জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চারটি বাম রাজনৈতিক দল।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নিলেও এনসিপি ও বাম দলগুলোর কোনো প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

আরো পড়ুন:

‘কিছু দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে’ 

আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর করব না: নাহিদ 

অনুপস্থিত বাম চার দল হলো-বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) এবং বাংলাদেশ জাসদ।

বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর কিছু আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান।

এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন জানান, দলের পক্ষ থেকে আগে থেকেই না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল। গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে এনসিপির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা না থাকায় তারা এখনই সনদে স্বাক্ষর করছে না।

শুক্রবার রাজধানীর ইস্কাটনে এক অনুষ্ঠানে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “জাতীয় ঐকমত্যের নামে কিছু রাজনৈতিক দল জনগণকে প্রতারিত করছে।”

অন্যদিকে, বাম দলগুলোও সনদ সংশোধনের দাবি জানিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। গতকাল পুরানা পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা জানান, সংশোধিত খসড়া না পেলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না।

সিপিবি সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির বলেন, “আমরা আগেই আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি।”

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয়টি বড় ধরনের সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন, পুলিশ ও বিচার বিভাগের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ৬৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে এই সনদ তৈরি করে। তবে জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় রাখা হয়নি।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামধারী একটি দল অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। ইটপাটকেল, অগ্নিসংযোগসহ কয়েকটি সহিংস ঘটনা ঘটে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, যেসব দল এখন সনদে স্বাক্ষর করেনি, তারা চাইলে পরবর্তীতেও তা করতে পারবে।

ঢাকা/এএএম/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প জ ত য় ঐকমত য অন ষ ঠ ন ই সনদ এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

নিজ দেশে ভ্রমণের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের আইন কী বলে

প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো মানুষ রাজনৈতিক নিপীড়ন ও নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এই আবেদন মঞ্জুর হলে সরকার প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য সুরক্ষাভিত্তিক থাকার অনুমতি দেয়। এই মেয়াদ পূর্ণ হলে দেওয়া হয় ‘ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন (আইএলআর)’ বা স্থায়ী বসবাসের সুযোগ। এর অন্তত ১২ মাস পর যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। এখানে উতরে গেলে পাওয়া যায় ব্রিটিশ পাসপোর্ট। তখন ইচ্ছেমতো বিদেশ ভ্রমণ ও যুক্তরাজ্যে ফেরার অধিকার পান আশ্রয়প্রার্থী ওই ব্যক্তি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক–এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন এবং ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান। এর পর থেকে তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তবে বর্তমানে তিনি কোন মর্যাদায় আছেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়। তবে তিনি কোন প্রক্রিয়ায় ফিরবেন, সেটা জানা যায়নি।

যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া ব্যক্তি তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী বা ইচ্ছেমতো নিজ দেশে ফিরতে পারেন কি না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ইংল্যান্ডের অভিবাসন ও মানবাধিকার আইনে বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া মানে আশ্রয়দাতা দেশে নিরাপত্তাহীনতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া। তাই আইএলআর তথা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার পরেও নিজ দেশে ফিরে গেলে যুক্তরাজ্য সরকার কর্তৃপক্ষ তথা হোম অফিস ধারণা করতে পারে যে নিজ দেশে ওই ব্যক্তির আর কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। এতে তার রিফিউজি স্ট্যাটাস ও আইএলআর দুটোই ঝুঁকিতে পড়ে।’

সাধারণ অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি (আইএলআর) পাওয়ার পর অন্য দেশে যাওয়া এবং আবার ফিরে আসার আইনগত অধিকার থাকে। তবে যুক্তরাজ্যের বাইরে টানা দুই বছরের বেশি অবস্থান করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইএলআর বাতিল হতে পারে। তখন আবার আসতে চাইলে পুনরায় ভিসা (রিটার্নিং রেসিডেন্ট) লাগে।

তবে আশ্রয়প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এটা আরও বড় ঝুঁকি তৈরি করে বলে জানান লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘নিজ দেশে ভ্রমণই আশ্রয়দাবির বিরোধী। কারণ, যে নিপীড়নের ভয় দেখিয়ে আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল, সেই দেশে যেতে পারলে যুক্তরাজ্যের সরকারি কর্তৃপক্ষ মনে করতে পারে আশ্রয়ের প্রকৃত কারণ আর নেই। এতে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি (আইএলআর) বাতিলের পথও খুলে যায়। যদি ব্যক্তি যুক্তরাজ্যে থাকাকালে এটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়, তবে আপিলের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাইরে অবস্থানকালে বাতিল হলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। তখন যুক্তরাজ্যে ফিরে আসা সম্ভব না–ও হতে পারে।’

যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য হোম অফিস একটি বিশেষ ‘রিফিউজি ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দেয়। এই নথি ব্যবহার করে আশ্রয়প্রাপ্তরা নিজ দেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। তবে যে দেশে নির্যাতনের আশঙ্কার কথা বলে আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, সেই দেশে এই ভ্রমণ নথি ব্যবহার করা যায় না।

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রাপ্ত কোনো বাংলাদেশি যদি স্বদেশে যেতে চান, তাহলে তাঁকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বা বাংলাদেশ সরকারের ইস্যু করা ভ্রমণ পারমিট ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু এতে গুরুতর আইনি ঝুঁকি তৈরি হয়। যুক্তরাজ্যের হোম অফিস এটি ধরে নিতে পারে যে আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আর নেই এবং সেই দেশে আর কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। এর ফল হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির রিফিউজি স্ট্যাটাস বা মানবিক সুরক্ষার মর্যাদা বাতিল হতে পারে। একই সঙ্গে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি হারানোর ঝুঁকিও দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে না–ও পারেন এবং ফিরতে চাইলে নতুন ভিসা বা অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

নাগরিকত্ব ত্যাগের বিধান কী

যদি কোনো ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে চান, তাহলে হোম অফিস বরাবর একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে হয়। এই প্রক্রিয়া শেষ হতে সাধারণত দুই থেকে তিন মাস (৮–১২ সপ্তাহ) সময় লাগে। আবেদন মঞ্জুর হলে হোম অফিস একটি প্রমাণপত্র জারি করবে এবং ওই তারিখ থেকেই এটি কার্যকর হবে। নাগরিকত্ব ত্যাগের পর যুক্তরাজ্যে থাকতে চাইলেও বসবাসের অধিকার আর থাকবে না। এ ক্ষেত্রে নতুন ভিসা বা অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ