রকিব ভাইয়ের একটা মোটর বাইক আছে।
বাইক না ফড়িং। ফিফটি সিসি হোন্ডা।
কলকব্জা গেছে সেই ফড়িং বাহনের।
সারাই কারখানায় জমা দিতে হয়েছে।
রকিব ভাই ‘রহস্য পত্রিকা’ অফিসে আনাযানা করেন রিকশায়। সম্ভবত খিলগাঁও এলাকায় থাকেন। ‘রহস্যপত্রিকা’ অফিস সেগুনবাগিচায়। ‘রহস্য পত্রিকা’র সম্পাদক কাজীদা, মাসুদ সিরিজের স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন। সহকারী সম্পাদক তিনজন। শেখ আবদুল হাকিম, রকিব হাসান ও নিয়াজ মোরশেদ। শিল্প নির্দেশক একজন। আমি। নিয়াজ ভাইয়ের মাধ্যমে আমি ‘রহস্য পত্রিকা’র সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
রকিব ভাই ও তার ফড়িংবাহনের কথায় ফিরি। ‘রহস্য পত্রিকা’ অফিস বসে সন্ধ্যায়। সহকারী সম্পাদকের দিন ভাগ করা আছে। সেদিন নিয়াজ ভাই ও রকিব ভাই ছিলেন। কাজ শেষ। রকিব ভাই বললেন, ‘ধ্রুব কি এলিফ্যান্ট রোডে থাকেন না?’
‘হ্যাঁ।’
‘অফিস থেকে তো বাসাতেই ফিরবেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘তাইলে লন, একলগে যাই। আমার কাজ আছে এলিফ্যান্ট রোডে।’
লন। যাই।
জার্নি বাই রিকশা। উইথ রকিব ভাই।
মৎস্য ভবন পর্যন্ত গিয়ে জ্যামে আটকালাম। যানবাহনের, মানুষের জঘন্য ক্যাওস। সড়কদ্বীপের গাছেরা দেখছে। কয়েকজন গাছ। আমি চিনি না। তারা লম্বা, তারা সবুজ। রকিব ভাই বললেন, এরা পদাউক। বিদেশী গাছ। রকিব ভাই তার আর কাজীদার অ্যাডভেঞ্চারের গল্প বলছেন। দেশে শিকার নিষিদ্ধ হয়েছে। আগে তারা প্রচুর শিকারে যেতেন। জঙ্গল বিল হাওরে যেতেন।
ভালো লেখক সবসময় ভালো কথক হন না। রকিব ভাই ভালো কথক। জ্যাম মাথা থেকে ডিলিট করে দিয়ে জঙ্গল আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিলেন। জঘন্য ক্যাওসের বদলে আমার মাথায় রাতের জঙ্গলের নানাবিধ আওয়াজ ঢুকে পড়ল। পাখির ডাক, ডানা ঝাপটানোর শব্দ, ঝিঁঝিঁর শব্দ, জন্তু জানোয়ারদের চলার নৈঃশব্দ্যের শব্দ। চল্লিশ-পয়তাল্লিশ মিনিটের ট্রিপ। রোমাঞ্চকর, ঘ্রাণ ও রূপময়। জঙ্গলের ঘ্রাণ, জঙ্গলের রূপ। জ্যাম জ্যামের নিয়মে কাটল। তাতে আমার কী? রকিব ভাই এলিফ্যান্ট রোড বাটার মোড়ের আগে নেমে গেলেন। আমি সেই জঙ্গলে থাকলাম।
আজ, এখন, এই লেখাটা যখন লিখছি, মনে হচ্ছে এসব গতকাল সন্ধ্যার ঘটনা।
সারাজীবন মনে হতে থাকবে সব গতকাল সন্ধ্যার ঘটনা।
আমার সারাজীবন আর কতদিন?
রকিব ভাই গেছেন, আমিও যাব।
‘জন্মিলে মরিতে হবে’- আমোঘ এই সত্য। অলংঘনীয় বিধান প্রকৃতির। মানুষের মেনে নেওয়া বা না নেওয়ার কোনও ব্যাপার এর মধ্যে নাই। তবুও জগতের মায়া, ধরা যায় না বলে এতো কষ্ট হয় হয়তো। কষ্ট হচ্ছে। গতকাল থেকে মগজ সম্পূর্ণ ব্লকেড হয়ে গেছে সেই সন্ধ্যায়। ‘কাউন্ট ড্রাকুলা’, ‘উড়ন্ত সসার’, ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের বিভিন্ন বইয়ের মলাট দেখছি সেই জঙ্গলে উড়ছে। রকিব ভাই এসব বই লিখেছেন। অনুবাদ করেছেন, রূপান্তর করেছেন।
আবুল কাসেম মোহাম্মদ আবদুর রাকিব। ডাক নাম হাসান। লেখক নাম রকিব হাসান। ১৯৫০ টু ২০২৫। আজকের পত্রিকায় দেখলাম, গতকাল এশার নামাজের পর শাহজাহানপুর কবরস্থানে জনপ্রিয় লেখক রকিব হাসানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রকিব ভাই!
১৬ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা/তারা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রক ব ভ ই সন ধ য গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অনুমোদনের পর আজ রোববার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। এখন সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ–সংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে এই সচিবালয়।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিচারকাজে নিয়োজিত বিচারকদের পদায়ন, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ও ছুটিবিষয়ক সব সিদ্ধান্ত ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় এই সচিবালয়ের হাতে থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সচিবালয়ের সচিব প্রশাসনিক প্রধান হবেন।
এর আগে ২০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
ওই দিন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছিলেন, শুধু বিচারকাজে নিয়োজিত যাঁরা আছেন, সেই বিচারকদের বিষয়গুলো সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের হাতে চলে যাবে। কিন্তু বিচার বিভাগের যাঁরা অন্য কোনো জায়গায় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন, যেমন নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, আইন কমিশনের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয় আইন মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকবে।
আরও পড়ুনঅধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট২০ নভেম্বর ২০২৫