মায়ামিতে বার্সার ম্যাচ আয়োজন নিয়ে লা লিগার খেলোয়াড়দের প্রতিবাদ
Published: 18th, October 2025 GMT
লা লিগার একটি ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে আয়োজনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন লিগটির খেলোয়াড়েরা। তবে শুক্রবার রাতে প্রথমবারের মতো করা প্রতিবাদটি সরাসরি টেলিভিশনে দেখানো হয়নি। রিয়াল ওভিয়েদো ও এস্পানিওলের মধ্যকার ম্যাচ সম্প্রচারের সময় খেলার প্রথম ২৫ সেকেন্ডে মাঠের পরিবর্তে স্টেডিয়ামের বাইরের দৃশ্য দেখানো হয়। কারণ, সে সময় খেলোয়াড়েরা খেলা থামিয়ে ১৫ সেকেন্ডের নীরব প্রতিবাদ জানান।
ম্যাচটি মাঠে গড়ানোর কয়েক ঘণ্টা আগে স্প্যানিশ ফুটবলারদের সংগঠন (এএফই) ঘোষণা দেয়, শুক্র থেকে সোমবার পর্যন্ত নবম রাউন্ডের প্রতিটি ম্যাচের শুরুতেই খেলোয়াড়েরা একইভাবে প্রতিবাদ জানাবেন। লিগের ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার পরিকল্পনার বিরোধিতা করেই তাদের এই প্রতিবাদ।
খেলোয়াড়দের সংগঠন এএফই এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘খেলোয়াড়েরা প্রতীকীভাবে প্রতিবাদ জানাবে, যেন লা লিগার যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাচ আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতার অভাব, সংলাপের ঘাটতি এবং নীতিগত অসংগতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তুলে ধরা যায়।’
আরও পড়ুনঅনিচ্ছা সত্ত্বেও বার্সেলোনাকে মায়ামিতে খেলার অনুমতি দিল উয়েফা ০৭ অক্টোবর ২০২৫গত সপ্তাহে লা লিগা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, আগামী ২০ ডিসেম্বর বার্সেলোনা ও ভিয়ারিয়ালের মধ্যকার ম্যাচটি মায়ামিতে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এএফই জানিয়েছে, শীর্ষ লিগে ২০ দলের অধিনায়করা সবাই এ প্রতিবাদের সিদ্ধান্তে একমত। সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, বার্সেলোনা ও ভিয়ারিয়ালের খেলোয়াড়দের তারা এই প্রতিবাদে অংশ নিতে বলেনি; যদিও তারা ‘প্রতিবাদের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে একমত’।
আজ রাতে লা লিগার ম্যাচে বার্সেলোনা মুখোমুখি হবে জিরোনার আর ভিয়ারিয়াল খেলবে রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে। গত শুক্রবার বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক যুক্তরাস্ট্রে ম্যাচ খেলা নিয়ে তাঁর এবং এবং খেলোয়াড়দের অসন্তোষের কথা জানান। ৭ হাজার ২০০ কিলোমিটার (৪,৫০০ মাইল) দূরে গিয়ে মৌসুমের একটি নিয়মিত ম্যাচ খেলা নিয়ে কেউ খুশি নন বলে জানিয়েছেন ফ্লিক, ‘আমার খেলোয়াড়েরা খুশি নয়, আমিও খুশি নই। কিন্তু লা লিগা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আমাদের এই ম্যাচ খেলতেই হবে।’
বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন যে আমেরিকান ক্রীড়া বাজারে লা লিগার আরও প্রসার ঘটানোর একটি বড় সুযোগ। তবে ফ্লিক এবং তাঁর খেলোয়াড়দের কাছে ব্যাপারটি মূলত অতিরিক্ত ভ্রমণের চাপ, বিশেষ করে শীতকালীন বিরতির ঠিক আগে। পাশাপাশি আগামী ৭ জানুয়ারি স্প্যানিশ সুপার কাপে খেলতে বার্সেলোনাকে আবারও সৌদি আরবে যেতে হবে।
আরও পড়ুনমেসির শহরে বার্সেলোনার ম্যাচ, আপত্তি রিয়াল মাদ্রিদের১৩ আগস্ট ২০২৫বার্সেলোনা–ভিয়ারিয়ালের লা লিগা ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে আয়োজন করা হতে পারে—এ গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। নানামুখী আপত্তিতে প্রচেষ্টাটি আলোর মুখ দেখে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল।
তবে ৬ অক্টোবর উয়েফার বিবৃতিতে বলা হয়, অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুটি দলের লিগ ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে আয়োজনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে তারা। এর পর থেকে বিষয়টি নিয়ে আবার নতুন করে আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম য চ য ক তর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
নামাজের মধ্যে দৃষ্টি কখন কোথায় থাকবে
নামাজ ইসলামের অন্যতম প্রধান ইবাদত এবং মুমিনদের সফলতার সোপান। আল্লাহ্ তায়ালা সফল মুমিনদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “যারা তাদের নামাজে বিনয়ী।” (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১-২)
নামাজে এই বিনয় বা একাগ্রতা, যাকে কোরআনে বলা হয়েছে ‘খুশু’, তা অর্জন করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল দৃষ্টির অবস্থান।
যদি মুসল্লি এদিক-ওদিক দৃষ্টি ফেরান, তাহলে তার মন নামাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং খুশু নষ্ট হয়ে যায়। তাই খুশু রক্ষার জন্য দৃষ্টিকে সঠিক স্থানে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
যদি মুসল্লি এদিক-ওদিক দৃষ্টি ফেরান, তাহলে তার মন নামাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং খুশু নষ্ট হয়ে যায়। তাই খুশু রক্ষার জন্য দৃষ্টিকে সঠিক স্থানে রাখা অত্যন্ত জরুরি।আকাশের দিকে তাকানো বারণনামাজ অবস্থায় দৃষ্টিকে আকাশের দিকে তোলা ইসলামে নিষিদ্ধ। কারণ এটি খুশুর পরিপন্থী এবং আল্লাহর প্রতি যথাযথ বিনয় প্রদর্শনের বিপরীত।
এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “ঐসব লোকের কী হল, যারা তাদের নামাজে আকাশের দিকে তাদের দৃষ্টি উত্তোলন করে! তাদের অবশ্যই এ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, নতুবা তাদের চোখগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৫০)
এই নিষেধাজ্ঞা প্রমাণ করে যে, নামাজে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা খুশু বা বিনয়ের পরিবেশ থেকে ব্যক্তিকে দূরে সরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনপূর্ব যুগে মুসলিম সমাজে প্রতিবাদের ধরন১০ মে ২০২৫দৃষ্টির অবস্থান নিয়ে ফকিহদের মতদৃষ্টি কোথায় থাকবে, এই বিষয়ে ফিক্হবিদদের মধ্যে তিনটি প্রধান মত রয়েছে। তবে সবার মতামতের মূল কথা হলো: খুশু বা একাগ্রতা যেখানে বেশি হবে, দৃষ্টি সেখানেই থাকবে।
ক. সিজদার স্থানে দৃষ্টি: হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকিহদের মতে, নামাজরত অবস্থায় মুসল্লির দৃষ্টি সেজদার স্থানে নিবদ্ধ থাকা মুস্তাহাব। এর সপক্ষে যুক্তি হল, সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখলে মন বিক্ষিপ্ত হয় না এবং খুশূ' অর্জিত হয়। এই অবস্থান বিনয় প্রকাশের সবচেয়ে কাছাকাছি।
কোনো কোনো আলেম নামাজের বিভিন্ন রোকনে দৃষ্টির স্থান নির্দিষ্ট করেছেন, যা খুশু অর্জনে সহায়ক:
দাঁড়িয়ে থাকা (কিয়াম): সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা।
রুকুতে থাকা: পায়ের পাতার দিকে দৃষ্টি রাখা।
সিজদার সময়: নাকের ডগার দিকে দৃষ্টি রাখা।
বসা অবস্থায়: কোলের (হাঁটু ও উরুর সংযোগস্থল) দিকে দৃষ্টি রাখা।
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইয়িদ আহমদ আল-মুসাইয়ির এই মতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন যে খুশু এবং আল্লাহর প্রতি মনোযোগ ধরে রাখাই মূল উদ্দেশ্য।
খ. কিবলার দিকে দৃষ্টি: মালিকি মাজহাবের মতে, মুসল্লি কিবলা বা সম্মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে। এই মতের ভিত্তি হল, আল্লাহ্ তায়ালা কিবলা পরিবর্তনের সময় বলেন, “আমি আপনার চেহারাকে আকাশের দিকে ফেরাতে দেখছি। অতএব, আমি অবশ্যই আপনাকে এমন কিবলার দিকে ঘুরিয়ে দেব, যা আপনি পছন্দ করেন।
সুতরাং আপনি আপনার চেহারা মসজিদে হারামের (কাবা শরিফের) দিকে ঘোরান এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমরা তোমাদের চেহারা সেদিকেই ফেরাও।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪)
তাদের মতে, এই আয়াতে কিবলার দিকে মুখ ফেরানোর নির্দেশ কেবল দেহকে নয়, বরং দৃষ্টিকেও কিবলার দিকে নিবদ্ধ করার প্রতি ইঙ্গিত করে।
আরও পড়ুন‘যাও, আবার নামাজ পড়ো, কারণ তুমি নামাজ পড়োনি’১৮ অক্টোবর ২০২৫তা ছাড়া নবীজি (সা.) সাহাবিদের নিয়ে নামাজ পড়ার পর মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং হাতের ইশারায় মসজিদের কিবলার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, “আমি এইমাত্র, যখন তোমাদের নিয়ে নামাজ পড়লাম, জান্নাত ও জাহান্নামকে এই দেয়ালের কিবলার দিকে প্রতিমূর্ত হতে দেখেছি। আজকের মতো ভালো ও মন্দ আমি দেখিনি।”
মালিকিগণ বলেন, এই হাদিস প্রমাণ করে যে রাসুল (সা.) সামনের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন (যা কিবলার দিক)।
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত: খুশুই মূল লক্ষ্যযদিও ফিকহবিদদের মধ্যে দৃষ্টির অবস্থান নিয়ে সামান্য পার্থক্য রয়েছে, তবে সবাই একমত যে নামাজের মূল উদ্দেশ্য হলো খুশু বা একাগ্রতা অর্জন। খুশুর জন্য একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহর মহিমা ও মহত্ত্ব স্মরণ করা, শান্তভাবে রুকু ও সেজদা করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে স্থির রাখা।
সুতরাং, নামাজে ব্যক্তির দৃষ্টি সেজদার স্থানেই থাকুক বা সম্মুখের কিবলার দিকে, গুরুত্বপূর্ণ হল—কোন অবস্থানে তার মন সবচেয়ে কম বিক্ষিপ্ত হয় এবং আল্লাহর দিকে তার মনোযোগ সর্বাধিক নিবদ্ধ থাকে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ফিকহবিদদের (হানাফি, শাফেয়ি, হাম্বলি) মতে সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা খুশু অর্জনের জন্য সর্বোত্তম। তবে মালিকিদের মতে কিবলার দিকে সরাসরি তাকানো বৈধ। উভয় মতের লক্ষ্য হল, চোখকে বিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে আল্লাহর সাথে সংযোগকে দৃঢ় করা।
নামাজে দৃষ্টির অবস্থান কেবল একটি বাহ্যিক নিয়ম নয়, এটি অভ্যন্তরীণ বিনয় ও একাগ্রতার প্রতিফলন। যখন একজন মানুষ তার দৃষ্টিকে সেজদার স্থানে স্থির রাখে, তখন তা শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং বাইরের জগত থেকে মনকে দূরে রাখতে সহায়তা করে, যার ফলে তার নামাজ আল্লাহর কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হওয়ার আশা করা যায়।
আরও পড়ুননামাজে ভুলের সিজদা কখন কীভাবে দিতে হয়০১ ডিসেম্বর ২০২৫