প্রায় ৬ শতাংশ শিশু খাবারের অ্যালার্জিতে ভোগে। এর অর্ধেক শিশুর অ্যালার্জি হয় গরুর দুধ, ডিম ও বাদামে। গমজাত খাবার, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, মাছ প্রভৃতিতে অ্যালার্জি হয়।

জন্মের পর প্রথম এক বছর শিশুর দুধ ও ডিমের অ্যালার্জি হয়। বাদামজাত খাবারে আক্রান্ত হয় একটু দেরি করে। গাভির
দুধ বা ডিমের অ্যালার্জি ৫ থেকে ৭ বছর বয়সে আপনা-আপনি সেরে যায় ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে। প্রায় ২০ শতাংশ শিশু বাদামজাত অ্যালার্জিতে সারা জীবন ভোগে।

খাবারে অ্যালার্জির কারণে পেটের অসুখ দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়। এক বছরের কমবয়সী শিশুর অ্যালার্জিজনিত অসুখের অন্যতম কারণ গরুর দুধে এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন।

কীভাবে বুঝবেন

ত্বকে লালচে ভাব, চুলকানো, র‌্যাশ।

চোখ লাল হয়ে যাওয়া।

নাক দিয়ে সর্দি ঝরা।

সংকুচিত শ্বাসনালি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি।

মুখের ভেতর ঘা বা ত্বকের প্রদাহ।

বমি, ডায়রিয়া বা রক্ত আমাশয়।

অ্যালার্জিতে রক্তচাপ কমে যাওয়া।

শনাক্ত ও চিকিৎসা

‘ফুড উইথড্রোল ও চ্যালেঞ্জ’ পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগটি শনাক্ত করা যায়। যে খাবারে অ্যালার্জি হচ্ছে বলে সন্দেহ, সে খাবার দুই থেকে আট সপ্তাহ বন্ধ রাখা। আবার খেতে দিয়ে যদি উপসর্গ থাকে, তবে নিশ্চিত বলা যায় সেসব খাবারে শিশুর অ্যালার্জি আছে। এখানে ল্যাব টেস্টের ভূমিকা গৌণ।

যে খাবারে অ্যালার্জি আছে, সেটি খাদ্যতালিকা হতে বাদ দিতে হবে। যেসব শিশু বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল, তাকে পূর্ণ দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ান। টাটকা গরুর দুধ সহ্য না হলে, তা রূপান্তরিত করে (যেমন পাউডার দুধ) ব্যবহার। তবে কোনো খাবারে একবার অ্যালার্জি দেখা গেলে, তা আবার দিতে হবে অল্প পরিমাণে। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।

খাবারের প্রোটিন অংশজাত অ্যালার্জির উপসর্গ ক্ষণস্থায়ী। শিশুকে পূর্ণ ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মাতৃদুগ্ধ পান করাতে হবে। এরপর কম অ্যালার্জির পরিপূরক খাবার একেক করে আলাদাভাবে খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে। এতে বোঝা যায় কোন খাবারে তার অ্যালার্জি। শিশুর অ্যালার্জি প্রতিরোধে গর্ভবতী বা প্রসূতি মায়ের খাবারে বিধিনিষেধ আরোপ যুক্তিযুক্ত নয়।

ডা.

প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম: নাম অপরিচিত, প্রাদুর্ভাব কম নয়

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে জিবিএস নামটি অনেকের কাছেই অপরিচিত ও দুর্বোধ্য। কিন্তু এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে নেহাত কম নয়। যেকোনো বয়সের শিশু-কিশোর বা নারী-পুরুষ যেকোনো সময় এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

কারণ কী

জিবিএসের মূল কারণ জীবাণুঘটিত হলেও প্রকৃতপক্ষে জীবাণু প্রতিরোধী ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক আচরণের ফলে এ রোগের উৎপত্তি হয়।

‘ক্যাম্পাইলো ব্যাকটর জেজুনি’ নামের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ‘ডায়রিয়ার রোগী বা ইনফ্লুয়েঞ্জা’ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সর্দি-জ্বরের রোগীরা সাধারণত ‘জিবিএস’-এ আক্রান্ত হয়।

কীভাবে বুঝবেন

ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের প্রায় দুই সপ্তাহ পর রোগী প্রথমে দুই পায়ে দুর্বলতা বোধ করে। এই দুর্বলতা বাড়তে থাকে এবং ওপরের দিকে বিস্তার লাভ করে মেরুদণ্ড, দুই হাত, বুকের মাংসপেশি এমনকি মুখের মাংসপেশিতে ছড়িয়ে পড়ে।

কখনো কখনো দুর্বলতা এত বেশি হয় যে রোগী হাত-পায়ের আঙুলও সামান্য পরিমাণ নাড়াতে পারে না। বুকের মাংসপেশির দুর্বলতার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে’ স্থানান্তর করতে হয়।

জিবিএস রোগীর এত দুর্বলতা সত্ত্বেও সাধারণ অনুভূতি, স্মৃতিশক্তি, পায়খানা-প্রস্রাবের কোনো সমস্যা হয় না এবং রোগী কখনো অজ্ঞান হয়ে যায় না।

জিবিএসের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় ৮০ ভাগ রোগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে।

কী করবেন

জিবিএস আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হবে। স্নায়ুরোগবিশেষজ্ঞ উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা, এনসিএস নামক স্নায়ুর পরীক্ষা এবং মস্তিষ্কের সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বিশ্লেষণ করে রোগটি নির্ণয় করেন।

রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস, নাড়ির গতি, রক্তচাপ ইত্যাদির প্রতি সার্বক্ষণিক লক্ষ রাখতে হয়। যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করতে হয়। নিয়মিত হাত-পায়ের ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রোগীকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। এ রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যয়বহুল।

কোনো কোনো রোগীর আরোগ্য পেতে প্রায় এক বছর লেগে যায়। প্লাজমাফেরোসিস তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল। তবে আইভি ইমিউনোগ্লোবিনের খরচ ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা। উপসর্গ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে এ চিকিৎসা দিতে হয়।

চিকিৎসায় সফলতা

জিবিএসের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় ৮০ ভাগ রোগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে, ৫-১০ ভাগ রোগীর কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং ৫-৬ ভাগ রোগী মারা যায়।

সতর্কতা

সাধারণত কোনো ইনফেকশন যেমন ডায়রিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের দুই বা তিন সপ্তাহ পরে জিবিএসের লক্ষণ দেখা দেয়। কখনো কখনো ভ্যাকসিন দেওয়ার পরও জিবিএস হতে পারে। তাই এ ধরনের সংক্রমণের পর এমন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গুলেন ব্যারি সিনড্রোম: নাম অপরিচিত, প্রাদুর্ভাব কম নয়