কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সমাজসেবা কর্মকর্তা ও এতিমখানার সুপারকে আসামি করে দুদকের মামলা
Published: 16th, October 2025 GMT
মাদারীপুরে একটি এতিমখানার অন্তত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সমাজসেবা কর্মকর্তা ও এতিমখানার সুপারকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার আসামিরা হলেন মাদারীপুরের সাবেক শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা শ্যামল পাণ্ডে ও হজরত শাহ মাদার (র.
এর আগে গত ১৫ জুলাই মাদারীপুর পৌর এলাকার দরগাহ শরিফ–সংলগ্ন এলাকায় হজরত শাহ মাদার (র.) দরগাহ শরিফ এতিমখানায় অভিযান চালায় দুদক। এ সময় দুদকের সদস্যরা এতিমখানার মোহতামিম মোহাম্মদ আল-আমিনসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। অভিযানে এতিমদের জন্য প্রাপ্ত সরকারি বরাদ্দ, ছাত্রসংখ্যা এবং আর্থিক লেনদেনের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হলে সেখানে ব্যাপক অনিয়ম লক্ষ করা যায়।
দুদকের সূত্র জানায়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে সরকারি হিসাবে ১৪৫ জন এতিম শিশুর জন্য মাসে ২ হাজার টাকা হারে প্রায় ২ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে এতিমখানায় মাত্র ৪০ জন শিক্ষার্থী আছে। এ ছাড়া এতিমখানার সুপার আল-আমিনের বিরুদ্ধে ৪৭ লাখ টাকার এফডিআর (স্থায়ী আমানত) জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে উত্তোলন করার অভিযোগ আছে।
মামলায় দুদক উল্লেখ করে, সমাজসেবা কর্মকর্তা ও এতিমখানার সুপার দুজনে পরস্পর যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তাঁরা উভয়ই এতিমখানায় প্রকৃত এতিমের সংখ্যা গোপন করেছেন। ৪ বছরে অতিরিক্ত ক্যাপিটেশনগ্র্যান্ট–ভুক্ত দুস্থ ও এতিম নিবাসী দেখিয়ে ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এতিমদের কল্যাণে ব্যবহৃত ইসলামী ব্যাংক, মাদারীপুর শাখার এমএমপিডিআর (মুদারাবা মান্থলি প্রফিট ডিপোজিট স্কিম) ৪৭ লাখ টাকা, অনুদানকৃত ১০ লাখ ৯৯ হাজার ৯১৭ টাকাসহ মোট ১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৯১৭ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মামলা রেকর্ডকারী কর্মকর্তা ও দুদকের উপসহকারী পরিচালক শ্যামল চন্দ্র সেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০–এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার প্রমাণ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তাঁদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।’
দুদকের মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের অভিযানের পর কমিশন থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে আজ মামলা করা হয়। এখন পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হলেই আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গণপূর্তের কর্মকর্তা সরকারি বাসার দরজা-জানালা ‘খুলে নিয়ে গেছেন’
পাবনায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক উপসহকারী প্রকৌশলী বদলির সময় সরকারি বাসার দরজা-জানালা খুলে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বাসাটি পরিত্যক্ত স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। ঘটনাটি জানাজানি হলে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার নাম ইব্রাহিম বিশ্বাস। তিনি ছয় মাস আগে পাবনা থেকে বদলি হয়েছেন। বর্তমানে রাঙামাটিতে কর্মরত।
স্থানীয় লোকজন ও গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসাটি একতলা হওয়ায় বেশ কিছু দিন সেখানে কেউ থাকতেন না। এতে ভবনটি কিছুটা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল। উপসহকারী প্রকৌশলী ইব্রাহিম বিশ্বাস পাবনায় দায়িত্ব পালনকালে বাসাটিতে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন। কিছু মেরামত ও রঙের কাজ করে তিনি সেখানে থাকতেন। ছয় মাস আগে রাঙামাটিতে তাঁর বদলি হয়। এ সময় তিনি বাসাটি ছেড়ে রাঙামাটিতে চলে যান। যাওয়ার সময় তিনি সরকারি বাসার কিছু আসবাবপত্র ও দরজা-জানালা খুলে নিয়ে যান।
ইব্রাহিম বিশ্বাসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ওটা একটা পরিত্যক্ত বাসা ছিল। তাই দরজা-জানালা খুলে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে আবার লাগানো হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, একতলা ভবনটির অবস্থা অনেকটা কঙ্কালের মতো। অবকাঠামো আছে, দরজা-জানালা কিছু নেই। ভবনের ভেতরটা পুরো ফাঁকা।
গণপূর্ত বিভাগের কয়েকজন কর্মচারীর দাবি, ভবনটিতে ওঠার সময় ইব্রাহিম বিশ্বাস কিছু মেরামতের কাজ করেছিলেন। খরচের টাকা না পাওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। পরে বদলির সময় দরজা-জানালা খুলে নিয়ে যান। এতে পুরো ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।
প্রায় ছয় মাস পর বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় শহরের ইছামতী নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি ও শিক্ষক মাহবুবুল আলম বলেন, জানামতে সরকারি সম্পদে খরচ করা যায়। কিন্তু নিয়ে যাওয়ার কোনো বিধান নেই। ওই কর্মকর্তা যে কাজ করেছেন, সেটি একটি অপরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, সরকারি সম্পদ জনগণের সম্পদ। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন দায়িত্বহীন আচরণ মেনে নেওয়ার মতো নয়। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার।
এ প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগ পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ কবির বলেন, কোয়ার্টারটি পরিত্যক্ত ছিল। ইব্রাহিম বিশ্বাস যেসব জিনিস নিয়ে গেছেন, সেগুলো দ্রুতই আবার প্রতিস্থাপন করা হবে।