দেশে নারীবান্ধব বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় এখনো কিছু কাঠামোগত ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেছেন, এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নারীদের জন্য পেশাগত প্রস্তুতি, কার্যকর দিকনির্দেশনা ও নীতিগত সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন।

থাইল্যান্ডে এশিয়ার নারী বিচারকদের আঞ্চলিক সম্মেলনে বৃহস্পতিবার বিচার বিভাগের নেতৃত্বে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার বিষয় তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) আয়োজিত এক কনফারেন্সে অংশ নিতে প্রধান বিচারপতি বর্তমানে ব্যাংককে আছেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের পটভূমি উল্লেখ করে আঞ্চলিক সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের জেলা আদালতগুলোয় ৬২৫ জন নারী বিচারক কর্মরত থাকলেও উচ্চ আদালতে তাঁদের সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে ১১৭ জন বিচারকের মধ্যে মাত্র ১২ জন নারী বিচারক রয়েছেন। এখনো বাংলাদেশে কোনো নারী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হননি। বাংলাদেশে আইন পেশায় নারীর সংখ্যা ১২ শতাংশের কম, যা পেশাগত অগ্রগতিতে নারীর সীমিত অংশগ্রহণের ইঙ্গিত বহন করে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে ২৫ জন। এর মধ্যে মাত্র ৩ জন নারী বিচারক। এটা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে নারীবান্ধব বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় এখনো কিছু কাঠামোগত ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তিনি নারীদের জন্য পেশাগত প্রস্তুতি, কার্যকর দিকনির্দেশনা ও নীতিগত সহায়তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর দিতে বলেন।

আঞ্চলিক সম্মেলনে বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগে নারীর অংশগ্রহণ কেবল প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন নয়, বরং এটি ন্যায়বিচারের গুণগত উৎকর্ষ ও জন-আস্থার বিশেষ প্রতীক। নারী বিচারকেরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও পারিবারিক বিরোধের মতো সংবেদনশীল মামলায় মানবিক অন্তর্দৃষ্টি ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচারপ্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করে থাকেন।

নারী বিচারকেরা ক্ষমতার ভারসাম্য ও মর্যাদার সূক্ষ্ম দিকগুলো অনুধাবন করতে বেশি সক্ষম, যা বিচারব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, বিচার কর্ম বিভাগে সত্যিকারের সমতা শুধু নিয়োগের মাধ্যমে আসে না বরং এটি একটি রূপান্তরের প্রক্রিয়া। এ লক্ষ্যে স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া, নারীবান্ধব পেশাগত পরিবেশ, মেন্টরশিপ নেটওয়ার্কের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এশিয়ার বিচার বিভাগগুলোয় সমৃদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

বিচার বিভাগে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত হলে আইনি চিন্তাভাবনা আরও গভীর ও মানবিক হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, বিচার বিভাগে নারী নেতৃত্ব আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে পারিবারিক, শ্রম, সম্পত্তি ও পরিবেশসংক্রান্ত মামলায় অধিক ন্যায়সংগত ফলাফল নিশ্চিত করতে সক্ষম।

ব্যাংকক সফর শেষে প্রধান বিচারপতি ১৮ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো.

শফিকুল ইসলাম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব চ রক র প শ গত

এছাড়াও পড়ুন:

সৌম্য, মাহিদুল কেন দলে

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ধবলধোলাইয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠের ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডে যে পরিবর্তন আসবে, তা অনুমান করা যাচ্ছিল আগে থেকেই। প্রত্যাশিতভাবেই দুটি পরিবর্তন এনে আজ ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন নির্বাচকেরা।

গত ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর আবার ওয়ানডে দলে ফেরানো হয়েছে সৌম্য সরকারকে। দলে নতুন মুখ প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে সুযোগ পাওয়া মাহিদুল ইসলাম। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়েছে মাহিদুলের, জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত তিনি খেলেছেন ওই একটি ম্যাচই। সৌম্য ও মাহিদুলকে জায়গা দিতে ছিটকে গেছেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও পেসার নাহিদ রানা।

একবার দলে আসা, আবার দল থেকে বাদ পড়াটা সৌম্যের জন্য এখন নিয়মিতই হয়ে গেছে। তাঁদে দলে ফেরানোর ব্যাখ্যায় বিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ বলেছেন, ‘তিনি অনেক অভিজ্ঞ একজন খেলোয়াড়। প্রায় ৮০টির (৭৬টি) মতো ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন, প্রায় ১০ বছর ধরে খেলছেন। গত বছরের নভেম্বরের দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই তাঁর ব্যাটিংয়ে যথেষ্ট সফলতা ছিল। সেই দলটার সঙ্গেই আমরা আবার খেলছি। লিটন দাস যেহেতু দলে নেই, একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবে আমরা সৌম্য সরকারকে নিয়েছি।’

গত বছর একটি টেস্ট খেলা মাহিদুল এর আগে টি–টোয়েন্টি দলেও সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু ম্যাচ খেলা হয়নি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৯৬ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরি ও ২৮ ফিফটিতে ৩৪২৯ রান তাঁর। গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের হয়ে প্রায় ৪৮ গড়ে রান করেছিলেন ৪৩১। গত মে মাসে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিজের সর্বশেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরিও করেছিলেন মাহিদুল।

তাঁকে দলে নেওয়ার ব্যাখ্যায় প্রধান নির্বাচক বলেছেন, ‘দলের মিডল অর্ডারের প্রায় সবাই রানখরায় আছে। তো সেই জায়গায় আমরা মাহিদুলকে এনেছি। পরের বিশ্বকাপের জন্য কলেবর বৃদ্ধি করতে যাঁরা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেন, তার মধ্য থেকে মাহিদুল ইসলামের নামটা নিশ্চয়ই অনেক উজ্জ্বল।’

আরও পড়ুনওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দল ঘোষণা, প্রথমবার ডাক পেলেন মাহিদুল৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ