মালিবাগে শম্পা জুয়েলার্স থেকে চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪, সোনা উদ্ধার
Published: 17th, October 2025 GMT
রাজধানীর মালিবাগের ফরচুন শপিং মলের শম্পা জুয়েলার্সের ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তাঁদের ঢাকাসহ দেশের একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি সূত্র জানায়, সোনা চুরির ঘটনায় সরাসরি তিনজন অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে দুজন রশি বেয়ে ভবনের ভেতরে ঢোকেন। অপরজন ভবনের নিচে মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করেন। চুরি শেষে তিনজনই পালিয়ে যান। পরে চুরি করা স্বর্ণালংকার চোরচক্রের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জড়িত চারজনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। এ চক্রের এক সদস্যের বাড়ির খড়ের গাদা থেকে দেড় শ ভরির বেশি স্বার্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যদের কাছ থেকেও সোনা ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রশিক্ষিত দুর্ধর্ষ চোরচক্রের দুজন বোরকা পরে রশি বেয়ে ফরচুন শপিং মলের তৃতীয় তলার জানালার গ্রিল ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এরপর দোতলায় শম্পা জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে শোকেসে রাখা স্বর্ণালংকার নেন। চুরি শেষে ভবনের নিচে মোটরসাইকেলে অপেক্ষমাণ ব্যক্তির সঙ্গে তাঁরা দ্রুত চলে যান।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান খুদে বার্তায় জানান, রাজধানীর ফরচুন শপিং মলে স্বর্ণের দোকানে চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এ বিষয়ে আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে শম্পা জুয়েলার্সের মালিক অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রতিদিনের মতো ৮ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে দোকান বন্ধ করে তিনি ও তাঁর কর্মচারীরা বাসায় যান। পরদিন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মার্কেটের দারোয়ানের মাধ্যমে খবর পেয়ে এসে দেখেন দোকানে কোনো স্বর্ণালংকার নেই। তাঁর দাবি, দোকানে ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল, এর মধ্যে ৪০০ ভরি দোকানের নিজস্ব স্বর্ণালংকার। আর ১০০ ভরি বন্ধকী স্বর্ণালংকার।
বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকার বেশি। এই হিসাবে চুরি হওয়া সোনার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ ঘটনায় শম্পা জুয়েলার্সের মালিক অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে রমনা মডেল থানায় একটি চুরির মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৮ অক্টোবর রাত ৯টার পর থেকে ৯ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটে।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চোরচক্রটি স্বর্ণালংকার কয়েক ভাগে ভাগ করে নেয়। কিন্তু ডিবির তৎপরতায় সেগুলো বিক্রি করার সুযোগ পায়নি। অভিযান পরিচালনাকালে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক চোরের বাড়ির উঠানের পাশের বড় খড়ের গাদা সরিয়ে মাটির নিচ থেকে একটি লাল রঙের শপিং ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ছোট ছোট পুঁটলিতে স্বর্ণালংকার মোড়ানো ছিল। এক স্থান থেকেই চুরি হওয়া বড় অংশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আরও কয়কটি স্থান থেকেও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। তবে মোট কত ভরি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে, তা জানা যায়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর স বর ণ ল ক র চ র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
মাধ্যমিকে কর্মবিরতি, বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি
চার দফা দাবিতে দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা গতকাল সোমবার লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এর ফলে ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গতকালের বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে গিয়ে ফিরে যায়।
তবে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে কর্মচারীদের পাহারায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ কর্মবিরতি পালন করছে। গতকাল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেছেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সরকারি কর্মচারী বিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাঁদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় বাসসকে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলনের নামে যা করছেন, তা সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আপনাদের কিন্তু তৈরি থাকতে হবে। এখানে সরকার একেবারে দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে।’
মাধ্যমিকে কর্মবিরতিবাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০২৪ অনুযায়ী, সারা দেশে ১৯ হাজার ১১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (সাধারণ বা জেনারেল) রয়েছে। এর মধ্যে ৬৩১টি সরকারি। মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৭৯ লাখ। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ৪ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি। সরকারি মাধ্যমিকে মোট শিক্ষক ১৩ হাজারের বেশি।
চার দফা দাবিতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে। দাবিগুলো হলো—এক. সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট প্রকাশ। দুই. বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা। তিন. সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া। এবং চার. ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দাবির বিষয়ে তাঁরা প্রথমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু দাবি না মানায় লাগাতার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন।
কর্মবিরতির কারণে বিভিন্ন বিদ্যালয় আগের দিন রোববার নোটিশ দিয়ে গতকালের পরীক্ষা স্থগিত করে। আবার শিক্ষার্থীরা গতকাল কোনো কোনো বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারে, পরীক্ষা হবে না। রাজধানীর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে পড়ুয়া এক ছাত্রের বাবা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্তান বিদ্যালয়ে গিয়েও ফিরে এসেছে। বিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, তাঁরা মৌখিকভাবে পরীক্ষা হবে না বলে জানিয়েছেন।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল আগের দিন রোববার নোটিশ দিয়ে পরীক্ষা না নেওয়ার কথা জানিয়েছে। গতকাল সকালে খুলনার সরকারি করোনেশন গার্লস হাইস্কুলের একজন শিক্ষক জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হচ্ছে না।
গতকাল সকালে খুলনা জিলা স্কুলের সামনে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সরফুদ্দিন আয়ান বলে, ‘আজ গণিত পরীক্ষা ছিল, তবে হবে না—এটা জানতাম না। এসে দেখি, পরীক্ষা হচ্ছে না।’ তার মতো খুলনার কয়েকটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা একই সমস্যায় পড়ে। তারা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর শিক্ষকদের কর্মবিরতির খবর পায়।
রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা না হওয়ার খবর পাঠিয়েছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় এ প্রতিবেদক মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান, বেশ কিছু ছাত্র রয়েছে বিদ্যালয় চত্বরে। অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্র বলল, তাদের পরীক্ষা হয়েছে। তবে পরীক্ষার হলে গার্ড দিয়েছেন কর্মচারীরা। পরে কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কর্মচারীদের দিয়ে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
তবে শিক্ষকেরা দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা হতে দেননি। বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, আদিষ্ট হয়ে বিধি মোতাবেক পরীক্ষা কার্যক্রম চলমান রেখেছেন।
সেখান থেকে পাশের মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, সেই বিদ্যালয়ে সময়সূচি অনুযায়ী গতকাল পরীক্ষা ছিল না।
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক মোহাম্মদ ওমর ফারুক গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি তাঁদের ডেকে দাবিগুলো পূরণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন। অন্যথায় তাঁদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলবে।
প্রাথমিকে একাংশের কর্মবিরতিসহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে। পরিষদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আপাতত ১১তম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় আজ ২ ডিসেম্বর পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি চলবে।
অবশ্য গতকাল সকালে ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যায়। লালবাগ শিক্ষা এলাকার একটি বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক সকালে পরীক্ষা শুরুর কথা জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে কড়া বার্তা আছে। আর সাধারণত ঢাকার বিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের কর্মসূচি সব সময়ই কম পালিত হয়।