আলী হোসেনের (২৪) বাড়ি সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর তীরের লাউড়েরগড় গ্রামে। এই তরুণ পেশায় আলোকচিত্রী, থাকেন ঢাকায়। ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে এসেছিলেন বাড়িতে। এ সময় যাদুকাটা নদীতে বালু লুটের ঘটনা শুরু হলে সেটির ভিডিও ও ছবি নেন। এসব ছবি ও ভিডিও পাঠান গণমাধ্যমকর্মীদের। তাঁর তোলা বালু লুটের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। অথচ অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগে করা একটি মামলায় আসামির তালিকায় তাঁর নামও আছে।

সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনায় গত দুই দিনে জেলার তাহিরপুর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর, অন্যটি করেছেন ইজারাদার। দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮৮ জনকে। অজ্ঞাত আসামি আছেন ৫০ জনের মতো। দুটি মামলাতেই ৬ থেকে ১১ অক্টোবর নদীর লাউড়েরগড় এলাকায় জড়ো হয়ে নদীর পাড় কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ করা হয়েছে। ইজারাদারের পক্ষে করা মামলার আসামির তালিকা নিয়ে বেশ সমালোচনা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় আসামির তালিকায় এই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীসহ আলোচিত বেশ কয়েকজনের নাম আছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার তাহিরপুর থানায় মামলাটি করেন। এই মামলায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় উপজেলার সোহালা গ্রামের বাসিন্দা তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফতাব উদ্দিন, তাঁর বড় ভাই উপজেলা বিএনপির যুক্ত আহ্বায়ক রাকাব উদ্দিন, উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বজিৎ সরকার, নদী তীরের বাসিন্দা মোশাহিদ আলম ওরফে রানু মেম্বারের নাম আছে। রানু মেম্বার একই অভিযোগে এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই মামলায় ৩৬ নম্বরে আছে আলোকচিত্রী আলী হোসেনের নাম।

আলী হোসেন বলেন, ‘আমি বালু লুটের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। সবাইকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলাম। মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাও নদী তীরে দাঁড়িয়ে আমার কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন, এখন দেখি আমিই আসামি। আমি বিস্মিত, হতবাক।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোহাইমিনুল হক অবশ্য বলেছেন, তাঁরা যাচাই-বাছাই করেই আসামির তালিকাটি করেছেন। যেহেতু একটি নাম নিয়ে কথা হচ্ছে, তাই সেটি সম্পর্কে আবারও খোঁজ নেবেন তাঁরা।

এর আগের দিন বুধবার একই অভিযোগে থানায় আরেকটি মামলা করেন মোশারফ হোসেন আরির তালুকদার নামের এক ব্যক্তি। তিনি যাদুকাটা-১ বালু মহালের ইজারাদার মো.

নাছির মিয়ার আত্মীয়। এই মামলায় ৫১ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন। এই মামলার ৩৮ আসামি বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই মামলায় বালু উত্তোলনবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের আসামি করা হয়েছে। আবার পাড় কাটায় যুক্ত অনেকের নাম আসেনি।

নদীর তীরের ঘাগটিয়া গ্রামের বাসিন্দা কাসমির রেজা দীর্ঘদিন থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। তিনি পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি। এবারও নদে বালু লুটের ঘটনা শুরু হলে তিনি প্রতিবাদ করেন। অথচ এই মামলায় তাঁর ভাই আস্তারুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এলাকার নারজেল, পারভেজ ও মাসুদ রানা নামের তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা পাড় কাটার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত ছিল বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

কাসমির রেজা বলেন, ‘কার যোগসাজশে, কারা বালু লুট করে এটা তো এলাকাবাসীর জানা। তাই মামলায় আসামি করে, হুমকি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।’

ইজারাদার নাছির মিয়া বলেছেন, তাঁরা স্থানীয় সাংবাদিক ও গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যসহ স্থানীয় নির্ভরযোগ্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যারাই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন তাঁদের মামলায় আসামি করেছেন। আন্দোলনকারী বা প্রতিবাদকারী কাউকে উদ্দেশ্য করে মামলা করা হয়নি।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য এবং সুনামগঞ্জ নদী ও হাওর রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাজু আহমেদ বলেন, প্রশাসন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কঠোর না হলে শুধু মামলা করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা যাবে না। মামলায় কোনো নিরীহ, নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সেটি খেয়াল রাখতে হবে।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, মামলার তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। যারা দোষী নন তাঁরা বাদ যাবেন। দোষী অথচ এজাহারে নাম সেই তদন্তে এমন কাউকে পাওয়া গেলে তিনিও যুক্ত হবেন। তবে নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার হবেন না।

সুনামগঞ্জে তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর দুটি বালু মহাল এবার ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়েছে। তবে মামলা–সংক্রান্ত জটিলতায় গত পাঁচ মাস বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। চলতি মাস থেকে বালু উত্তোলন শুরু হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আস ম র ত ল ক স ন মগঞ জ ইজ র দ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মেহেরপুরে ট্রাক্টরের চাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু

মেহেরপুরের গাংনীতে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে মো. শিহাব (৮) নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের মানিকদিয়া কবরস্থান পাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত শিহাব মানিকদিয়া কবরস্থান পাড়ার কৃষক ওসমান গনির ছেলে। সে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিহাবসহ তার কয়েকজন বন্ধু একটি প্রাচীরের ওপরে বসে গল্প করছিল। প্রাচীরের পাশের জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হচ্ছিল। শিহাব প্রাচীরের ওপর থেকে আকস্মিকভাবে পড়ে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বনি ইসরাইল দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা/ফারুক/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ