টোপাপানায় ম্লান মহামায়া হ্রদের আকর্ষণ
Published: 19th, October 2025 GMT
মূল ফটক পেরোলেই সমান্তরাল পিচঢালা রাস্তা। পূর্ব দিকে সেটি উঠে গেছে মহামায়া হ্রদের বাঁধ পর্যন্ত। খাড়া পথ বেয়ে ওঠা ক্লান্ত পর্যটকদের মনে একসময় প্রশান্তি এনে দিত পাহাড়ঘেরা বিস্তীর্ণ মহামায়া হ্রদের টলটলে জলরাশি। মায়াবী সে দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
মহামায়া হ্রদের বড় অংশজুড়ে এখন চোখে পড়ে টোপাপানার চাদর আর চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা। বাঁধের কিনারজুড়ে ঘাস ও লতাগুল্মের ঝোপ। হ্রদে ইঞ্জিনচালিত নৌকার দৌরাত্ম্য। টিকিটেও আদায় হচ্ছে বাড়তি টাকা। সব মিলিয়ে মহামায়া ইকোপার্ক এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকেরা হতাশ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দেশের পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এ স্থান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকেরা।
মহামায়া হ্রদ ও ইকোপার্কের অবস্থান মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে। সেচ সম্প্রসারণের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মহামায়া ছড়ার ওপর বাঁধ দিলে পাহাড়ের কোলজুড়ে ১১ বর্গকিলোমিটারের মহামায়া হ্রদ তৈরি হয়। পরে বন বিভাগ এখানকার ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করে মহামায়া ইকোপার্ক। ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। গত ২২ জুলাই থেকে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ২ কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকায় ১ বছরের জন্য মহামায়া ইকোপার্কের ইজারা পেয়েছে ওয়াসিফা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহামায়া হ্রদ ও ইকোপার্ক ঘুরে দেখা যায়, শ খানেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। একদল তরুণ হ্রদের বাঁধে বসে গান করছেন। আশপাশের বেঞ্চে বসে গল্পে মেতেছেন কেউ কেউ। হ্রদের পাড়ে বাঁধা সারি সারি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর কায়াক। ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে হ্রদ ঘুরে দেখতে বেরিয়েছে দুটি দল। দুটি দলের কোনো সদস্যকেই দেখা গেল না লাইফজ্যাকেট পরতে। কিছুদূর যেতেই ইঞ্জিনচালিত নৌকার বিকট শব্দে উড়ে যেতে দেখা গেল একদল পানকৌড়িকে। হ্রদের বড় একটি অংশজুড়ে টোপাপানার ভারী আস্তরণ।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়ার আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ জলের এই হ্রদের এখন ৩ থেকে ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা টোপাপানায় ভরে গেছে। দ্রুত বেড়ে চলা এসব জলজ আগাছা মাছের বিচরণক্ষেত্র নষ্টসহ হ্রদের বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সংকুচিত হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণ এলাকা।ইজারাদারের নিয়োগ করা কয়েকজন শ্রমিক নৌকা নিয়ে এক পাশে পরিষ্কার করছিলেন সেসব টোপাপানা। বাঁধের পূর্ব পাশজুড়েই ঘাস ও লতাগুল্মের জঙ্গল। ঘাস মারার ওষুধ ছিটিয়ে বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে সেগুলো। এসব দৃশ্য হ্রদ দেখে প্রশান্তি পাওয়ার বদলে বিষণ্ন করে তুলবে যেকোনো পর্যটকের মন।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়ার আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ জলের এই হ্রদের এখন ৩ থেকে ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা টোপাপানায় ভরে গেছে। দ্রুত বেড়ে চলা এসব জলজ আগাছা মাছের বিচরণক্ষেত্র নষ্টসহ হ্রদের বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সংকুচিত হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণ এলাকা।
নৌকা–বিড়ম্বনা
ইকোপার্ক হওয়ার শর্তে সংরক্ষিত এলাকার প্রাণপ্রকৃতির ক্ষতি না করে বিনোদন ও প্রকৃতি থেকে শিক্ষার কথা বলা হলেও মহামায়া ইকোপার্কের চিত্র যেন পুরোই ভিন্ন। বন বিভাগের ইজারার শর্তে ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালানো নিষিদ্ধ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেনে চলছে না সে নিয়ম। বরং কোনো প্রকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া চলা এসব ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করা হয় বাড়তি ভাড়া।
হ্রদের কিনার জুড়ে ঘাস আর লতাগুল্মের ঝোপ। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর যটক
এছাড়াও পড়ুন:
টোপাপানায় ম্লান মহামায়া হ্রদের আকর্ষণ
মূল ফটক পেরোলেই সমান্তরাল পিচঢালা রাস্তা। পূর্ব দিকে সেটি উঠে গেছে মহামায়া হ্রদের বাঁধ পর্যন্ত। খাড়া পথ বেয়ে ওঠা ক্লান্ত পর্যটকদের মনে একসময় প্রশান্তি এনে দিত পাহাড়ঘেরা বিস্তীর্ণ মহামায়া হ্রদের টলটলে জলরাশি। মায়াবী সে দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
মহামায়া হ্রদের বড় অংশজুড়ে এখন চোখে পড়ে টোপাপানার চাদর আর চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা। বাঁধের কিনারজুড়ে ঘাস ও লতাগুল্মের ঝোপ। হ্রদে ইঞ্জিনচালিত নৌকার দৌরাত্ম্য। টিকিটেও আদায় হচ্ছে বাড়তি টাকা। সব মিলিয়ে মহামায়া ইকোপার্ক এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকেরা হতাশ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দেশের পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এ স্থান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকেরা।
মহামায়া হ্রদ ও ইকোপার্কের অবস্থান মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে। সেচ সম্প্রসারণের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মহামায়া ছড়ার ওপর বাঁধ দিলে পাহাড়ের কোলজুড়ে ১১ বর্গকিলোমিটারের মহামায়া হ্রদ তৈরি হয়। পরে বন বিভাগ এখানকার ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করে মহামায়া ইকোপার্ক। ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। গত ২২ জুলাই থেকে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ২ কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকায় ১ বছরের জন্য মহামায়া ইকোপার্কের ইজারা পেয়েছে ওয়াসিফা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহামায়া হ্রদ ও ইকোপার্ক ঘুরে দেখা যায়, শ খানেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। একদল তরুণ হ্রদের বাঁধে বসে গান করছেন। আশপাশের বেঞ্চে বসে গল্পে মেতেছেন কেউ কেউ। হ্রদের পাড়ে বাঁধা সারি সারি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর কায়াক। ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে হ্রদ ঘুরে দেখতে বেরিয়েছে দুটি দল। দুটি দলের কোনো সদস্যকেই দেখা গেল না লাইফজ্যাকেট পরতে। কিছুদূর যেতেই ইঞ্জিনচালিত নৌকার বিকট শব্দে উড়ে যেতে দেখা গেল একদল পানকৌড়িকে। হ্রদের বড় একটি অংশজুড়ে টোপাপানার ভারী আস্তরণ।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়ার আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ জলের এই হ্রদের এখন ৩ থেকে ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা টোপাপানায় ভরে গেছে। দ্রুত বেড়ে চলা এসব জলজ আগাছা মাছের বিচরণক্ষেত্র নষ্টসহ হ্রদের বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সংকুচিত হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণ এলাকা।ইজারাদারের নিয়োগ করা কয়েকজন শ্রমিক নৌকা নিয়ে এক পাশে পরিষ্কার করছিলেন সেসব টোপাপানা। বাঁধের পূর্ব পাশজুড়েই ঘাস ও লতাগুল্মের জঙ্গল। ঘাস মারার ওষুধ ছিটিয়ে বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে সেগুলো। এসব দৃশ্য হ্রদ দেখে প্রশান্তি পাওয়ার বদলে বিষণ্ন করে তুলবে যেকোনো পর্যটকের মন।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়ার আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ জলের এই হ্রদের এখন ৩ থেকে ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা টোপাপানায় ভরে গেছে। দ্রুত বেড়ে চলা এসব জলজ আগাছা মাছের বিচরণক্ষেত্র নষ্টসহ হ্রদের বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সংকুচিত হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণ এলাকা।
নৌকা–বিড়ম্বনা
ইকোপার্ক হওয়ার শর্তে সংরক্ষিত এলাকার প্রাণপ্রকৃতির ক্ষতি না করে বিনোদন ও প্রকৃতি থেকে শিক্ষার কথা বলা হলেও মহামায়া ইকোপার্কের চিত্র যেন পুরোই ভিন্ন। বন বিভাগের ইজারার শর্তে ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালানো নিষিদ্ধ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেনে চলছে না সে নিয়ম। বরং কোনো প্রকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া চলা এসব ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করা হয় বাড়তি ভাড়া।
হ্রদের কিনার জুড়ে ঘাস আর লতাগুল্মের ঝোপ। সম্প্রতি তোলা