জেল খাটা কোচের হাত ধরে ১৮ বছর পর বিশ্বকাপ জেতার অপেক্ষায় আর্জেন্টিনা
Published: 19th, October 2025 GMT
অনেক সময় ব্যর্থতা যখন চারপাশ থেকে আঁকড়ে ধরে, তখন সবার অপেক্ষা থাকে পথপ্রদর্শকের জন্য—যিনি এসে সব জীর্ণতা ও সংকট থেকে উদ্ধার করবেন। আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক ফুটবলে তেমনই এক ত্রাতা হয়ে এসেছেন ডিয়েগো প্লাসেন্তে। তাঁর হাত ধরে ১৮ বছর পর আবারও অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব–২০ দল। এখন অপেক্ষা শিরোপা জয়ের।
একসময় আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স ও বায়ার লেভারকুসেনসহ বিভিন্ন দলে খেলা সাবেক লেফটব্যাক প্লাসেন্তে বর্তমানে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব–২০ দলের কোচ। তাঁর অধীনে আগামী সোমবার অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মরক্কোর মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় ভোর পাঁচটায় শুরু হবে এই ম্যাচ।
আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক দলের হয়ে মাঠে পাওয়া সাফল্যের পাশাপাশি প্লাসেন্তের জীবনে কিছু চমকপ্রদ ঘটনাও আছে।
১৯৯৫ সালে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক প্লাসেন্তের। দারুণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি দ্রুত নজর কাড়েন রিভার প্লেটের এবং দুই মৌসুম পরই যোগ দেন সেখানে।
আরও পড়ুনলাওতারো রিভেরো: ফুটপাতের বিস্কুট বিক্রেতা থেকে আর্জেন্টিনা দলে মেসির সতীর্থ০৫ অক্টোবর ২০২৫রিভার প্লেটে সফল সময় কাটানোর পর প্লাসেন্তে পাড়ি জমান জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুসেনে। ইউরোপে পরবর্তী সময়ে তিনি আরও খেলেছেন স্পেনের সেল্তা ভিগো এবং ফ্রান্সের বোর্দোয়। এরপর দেশে ফিরে দক্ষিণ আমেরিকার পরাশক্তি আর্জেন্টিনার সান লরেঞ্জো ও উরুগুয়ের ন্যাসিওনাল দে মন্টেভিদেওর মতো ক্লাবের হয়েও খেলেছেন প্লাসেন্তে।
শুধু ক্লাব পর্যায়েই নয়, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলেও একসময় খেলেছেন প্লাসেন্তে। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জিততে সাহায্য করেছিলেন, আর মূল জাতীয় দলে খেলেছেন ২০০২ সালের বিশ্বকাপে এবং ২০০৪ কোপা আমেরিকায়। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে ২০০০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ২২ ম্যাচ খেলেছেন প্লাসেন্তে।
তবে শুধু ফুটবলার পরিচয়ে তাঁকে আটকে রাখার সুযোগ নেই। ফুটবলের পাশাপাশি তাঁর ভালোবাসা ছিল সংগীতে, বিশেষ করে আর্জেন্টাইন রক গান। জীবনের অজানা দিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্লাসেন্তে একবার বলেছিলেন, তিনি ‘লস রেদোন্দোস’ ব্যান্ডের ভক্ত। এমনকি ব্যান্ডটির কনসার্ট মিস না করতে অদ্ভুত কিছু কাজও করেছিলেন।
১৮ বছর পর শিরোপা জয়ের অপেক্ষায় আর্জেন্টিনা দল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন ব শ বক প ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
পাখি ও প্রজাপতির বিলুপ্তিতে রাসায়নিক কৃষির দায়
আমাদের চারপাশের প্রকৃতি আজ আর আগের মতো সজীব নেই। যে রঙিন প্রজাপতিগুলো একসময় বাগানে বাগানে উড়ে বেড়াত, যে পাখিদের কলকাকলিতে ভোরবেলা জেগে উঠতাম আমরা, সেই দৃশ্য ক্রমেই বিরল হয়ে উঠছে।
গ্রামের মাঠে এখন আর আগের মতো দোয়েল, শালিক কিংবা বাবুই পাখির দেখা মেলে না। ফুলের বাগানে প্রজাপতির সংখ্যাও কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এই বিষাদময় পরিস্থিতির পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকলেও সবচেয়ে বড় দায় রয়েছে কৃষিক্ষেত্রে অতিমাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহারের।
একদিকে যেমন জনসংখ্যার সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে সীমিত জমিতে বেশি ফসল ফলানোর চাপও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আধুনিক কৃষিব্যবস্থায় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকেরা নানা রকম রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহার করছেন। কিন্তু এই রাসায়নিকগুলো শুধু ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড়কেই মারছে না, উপকারী পতঙ্গ ও পাখি মারছে। এগুলো সামগ্রিক পরিবেশের জন্য হয়ে উঠছে মারাত্মক হুমকি।
কীটনাশক ব্যবহারের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রজাপতি ও মৌমাছির মতো পরাগায়নকারী পতঙ্গরা। এই ছোট প্রাণীগুলো আমাদের বাস্তুতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রজাপতি ও মৌমাছি ফুল থেকে ফুলে উড়ে বেড়ায় এবং পরাগায়নে সাহায্য করে।
এই পরাগায়নের মাধ্যমেই ফলমূল ও শস্যের উৎপাদন সম্ভব হয়। কিন্তু যখন কৃষিজমিতে বিষাক্ত রাসায়নিক ছিটানো হয়, তখন সেই বিষ প্রজাপতি ও মৌমাছির শরীরে প্রবেশ করে। অনেক সময় তারা সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়, আবার কখনো বিষক্রিয়ায় তাদের প্রজননক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা কমতে থাকে এবং পুরো প্রজাতিই বিলুপ্তির হুমকিতে পড়ে। প্রজাপতির বিভিন্ন প্রজাতি এখন আর চোখে পড়ে না, যেগুলো একসময় সচরাচর দেখা যেত।
পাখিদের অবস্থাও কম করুণ নয়। গ্রামীণ এলাকায় যেসব পাখি একসময় খুব সহজেই দেখা যেত, তাদের অনেকেই এখন বিলুপ্তির পথে। শালিক, দোয়েল, বাবুই, চড়ুই এবং আরও অনেক প্রজাতির পাখির সংখ্যা ভয়াবহভাবে কমে গেছে। এর পেছনেও রাসায়নিক কীটনাশকের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। পাখিরা পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে।
কিন্তু যখন সেই পোকামাকড়ের শরীরে কীটনাশকের বিষ থাকে, তখন পাখিরা সেই বিষযুক্ত খাবার খেয়ে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রজাপতির মতোই অনেক সময় তারা সরাসরি মারা যায়, আবার কখনো তাদের প্রজননক্ষমতা হ্রাস পায়। এ ছাড়া অনেক পাখি প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে এবং মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে মাঠের চারপাশের লতাপাতা ও ঝোপঝাড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যেগুলো পাখিদের বাসা বানানো ও আশ্রয়ের জন্য অত্যাবশ্যক ছিল।
রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব শুধু পাখি ও প্রজাপতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি পুরো বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করছে। যখন পরাগায়নকারী পতঙ্গ কমে যায়, তখন ফসলের উৎপাদনও কমে যায়। যখন পাখি কমে যায়, তখন পোকামাকড়ের সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যায়। এতে আবার বেশি কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় এবং এভাবে একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়। মাটির স্বাস্থ্যও নষ্ট হতে থাকে। কারণ, রাসায়নিক সার মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা ও মাটিতে থাকা উপকারী অণুজীবদের মেরে ফেলে।
এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে কৃষিতে টেকসই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। জৈব কৃষি বা অর্গানিক ফার্মিং এর একটি ভালো বিকল্প। এতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বদলে প্রাকৃতিক সার, জৈব কীটনাশক ও ফসলের বৈচিত্র্যের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হয়। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন যে স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করা ঠিক নয়। সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে এবং জৈব কৃষিতে ভর্তুকি ও সহায়তা দিতে হবে।
কারণ, একটি সুস্থ পরিবেশ ছাড়া মানুষও টিকে থাকতে পারবে না। তাই কৃষিতে রাসায়নিক ব্যবহার কমিয়ে টেকসই পদ্ধতি অবলম্বন করা এখন সময়ের দাবি। সবাই মিলে এই ছোট্ট প্রাণীগুলোকে রক্ষা করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রয়ে যাবে সুন্দর, সবুজ ও প্রাণবন্ত একটি পৃথিবী।
তামান্না ইসলাম শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়