ছেলে মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা না পেলে প্রায়ই মা–বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসীর সহায়তায় ছেলেকে বাড়ির উঠানে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন তাঁরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন।

আজ শনিবার দুপুরে শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লোনসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকি দাস ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ফারুক ছৈয়াল (২৮) নামের ওই যুবককে এক বছরের কারাদণ্ড দেন। বিকেলে তাঁকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

নড়িয়া থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নড়িয়া পৌরসভার লোনসিং এলাকার শওকত ছৈয়াল ও শাহানাজ বেগম দম্পতির ছেলে ফারুক ছৈয়াল ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি দরজির দোকানে শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।

স্বজনেরা বিষয়টি জানতে পেরে তাঁকে ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করতে পাঠান। সেখানে ছয় মাস থাকার পর দেশে ফিরে আবার কেরানীগঞ্জের সেই দোকানে কাজ শুরু করেন ফারুক। মাদকের টাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের চাপ দেন। টাকা দিতে না পারলে তাঁদের মারধর করতেন। ঘরবাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।

আজ সকালে মা–বাবা ও ছোট বোনকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন ফারুক। তখন মা–বাবা গ্রামবাসীর সহায়তায় ফারুককে বাড়ির উঠানে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। খবর পেয়ে নড়িয়া থানা–পুলিশ উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় ফারুকের কাছে কিছু গাঁজা পাওয়া যায়। তখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ফারুকের মা শাহানাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এক ছেলে, এক মেয়ে, ফারুক বড়। অনেক চেষ্টা করেও তাকে পড়ালেখা করাতে পারিনি। তাকে কেরানীগঞ্জে কাজে পাঠাই। সেখানে গিয়ে সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। আমরা বুঝতে পেরে জমি বিক্রি করে তাকে দুবাই পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ছয় মাস পরই সে ফিরে এসে আবার কেরনীগঞ্জে চলে যায়। প্রতি মাসে দু-একবার গ্রামে এসে আমাদের কাছে টাকা চায়। টাকা দিতে না পারলে আমাদের মারধর করে, ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। স্বামী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ। কোনো কাজ করতে পারে না। তার ওপর ছেলের এমন আচরণে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম।’

নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকি দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদকাসক্ত এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে পুলিশ ও প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়। আমরা ওই ব্যক্তির কাছে কিছু মাদকদ্রব্য পাই। যার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

নড়িয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকান্ত দত্ত বলেন, নড়িয়ায় এক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। পরে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিবেশীর গ্যারাজে পড়ে ছিল অলিম্পিকে জেতা সোনার পদক, এখন নিলামে

ধরুন, অলিম্পিকে সোনার পদক জিতলেন। এখন পদকটি যত্ন করে রাখতে জুতসই একটি জায়গা তো লাগবে। অলিম্পিকে জেতা সোনার পদক তো আর যেনতেন জায়গা ফেলে রাখা যায় না। বিশ্বের অনেক অ্যাথলেটেরই সে জন্য আয়োজনের কমতি থাকে না। কিন্তু জর্জ ফোরম্যান অন্য ধাতে গড়া মানুষ। বক্সিংয়ে প্রয়াত এই কিংবদন্তির মনে হয়েছিল, অলিম্পিকে জেতা সোনার পদক প্রতিবেশীর গ্যারেজে ফেলে রাখা যায়!

অবিশ্বাস্য এ ঘটনাই সামনে এনেছে ইউরোপের কিছু সংবাদমাধ্যম। ১৯৬৮ মেক্সিকো সিটি অলিম্পিকের বক্সিংয়ে হেভিওয়েট ইভেন্টে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের জোনাস সেপুলিসকে হারিয়ে সোনা জেতেন ফোরম্যান। এরপর দীর্ঘ কয়েক দশক এ পদকের কোনো হদিস ছিল না।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে পদকটি আবিষ্কার করা হয় ফোরম্যানের প্রতিবেশীর বাসার গ্যারেজে। পদকটি সেখান থেকে গিয়ে পড়েছে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান লেল্যান্ড অকশনসের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিষ্ঠান পদকটি নিলামে তুলেছে। ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ নিলাম।

তবে স্পেনের আরেক সংবাদমাধ্যম ‘এএস’ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে গ্যারাজের মালিক গ্যারাজ পরিস্কার করতে গিয়ে ফোরম্যানের বিভিন্ন জিনিসপত্রের পাশাপাশি অলিম্পিক পদকটিও দেখতে পান।

‘মার্কা’ জানিয়েছে, তিনজন ক্রেতা এরই মধ্যে পদকটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৩ হাজার ৩২৮ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ টাকার কিছু বেশি)। লেল্যান্ড অকশনসের আশা, এ দকের দাম আরও বাড়বে।

ফোরম্যান বক্সিং ইতিহাসের কিংবদন্তি। দুবারের হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ‘বিগ জর্জ’ নামে খ্যাতি পাওয়া সাবেক এই বক্সার ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত রিংয়ে নেমেছেন। ১৯৭৪ সালে কিনশাসায় বিখ্যাত ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ ম্যাচে মোহাম্মদ আলীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারেন। ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং রিসার্চ’–এর বিবেচনায় ফোরম্যান সর্বকালের সেরা বক্সারদের তালিকায় অষ্টম। চলতি বছর মার্চে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্রীড়াবিদ। সত্তর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে বসবাস করতেন ফোরম্যান।

আরও পড়ুনজুনিয়র হকি বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে ৩–২ গোলে হার বাংলাদেশের১৪ ঘণ্টা আগে

নিলামকারী প্রতিষ্ঠানটির বরাত দিয়ে ‘মার্কা’ ও স্পেনের আরেক সংবাদমাধ্যম ‘এএস’ জানিয়েছে, সত্তর দশকের শেষ দিকে ফোরম্যান নিজের কিছু জিনিসপত্র প্রতিবেশীকে তাঁর বাসায় রাখার অনুরোধ করেছিলেন। সেই প্রতিবেশী আপত্তি করেননি। কয়েক বছর আগে সেই প্রতিবেশী নারীর মেয়ে বাসার গ্যারেজ থেকে ফোরম্যানের রেখে যাওয়া সেসব জিনিসপত্র আবিষ্কার করেন। এর মধ্যে ছিল তাঁর দুটি পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, কিছু ট্রফি ও সোনার সেই পদক।

চলতি বছর মার্চে মারা যান জর্জ ফোরম্যান

সম্পর্কিত নিবন্ধ