সুনামগঞ্জে বালু লুট : আসামির তালিকায় আছে আন্দোলনকারীদেরও নাম
Published: 17th, October 2025 GMT
আলী হোসেনের (২৪) বাড়ি সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর তীরের লাউড়েরগড় গ্রামে। এই তরুণ পেশায় আলোকচিত্রী, থাকেন ঢাকায়। ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে এসেছিলেন বাড়িতে। এ সময় যাদুকাটা নদীতে বালু লুটের ঘটনা শুরু হলে সেটির ভিডিও ও ছবি নেন। এসব ছবি ও ভিডিও পাঠান গণমাধ্যমকর্মীদের। তাঁর তোলা বালু লুটের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। অথচ অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগে করা একটি মামলায় আসামির তালিকায় তাঁর নামও আছে।
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনায় গত দুই দিনে জেলার তাহিরপুর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর, অন্যটি করেছেন ইজারাদার। দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮৮ জনকে। অজ্ঞাত আসামি আছেন ৫০ জনের মতো। দুটি মামলাতেই ৬ থেকে ১১ অক্টোবর নদীর লাউড়েরগড় এলাকায় জড়ো হয়ে নদীর পাড় কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ করা হয়েছে। ইজারাদারের পক্ষে করা মামলার আসামির তালিকা নিয়ে বেশ সমালোচনা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় আসামির তালিকায় এই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীসহ আলোচিত বেশ কয়েকজনের নাম আছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার তাহিরপুর থানায় মামলাটি করেন। এই মামলায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় উপজেলার সোহালা গ্রামের বাসিন্দা তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফতাব উদ্দিন, তাঁর বড় ভাই উপজেলা বিএনপির যুক্ত আহ্বায়ক রাকাব উদ্দিন, উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বজিৎ সরকার, নদী তীরের বাসিন্দা মোশাহিদ আলম ওরফে রানু মেম্বারের নাম আছে। রানু মেম্বার একই অভিযোগে এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই মামলায় ৩৬ নম্বরে আছে আলোকচিত্রী আলী হোসেনের নাম।
আলী হোসেন বলেন, ‘আমি বালু লুটের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। সবাইকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলাম। মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাও নদী তীরে দাঁড়িয়ে আমার কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন, এখন দেখি আমিই আসামি। আমি বিস্মিত, হতবাক।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোহাইমিনুল হক অবশ্য বলেছেন, তাঁরা যাচাই-বাছাই করেই আসামির তালিকাটি করেছেন। যেহেতু একটি নাম নিয়ে কথা হচ্ছে, তাই সেটি সম্পর্কে আবারও খোঁজ নেবেন তাঁরা।
এর আগের দিন বুধবার একই অভিযোগে থানায় আরেকটি মামলা করেন মোশারফ হোসেন আরির তালুকদার নামের এক ব্যক্তি। তিনি যাদুকাটা-১ বালু মহালের ইজারাদার মো.
নদীর তীরের ঘাগটিয়া গ্রামের বাসিন্দা কাসমির রেজা দীর্ঘদিন থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। তিনি পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি। এবারও নদে বালু লুটের ঘটনা শুরু হলে তিনি প্রতিবাদ করেন। অথচ এই মামলায় তাঁর ভাই আস্তারুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এলাকার নারজেল, পারভেজ ও মাসুদ রানা নামের তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা পাড় কাটার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত ছিল বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
কাসমির রেজা বলেন, ‘কার যোগসাজশে, কারা বালু লুট করে এটা তো এলাকাবাসীর জানা। তাই মামলায় আসামি করে, হুমকি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।’
ইজারাদার নাছির মিয়া বলেছেন, তাঁরা স্থানীয় সাংবাদিক ও গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যসহ স্থানীয় নির্ভরযোগ্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যারাই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন তাঁদের মামলায় আসামি করেছেন। আন্দোলনকারী বা প্রতিবাদকারী কাউকে উদ্দেশ্য করে মামলা করা হয়নি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য এবং সুনামগঞ্জ নদী ও হাওর রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাজু আহমেদ বলেন, প্রশাসন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কঠোর না হলে শুধু মামলা করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা যাবে না। মামলায় কোনো নিরীহ, নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, মামলার তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। যারা দোষী নন তাঁরা বাদ যাবেন। দোষী অথচ এজাহারে নাম সেই তদন্তে এমন কাউকে পাওয়া গেলে তিনিও যুক্ত হবেন। তবে নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার হবেন না।
সুনামগঞ্জে তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর দুটি বালু মহাল এবার ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়েছে। তবে মামলা–সংক্রান্ত জটিলতায় গত পাঁচ মাস বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। চলতি মাস থেকে বালু উত্তোলন শুরু হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আস ম র ত ল ক স ন মগঞ জ ইজ র দ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ব্র্যান্ড কি ব্যর্থ, কী বললেন স্যামি
প্রশ্নটা বেশ মনোযোগ দিয়েই শুনলেন ড্যারেন স্যামি। তবু শুরুতে বললেন, ‘আপনার প্রশ্নটা বোঝার চেষ্টা করছি…।’
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে স্যামি যে প্রশ্নটা ‘বোঝার চেষ্টা’ করছিলেন, সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়ে। এটি আইসিসির একমাত্র পূর্ণ সদস্য, যা একক দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। ক্যারিবীয় অঞ্চলের বেশ কিছু দেশ নিয়ে গড়ে ওঠা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাঠে ও মাঠের বাইরের বিষয়ে যেভাবে পিছিয়ে পড়েছে, তাতে ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ধারণা’টা ব্যর্থ কি না—এমন প্রশ্নই ছিল স্যামির কাছে।
৪১ বছর বয়সী স্যামি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন এক দশক, অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। এখন একই দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে। এই সময়ে এসে ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের’ ধারণাটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর আবেগাপ্লুত স্যামি উত্তর দিলেন এভাবে—‘আমার মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধারণাটাই ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ব্র্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে এটারই (সাফল্যের) প্রতিনিধিত্ব করে। আমি আগেও বলেছি, যখন আমরা আধিপত্য দেখিয়েছি, সবাই চেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলুক। সব দলই একটা (ভালো ও খারাপ) সময়ের মধ্য দিয়ে যায়, আমরা এখন যাচ্ছি (খারাপটা)।’
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ১০টি দেশ ও ৫টি অঞ্চলের ক্রিকেটাররা একসঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নামে খেলেন। এখন দেশগুলোকে ভাগ করে দিয়ে আইসিসির সদস্য করার কথা উঠছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকে যাওয়া ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা নাকি ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ নামের প্রতি ‘টান’ অনুভব করেন না।
আরও পড়ুনছবির গল্পে লালবাগ কেল্লায় ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি উন্মোচন৫ ঘণ্টা আগেএই ওয়েস্ট ইন্ডিজই ওয়ানডে সংস্করণের প্রথম দুটি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, দুবার জিতেছে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। ’৭০ থেকে ’৯০ এর দশকে এই দলটি ছিল টেস্ট ও ওয়ানডের প্রতাপশালী দল।
আগামীকাল ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ সামনে রেখে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্যামির কথায় উঠে এল ক্যারিবীয় দলের ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ধারণাটা কখনো ব্যর্থ হবে না। আমি জানি, খেলাটাতে আমরা কত ইতিহাস গড়েছি। একটা সফল ব্র্যান্ড হতে গেলে কী লাগে তা আমি বুঝি। সেটাই এই প্রজন্ম, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ফেরানোর চেষ্টা করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ড্যারেন স্যামি ও অধিনায়ক শাই হোপ