রাফা ক্রসিং আবার খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা এটা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ত্রাণ পরিবহনে ক্রসিংটি ব্যবহার করা যাবে না।

তবে মিসর সীমান্তবর্তী এ ক্রসিং কবে খুলে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি ইসরায়েল। অন্যদিকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ইসরায়েল ও হামাস।

হামাসের হাতে এখনো ইসরায়েলের কয়েকজন জিম্মির মরদেহ রয়ে গেছে। এটা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়ছে।

তা ছাড়া হামাস ও গাজার অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র সমর্পণ এবং গাজার নতুন সরকার কাদের নিয়ে গঠিত হবে, তা নিয়েও মতবিরোধ রয়ে গেছে। এসব টানাপোড়েন ও মতবিরোধ নিয়ে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোসিয়ান আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি এবং চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলছি। হামাসের হাতে এখনো ১৯ জিম্মির মরদেহ রয়েছে। দেরি না করে সেগুলো হস্তান্তর করতে হবে।’

গত সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত হামাস ইসরায়েলের কাছে ১০ জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে। ইসরায়েলের দাবি, হস্তান্তর করা মরদেহগুলোর মধ্যে একটি জিম্মির নয়। তবে হামাস বলেছে, এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সব জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা বলেছে, অন্য জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর করার জন্য ভারী যন্ত্রপাতি দরকার। কারণ, সেগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। মরদেহগুলো উদ্ধারের জন্য খননের সরঞ্জাম দরকার।

আজ হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা দাবি করেন, গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল গাজায় অন্তত ২৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিমূলক কর্মকাণ্ডের একটি তালিকা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

হামাসের এই নেতা বলেন, দখলদার রাষ্ট্র (ইসরায়েল) মাঠপর্যায়ে চুক্তি লঙ্ঘনের মাধ্যমে তা দুর্বল করে দেওয়ার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।

হামাসের এই অভিযোগ নিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগে তারা জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতির আলোকে ইসরায়েলের সেনারা যেখানে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে না যেতে সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল। কিছু ফিলিস্তিনি তা উপেক্ষা করেছেন। তাই ইসরায়েলের সেনারা ‘হুমকি মোকাবিলায় গুলি চালিয়েছেন’।

ইসরায়েল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। কিন্তু হামাস এখন পর্যন্ত এ শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

যেসব স্থান থেকে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করেছে, শহরের সেসব স্থানে নিরাপত্তা জোরদারের নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে হামাস। ক্ষমতা সংহত করতে তারা বিরোধীদের হত্যা করছে এবং বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছে।

সোমবার ইসরায়েলের জীবিত সর্বশেষ ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল।

গাজার বিধ্বস্ত এলাকার একটি দৃশ্য। গাজা নগরীতে, ১৬ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম ম র মরদ হ ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

কালীগঞ্জে এইচএসসি ফলাফলে পাসের চেয়ে ফেল বেশি

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল যেন শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

উপজেলার সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫৫৪ জন, আর অকৃতকার্য হয়েছে ৬৭৪ জন। অর্থাৎ পাসের চেয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি!

আরো পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই কলেজে ৩ শিক্ষার্থী, শতভাগ ফেল

এইচএসসিতে শতভাগ জিপিএ-৫ পেল মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ

এই পরিসংখ্যান কালীগঞ্জের শিক্ষাঙ্গনে এক ধরনের হতাশার জন্ম দিয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মতে, ফলাফলের এ চিত্র শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ, পাঠদানের মানহীনতা এবং শিক্ষা প্রশাসনের দুর্বল তদারকির স্পষ্ট প্রতিফলন।

তবে হতাশার মাঝেও সামান্য আশার আলো জ্বেলেছে কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থী। মোট ১৯ জন পরীক্ষার্থী কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ–৫ অর্জন করেছে।

কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৭৫ ও ফেল ১৭০, মানবিকে পাস ৯০ ও ফেল ২১৯, বিজ্ঞানে পাস ৫৬ জন। এ কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ শিক্ষার্থী। মোট পাস ২২১ ও অকৃতকার্য ৪৩৬ জন।

জামালপুর কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৭ জন ও ফেল ১৯ জন, মানবিকে পাস ২৩ জন ও ফেল ৫৮ জন, বিজ্ঞানে পাস ৪ জন ও ফেল ৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন শিক্ষার্থী। মোট পাস ৩৪ ও অকৃতকার্য ৮২ জন।

আজমতপুর আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৮ জন ও ফেল ৬ জন, মানবিকে পাস ১৬ জন ও ফেল ৩৩ জন । জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। মোট পাস ২৪ জন ও অকৃতকার্য ৩৯ জন।

কালীগঞ্জ মহিলা কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ১২ জন ও ফেল ১ জন, মানবিকে পাস ৩০ জন ও ফেল ২৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। মোট পাস ৪২ জন ও অকৃতকার্য ২৭ জন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন ঢালী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৫ জন ও ফেল ৬ জন, মানবিকে পাস ১ জন ও ফেল ১৪ জন। মোট পাস ৬ জন ও অকৃতকার্য ২০ জন।

সেন্ট মেরিস গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৭৮ জন ও ফেল ১৩ জন, মানবিকে পাস ৬৫ জন ও ফেল ২৩ জন, বিজ্ঞানে পাস ৪৭ জন ও ফেল ৯ জন । এখানে জিপিএ–৫ পেয়েছে ১৪ জন শিক্ষার্থী। মোট পাস ১৯০ জন ও অকৃতকার্য ৪৫ জন।

সেন্ট নিকোলাস স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৩৩ জন ও ফেল ১৯ জন, মানবিকে পাস ৪ জন ও ফেল ৬ জন। মোট পাস ৩৭ জন ও অকৃতকার্য ২৫ জন।

সব হতাশার মধ্যেও জিপিএ–৫ পাওয়া ১৯ জন শিক্ষার্থী দেখিয়েছে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সাফল্য অসম্ভব নয়। তবে এই ক্ষীণ সাফল্য কালীগঞ্জের সামগ্রিক শিক্ষা সংকট ঢাকতে পারছে না।

শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি, মানসম্মত ক্লাসের অভাব, পর্যাপ্ত একাডেমিক পরিবেশের সংকট এবং প্রশাসনিক তদারকির দুর্বলতা—এসবই এ ফলাফলের পেছনে প্রধান কারণ।

ঢাকা/রফিক/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ