আর ৭ দিন নদী-সমুদ্রে মাছ না ধরার আহ্বান ঝালকাঠির ডিসির
Published: 18th, October 2025 GMT
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে ঝালকাঠি শহরের কলাবাগান এলাকায় সুগন্ধা নদীর পাড়ে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এ সভা হয়।
ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধি ও মা ইলিশ সংরক্ষণে দেশের নদী-সমুদ্রে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ সময় ইলিশ ধরা, বেচাকেনা, পরিবহন নিষিদ্ধ থাকবে।
আরো পড়ুন:
৫০৮৫ অভিযানে ১৩০১ মামলা, ১০৪৭ জনকে কারাদণ্ড
মেঘনায় নৌ পুলিশের অভিযানে ২৮ জেলে গ্রেপ্তার
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান জেলেদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘দেশের স্বার্থে আগামী ৭ দিন কেউ মাছ ধরতে যাবেন না। আপনার পরিবার ও সন্তান নিশ্চয়ই চায় না, আপনি জেলে যান। দেশের স্বার্থে ইলিশ রক্ষায় আমরা এবার বেশ সিরিয়াস।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘পৃথিবীর ৮০ শতাংশ ইলিশ আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। এর সম্পদ আমাদের গর্ব, তাই আমাদের দায়িত্ব এটা সংরক্ষণ ও উৎপাদন বাড়ান।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘একটি মা ইলিশ থেকে ১০-১১ লাখ বা তারও বেশি পোনা উৎপন্ন হয়। এই পোনা বাঁচলে আপনারাই বেশি মাছ ধরতে পারবেন, আয়ও বাড়বে। তাই আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি; দেশের ক্ষতি করব না, মা ইলিশ ধরব না।’’
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো.
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল। মতবিনিময় সভায় ওই এলাকার শতাধিক মৎস্যজীবী উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/অলোক/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঝ লক ঠ মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবেশ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করছে সরকার
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ন্যায়বিচার, জলবায়ু ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সাভারের ব্র্যাক সিডিএমে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিসে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, “আমার সারাজীবনের লড়াই একই—কীভাবে কর্পোরেটের দখলদারিত্ব থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা যায়, কীভাবে অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়িত করা যায়, কীভাবে তাদের আইনি কাঠামোর মধ্যে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং কীভাবে উন্নয়নকে পরিবেশমুখী করা যায়।”
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি তিনটি জাতীয় অগ্রাধিকার তুলে ধরেন: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, শাসন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ প্রশাসনে চলমান সংস্কারের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে আছে ২২ বছর ধরে নিষিদ্ধ থাকা একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করা, দেশজুড়ে প্লাস্টিকমুক্ত অঞ্চল সম্প্রসারণ, প্রধান নদী ও বনজ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ জোরদার করা।
বনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারও তিনি তুলে ধরেন। সম্প্রতি অনুমোদিত বন নীতিতে বননির্ভর জনগোষ্ঠীর অবাধ, পূর্বানুমতিপ্রাপ্ত ও অবহিত সম্মতির বিধানকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেন।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ঝুঁকিপূর্ণ ও নাজুক পরিবেশগত অবস্থার কথা তুলে ধরে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, প্রবাল বাস্তুতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে সেখানে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিপজ্জনক বায়ুদূষণ কমাতে জোরদার অভিযান অব্যাহত আছে, যদিও কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ফেনীতে নজিরবিহীন বন্যা, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, আকস্মিক সীমান্তপারের পানির প্রবাহসহ দেশের বাড়তে থাকা জলবায়ু ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, জলবায়ু ন্যায়বিচার তার দুই মন্ত্রণালয়ের কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।
উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, মেগা প্রকল্পনির্ভরতা কমিয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আরো বিনিয়োগ করতে হবে।
তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে জানান, সরকারি সকল কার্যালয়ে কার্যকর রুফটপ সোলার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নির্মূলের চলমান সরকারি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পরিবেশ ন্যায়বিচার একটি মূল্যবোধনির্ভর ধারণা। মানুষ ও প্রকৃতিকে সত্যিকারের মূল্য দিতে চাইলে আমাদের কার্যক্রমে সেই প্রতিফলন ঘটাতে হবে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এ সংস্কারগুলো ধরে রাখবে এবং আরো এগিয়ে নেবে।
সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন— পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; ইউএনডিপি বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সরদার এম আসাদুজ্জামান; সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ডেপুটি হেড অব কো-অপারেশন নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম; বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বেলা) চেয়ারম্যান মির্জা কামরুল হাসান এবং বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা ইসলাম।
ঢাকা/এএএম/রফিক