলো এতিমদের ঘরে বসে, সকালেই কোরআন খতম করে রাখা হয়েছিল। তারপর ভোজন পর্ব।
মুরগি, ভাত, সবজি, ডাল, ডিম সিদ্ধ, কোক, আমিত্তি— এই ছিল মেনু।রাসেল, শাহাদাত, আনিসসহ আরও কয়েকজন শিশু এসে আমাদের সবার সাথে হাত মেলালো। আমার সামর্থ নেই প্রতিটি হাত ভরে দেওয়ার। কিন্তু বিশ্বাস করি এমন একটা দিন এই পৃথিবীতে আসবে যেদিন সবাই এগিয়ে আসবে, হাত ধরে টেনে তুলতে এই মানব শিশুদের।পরের মুহূর্তেই মনে হলো, তাই কী হয়?
জীবনে আসলেই সেরকম কিছু হয় না, হবে না। জীবনের বাস্তবতা ভিন্ন। সবার ক্ষেত্রে সমান্তরাল কোনো পরিবর্তন আসে না। কারো কারো জন্য হয়তোবা আসবে। আহা স্রষ্টা কেন আমাকে ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ বা জেফ বেজোস কিংবা বিড়লা টাটাদের মত বড়োলোক করলেন না, এই ভেবে সত্যিই আমার এই প্রথম মনে বড় কষ্ট হলো।
ওরা যে খুব উঁকিঝুঁকি মেরে আমাদের দেখছিলো তাও কিন্তু না, বরঞ্চ আমি-ই দেখছিলাম। ঘরের চারদিকে মাটিতে রাখা টিনের ট্রাঙ্ক বা সুটকেস, তার ভেতরে কি আছে- জানার বড় ইচ্ছে হতে থাকলো আমার। এক শিশুকে তা জিজ্ঞেস করতেই সে জানতে চাইলো, আমি ওখান থেকে কি কি নিয়ে যেতে চাই ! ওরা কেবল হারাতে শিখেছে তাই হয়তোবা আমাকে অমন বললো।
এক দেয়ালে এক বাচ্চা কাপড় শুকাতে দিচ্ছিলো, জানতে চাইলাম কে ধুয়ে দিলো? বললো, আর কে? আমি। ওরাই ওদের সবটুকু। এখন থেকেই স্বাবলম্বী। আমার মেয়ে যেহেতু অন্য দেশে বড় হয়ে ওঠা একজন মানুষ, সে আমাদের দেশীয় দারিদ্রতায দেখে অতি মর্মাহত। আমি এই জীবনে গরিব ফকির মানুষ প্রচুর দেখেছি, তাই আমার কষ্টের ভার অনেক কম। অরফানেজ বিশ্বময় থাকবে এটা সে বুঝে, মানেও, কিন্তু এতো নিম্মমানের জীবনযাপনের চিত্র আমার শুমকে ব্যথিত করেছে। অমানবিক এক জীবন তারা যাপন করছে।
আমাদের আগে খাওয়ার জন্য ডাকা হলো, খাদেমদের জানালাম আমরা খাওয়া তদারক করবো, বাচ্চাদের খাওয়া শেষ হলে তারপরে খেতে বসবো। আমরা ওদের খাওয়া তদারকিতে বেশ অবাক হয়ে দেখলাম ওরা সবজি খেতে চায়না। ডালও না। অনেকে দেখলাম ভাতের ভেতর মুরগির মাংস লুকিয়ে রাখলো বা ভাত দিয়ে লেগ পিসগুলো ঢেকে রাখলো। জানতে চাইলাম এটা কেন, উত্তরে কেবল হাসলো। সম্ভবত এটাই খেলা তাদের। নিজেদের খেয়ালের কোনো এক প্রকাশ এটি।
একজন কোক নিয়ে ঝাঁকি দিতে থাকলো, আমার মেয়ে বললো, মা ওরা যদি এখন ঢাকনা খুলে তাহলে ছিটকে সব বের হবে। আমি নিষেধ করলাম এটি করতে, ৭/৮ বছরের ছেলেটি দ্রুত তা করা থেকে বিরত থাকলো। কিন্তু একটু পরেই আমার মেয়ে বললো, তুমি পেছন ফিরতেই সে আবার বোতল ঝাঁকিয়েছে, খুলেছে, তারপর ফেনা ফেনা হয়ে যে কোক বেরিয়েছে তাই আনন্দ করে সারা মুখে মেখে খেয়েছে। বলে আমার মেয়ে চোখ বড় বড় করে ওই ছেলের জন্য ‘হোয়াট এ ফানি বয় হি ইজ ’ জাতীয় ভঙ্গি করে হাসলো। আমার ইচ্ছে হলো ঘাড় ফিরিয়ে বলি, আচ্ছা পাজি ছেলে তো তুই !
আমরা বাচ্চাদের খাওয়া শেষে ওদের ঘরে খেতে বসলাম। আমার সাথে আমার আম্মা আছেন। বোন, বোনের বর ও ওদের ছেলে আছে, আমার বর এবং ভাসুরও আছেন। আমরা এতিমখানার প্লেটে খেতে বসলাম। আমরা পেপার প্লেট সাথে এনেছিলাম। কিন্তু দেখলাম ওখানকার প্লেট বা ‘বর্তন’ বা বাসন-কোসন আশাতীত ভাবেই ভালো। কেন যে আমার মনে হচ্ছিলো টিনের প্লেট থাকবে তা জানি না কিন্তু দেখলাম বেশ সুন্দর খান্দানি কাঁচের প্লেট দেওয়া হয়েছে আমাদের। আমার বোন বললো, অনেকে জিনিস পত্র দান করে। মাথার উপর ফ্যান চলছে পুরাদমে, ওটাও নাকি কার দান করা। কিন্তু কোনো খাট নেই। মেঝেতে পাটি বা গদি বিছিয়ে তারা ঘুমায় একসাথে, দলবেঁধে, জড়াজড়ি করে।
ভেবেছিলাম গরমে মরে যাবো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেরকম কিছু হলো না।
(চলবে)
ঢাকা/লিপি