আলফাডাঙ্গা বিএনপির নতুন কমিটিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ বলছেন দলের অনেক নেতা
Published: 25th, October 2025 GMT
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ বলছেন দলের অনেক নেতা। তাঁদের অভিযোগ, এ দুই কমিটিতে আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন নেতা স্থান পেয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও নিবেদিত নেতা-কর্মীরা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়ার যৌথ স্বাক্ষরে উপজেলা ও পৌর বিএনপির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট দুটি কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই আলফাডাঙ্গা বিএনপির মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও বিভক্তি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, কমিটিতে এমন ব্যক্তিরা আছেন, যাঁরা এখনো আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন।
বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘোষিত উপজেলা বিএনপি কমিটির ১১ নম্বর সহসভাপতি করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া আসাদুজ্জামানকে। তিনি ২০২১ সালে নৌকা প্রতীকে টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একই কমিটিতে ৫ নম্বর সহসভাপতি হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল ওহাব ওরফে পান্নু, আর ৪ নম্বর সহসভাপতি হয়েছেন উপজেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। সহসাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মনিরুজ্জামানকে, যিনি গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রহমানের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।
এ ছাড়া সহসাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন গোপালপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওহিদ শিকদার এবং সহ-সমবায়বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক মো.
সদ্য ঘোষিত বিএনপির উপজেলা কমিটিতে সহসভাপতির পদ পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওহাব ওরফে পান্নু আজ শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ১৯৯৭ সালে প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। দলীয় প্রতীক চালু করার পর গত তিনবার ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চেয়েও পাইনি। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা সুনজরে দেখেনি। সরকার পরিবর্তনের পর চেয়ারম্যান হিসেবে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। একদিন অফিস করেছি আবার সাত দিন পালায় থাকতে হয়েছে। রাতে বাড়িতে থাকতে পারিনি। জনগণের কাজ করতে পারছিলাম না। তার ওপর ছিল প্রচুর চাপ। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।’
বিএনপি নেতাদের ক্ষোভউপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান বলেন, ‘আমাকে কমিটিতে সহসভাপতি রাখা হয়েছে। তারপরও বলব, এটি সম্পূর্ণভাবে “আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি”। ঘোষিত দুই কমিটিতে অন্তত ৭৫ শতাংশ ব্যক্তি আওয়ামী লীগের পদধারী, কর্মী বা সমর্থক। যারা হামলা-মামলা, জেল-জুলুম সহ্য করেছে, তাদের কেউ জায়গা পায়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই কমিটি গঠিত হয়েছে ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে, কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নয়। আমরা কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব এবং প্রয়োজনে মানববন্ধন ও সমাবেশসহ কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
বিএনপির বিভক্ত অংশের নেতা ও নবগঠিত কমিটির তিন নম্বর সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। নিবেদিতপ্রাণ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া (স্বপন) বলেন, কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। একাধিক কর্মী সম্মেলন করে সবার মতামতের ভিত্তিতেই এ কমিটি করা হয়েছে। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন যে কোনো ব্যক্তি আওয়ামী লীগের বর্তমান পদে আছেন, তাহলে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে বাদ দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ পদধারী নেতাদের বিএনপির কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে—নিশ্চিত করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের যাঁরা বিএনপির কমিটিতে গেছেন তাঁরা কেউ হয়তো নিজে থেকে গেছেন, কেউ হয়তো জেল জুলুম এড়াতে জীবন বাঁচাতে ভয়ে গেছেন, আবার কেউ হয়তো বা স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনে সুবিধাজনক জায়গায় যাওয়ার জন্য গেছেন। তবে অন্য দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কমিটি করা রাজনৈতিক দেউলিয়াপনারই পরিচয় দেয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আলফ ড ঙ গ ব এনপ র ক র ব এনপ র কম ট ত হয় ছ ন ন কম ট ই কম ট সদস য উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরের তিন উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা
ফরিদপুরের বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গার উপজেলা ও পৌর বিএনপির ছয়টি সাংগঠনিক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে জেলা বিএনপি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ছয়টি কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিতে আছেন ১০১ জন করে।
ঘোষিত কমিটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে প্রাধান্য পেয়েছেন ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামের পক্ষের নেতারা।
ফরিদপুর-১ আসনে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই দুই নেতার নেতৃত্বে তিনটি উপজেলার বিএনপি বিভক্ত। বোয়ালমারী উপজেলা কমিটিতে শামসুদ্দিন মিয়াকে তিন নম্বর সহসভাপতি করা হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে তাঁর অনুসারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গায় সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছিল ২০১৫ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে। প্রায় এক দশক পর এবার কোনো সম্মেলন ছাড়াই জেলা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের যৌথ স্বাক্ষরে নতুন কমিটিগুলো ঘোষণা করা হয়েছে।
বোয়ালমারী উপজেলা কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে, আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহা। বোয়ালমারী পৌরসভা কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও পৌর কাউন্সিলর আবদুল কুদ্দুস শেখ এবং সাধারণ সম্পাদক উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ইমরান হোসেন।
মধুখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি করা হয়েছে পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে, আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুল আলিম মানিক। মধুখালী পৌরসভা কমিটির সভাপতি হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হায়দার আলী মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিন বিশ্বাসকে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছে যথাক্রমে আবদুল মান্নান মিয়া আব্বাস ও মো. নূরজামাল খসরু। আলফাডাঙ্গা পৌরসভা বিএনপির সভাপতি হয়েছেন মো. রবিউল হক রিপন ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মো. হাসিবুল হাসান হাসীবকে।
বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং ঘোষিত কমিটির তিন নম্বর ভাইস চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির লোকজনদের নিয়ে প্রকৃত নিবেদিতপ্রাণ বিএনপির নেতা–কর্মীদের বঞ্চিত করে একপক্ষীয় কমিটি করা হয়েছে।
তবে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে কার্যকর কমিটি করার চেষ্টা করেছি। সম্মেলন করে কমিটি হয়নি এ কথা সত্য, তবে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। একাধিকবার কর্মী সম্মেলন করে সবার মতামতের ভিত্তিতে এ কমিটি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কমিটিতে আছেন আবার তাঁদের আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির পদ রয়েছে এবং তা যদি সঠিকভাবে প্রমাণ করা যায়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে।’