কেন হয়

হেপাটাইটিস বি, সি ও ডি ভাইরাসে লিভারে প্রদাহ হয়। দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ লিভারের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে লিভার সংকুচিত হয়ে যায়। ফ্যাটি লিভার অর্থাৎ লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে লিভার কোষে প্রদাহ হয়ে নষ্ট হতে থাকে এবং একসময় সিরোসিস হতে পারে।

সিরোসিস হতে পারে এসব কারণে—

অতিরিক্ত মদ্যপান

অটোইমিউন হেপাটাইটিস

কিছু বংশগত রোগ

পিত্তথলি বা পিত্তনালির ব্যাধি

ওষুধের বিষক্রিয়া

লক্ষণগুলো কী

সিরোসিসের শুরুতে তেমন উপসর্গ থাকে না। খাবারে অরুচি, বমিভাব, শরীর দুর্বলতা, ক্লান্তি ও ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় অন্য রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষা, পেটের আলট্রাসাউন্ড বা সার্জারির সময় রোগটি ধরা পড়ে।

রোগের অগ্রসর পর্যায়ে জন্ডিস, পায়ে বা পেটে পানি, রক্তবমি বা কালো পায়খানা হতে পারে। রোগী চেতনা হারিয়ে কোমায় চলে যেতে পারেন।

আরও পড়ুনফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ ও লিভার ডিটক্সে প্রতিদিনের তিনটি অভ্যাস০৭ আগস্ট ২০২৫চিকিৎসাপদ্ধতি

প্রাথমিক সিরোসিসে অন্তর্নিহিত কারণ অনুযায়ী চিকিৎসায় লিভারের ক্ষতি কমানো সম্ভব। মূল কারণ নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি ( হেপাটাইটিস বি, সি ও ডি), ওজন কমানো ও ব্যায়াম (ফ্যাটিলিভার), মদ্যপান বর্জন ও ক্ষতিকর ওষুধ বন্ধ করার দরকার পড়ে।

সিরোসিসের কারণে জটিলতা নিয়ন্ত্রণে পায়ে বা পেটে পানি হলে তার ওষুধ দিতে হয়। রক্তবমি হলে খাদ্যনালি এন্ডোস্কপির মাধ্যমে দেখা ও প্রয়োজনে ওষুধ ও রক্তনালি বন্ধনের প্রয়োজন পড়ে। বিভ্রান্তি বা কোমা হলে হাসপাতালে ভর্তি ও প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।

জীবাণু সংক্রমণ হলে খেতে হবে অ্যান্টিবায়োটিক। লিভার ক্যানসার পর্যবেক্ষণের জন্য ছয় মাস পরপর আলট্রাসাউন্ড ও রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে। অতি অগ্রসর ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপনের দরকার হতে পারে।

আরও পড়ুনহালকা গড়নের মানুষদেরও কি ফ্যাটি লিভার হতে পারে০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫প্রতিরোধের উপায়

● হেপাটাইটিস বি-এর টিকা নিতে হবে। 

● হেপাটাইটিস সি স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা।

● ইনজেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হলে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার। শেভিংয়ের সময় অপরের ব্যবহৃত ব্লেড ব্যবহার না করা।

● নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করা ও সুরক্ষিত যৌন জীবনচর্চা।

● সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।

● অ্যালকোহল বর্জন ও ওষুধ সেবনে সচেতনতা।

অধ্যাপক ডা.

বিমল চন্দ্র শীল, মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুনলিভার সুস্থ রাখতে কী করা উচিত০৯ নভেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ প ট ইট স

এছাড়াও পড়ুন:

রোগ নির্ণয়ের নামে অতিরিক্ত পরীক্ষা, প্রতিকার কোথায়!

স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশে আধুনিক চিকিৎসাসুবিধা ও ডায়াগনস্টিক প্রযুক্তির উন্নতি যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে হাসপাতাল নিয়ে ভয়ও তৈরি হয়েছে। কারণ, প্রায়ই শোনা যায় পরীক্ষা না করালে চিকিৎসক চিকিৎসা শুরু করেন না। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষকে নিজেদের পকেট থেকে দিতে হয়, যার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ খরচ চলে যায় ডায়াগনস্টিক পরীক্ষায়।

জ্বর, সর্দি বা কাশির মতো সাধারণ অসুখ অনেক সময় বিশ্রামে বা সামান্য ওষুধে সেরে যায়। কিন্তু এখন দেখা যায়, জ্বর নিয়ে হাসপাতালে গেলে ধরিয়ে দেওয়া হয় পরীক্ষার দীর্ঘ তালিকা; যেমন সিবিসি, সিআরপি, ডেঙ্গু বা টাইফয়েড পরীক্ষা। সাধারণ জ্বরের রোগীদের প্রায় ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই পাঁচটির বেশি পরীক্ষা লেখা হয়, যার খরচ দাঁড়ায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। একইভাবে বুক ব্যথার মতো সাধারণ উপসর্গেও ৬২ শতাংশ রোগীকে ইসিজি, সিবিসি, আলট্রাসনোগ্রাফি বা এন্ডোস্কোপির মতো পরীক্ষা করতে বলা হয়, যদিও অনেক সময় একটি সাধারণ অ্যান্টাসিডই যথেষ্ট হতে পারত।

স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এ ধরনের খরচ বড় চাপ তৈরি করে। একজন দিনমজুরের মাসিক আয় যদি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা হয়, তাহলে একবার হাসপাতালে গিয়ে তিন বা চার হাজার টাকা খরচ করা তাঁর পক্ষে কঠিন। এর ফলে অনেকেই হাসপাতাল এড়িয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান। এতে সাময়িক উপশম মিললেও গুরুতর রোগ শনাক্ত না হওয়ায় ভবিষ্যতে আরও বিপদের মুখে পড়েন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৪৩ শতাংশ মানুষ পরীক্ষার খরচের ভয়েই চিকিৎসা শুরু করেন না এবং ৩৩ শতাংশ প্রথমে ফার্মেসিতে যান, পরে জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসক দেখান।

কেন এত অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হয়—এ প্রশ্নে বেশ কিছু কারণ সামনে আসে। কিছু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠালে কমিশন পান এবং কিছু ক্ষেত্রে এই কমিশনের হার ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে অনেক বেসরকারি কেন্দ্র দামি যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে থাকে।

অবশ্যই সব চিকিৎসক এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন। অনেকেই দায়িত্ব নিয়ে রোগী দেখেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরীক্ষা দেন। একই উপসর্গে একাধিক সম্ভাব্য রোগ থাকতে পারে, তাই সতর্কতার জন্য কখনো কখনো অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

সমাধানের জন্য প্রয়োজন কঠোর তদারকি, স্বচ্ছ নীতিমালা ও সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি। কোন উপসর্গে কোন পরীক্ষা লাগবে, তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা উচিত। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফি ও অতিরিক্ত চার্জ প্রকাশ্যে আনতে হবে এবং সেগুলো নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। পাশাপাশি রোগীকেও সচেতন হতে হবে এবং প্রতিটি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। নৈতিকতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতেই স্বাস্থ্যসেবা মানবিক ও কার্যকর হতে পারে।

ইব্রাহীম খলিল শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ই–মেইল: [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে দুটি পরীক্ষায় উপসর্গহীন কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে
  • রোগ নির্ণয়ের নামে অতিরিক্ত পরীক্ষা, প্রতিকার কোথায়!