ইউএনওকে বিভাগীয় কমিশনার, ‘এইটা তুমি জানো না, এইটা কেউই জানে না’
Published: 22nd, October 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারায় সড়ক দুর্ঘটনায় গত ২৪ আগস্ট দুজন নিহত হন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের দুজনের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এই টাকা তিনি ব্যয় করেছিলেন উপজেলা প্রশাসনের অপ্রত্যাশিত ব্যয়ের খাত থেকে। যদিও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ট্রাস্টি বোর্ড থেকে অনুদান পেতে পারেন। যার পরিমাণ ১থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
আজ বুধবার সকালে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সভায় এক সভায় বিষয়টি উঠে আসে। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেল এ সভার আয়োজন করে।
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে বা আহত হলে বিআরটিএর ট্রাস্টি বোর্ড থেকে ২০২৩ সাল থেকে এই ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেওয়া হয় ৫ লাখ টাকা। আর আহত বিবেচনায় দেওয়া হয় ১–৩ লাখ টাকা। এই টাকা দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করে প্রথম সুপারিশটি করে থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। উপজেলা পর্যায় থেকে আহত-নিহত ব্যক্তিদের তথ্য জেলা প্রশাসককে পাঠানো হবে। তারপর ট্রাস্টি বোর্ডে যাবে।
তবে বিষয়টি নিয়ে প্রচারণা না থাকায় অনেকেই জানেন না। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার ক্ষতিপূরণের বাইরে থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, ক্ষতিপূরণ চালুর পর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন মাত্র ১ দশমিক ৪২ শতাংশ ব্যক্তি। অথচ ক্ষতিপূরণের তহবিলে এখনো আড়াই শ কোটি টাকার বেশি জমা আছে।
আরও পড়ুনসড়ক দুর্ঘটনা: প্রচার নেই, ক্ষতিপূরণের সুযোগ হারাচ্ছেন অনেক ভুক্তভোগী১৫ অক্টোবর ২০২৫রাজশাহীতে নিরাপদ সড়ক দিবসের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে এই অনুদানের ব্যাপারে কথা বলেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। তিনি অনুষ্ঠান থেকেই বাগমারার ইউএনওকে ফোন করতে বলেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা ইউএনও মাহবুবুল ইসলামকে ফোন করে বিভাগীয় কমিশনারকে কথা বলতে দেন। বিভাগীয় কমিশনার মুঠোফোনে লাউডস্পিকার দিয়ে সেটি মাইক্রোফোনের সামনে ধরে কথা বলেন।
এ সময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘মাহবুবুল ইসলাম, তোমার ওইখানে মাস দুয়েক আগে যে একটা অ্যাকসিডেন্টে মা মারা গেল দুইটা বাচ্চা রেখে, সেখানে গেছিলা তুমি সেই বাড়িতে?’ ইউএনও বলেন, ‘জি স্যার।’ কমিশনার জানতে চান, ‘সেই বাচ্চাদের অবস্থা কী?’ ইউএনও বলেন, ‘বাচ্চাদের অবস্থা এখন ভালো স্যার। আর দুইজনকে স্যার ৫০ হাজার ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।’ বিভাগীয় কমিশনার জানতে চান, ‘এই টাকা তুমি কই পাইলা?’ ইউএনও জানান, উপজেলা পরিষদের অপ্রত্যাশিত ব্যয় থেকে এটা দেওয়া হয়েছে।
এরপর বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘বিআরটিএর যে এই ধরনের অনুদানের খাত রয়েছে, এটা তুমি জানো?’ এ সময় কিছুটা থেমে ইউএনও বলেন, ‘জি স্যার, এইটা জানা ছিল না আমার।’ বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘এইটা তুমি জানো না, এইটা কেউই জানে না। এখন আমরা বিআরটিএর অনুষ্ঠান থেকে তোমাকে ফোন দিছি। সমস্ত সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন। মালিক সমিতি, আমাদের বিভিন্ন ধরনের লোকজন আছে। বিআরটিএতে এই ধরনের ফান্ড (তহবিল) করা হয়েছে। যদি কেউ মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর পরিবার ৫ লাখ টাকা পাবে। কেউ আহত হলে সর্বনিম্ন ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পাবেন। অতএব তুমি ওই পরিবারকে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করার জন্য বলো। আর যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, জেলা প্রশাসনকে বলছি, সকল কেস (ঘটনা), কোনো কেস যেন বাদ না পড়ে—সবাই আবেদন করবে।’
এ সময় ওই বিভাগীয় কমিশনার সভায় উপস্থিত বাসচালক, চালকের সহকারী, শ্রমিকনেতা ও পরিবহনমালিকদের কাছে জানতে চান, তাঁরা এই অনুদানের বিষয়ে কিছু জানেন কি না। এ সময় বেশ কয়েকজন ব্যক্তি উচ্চ স্বরে বলেন, তাঁদের জানানো হয়নি।
বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ জানান, সড়ক দুর্ঘটনার এক মাসের মধ্যে অনুদানের জন্য আবেদন করতে হয়। তবে এক মাস নয়, রাজশাহীতে যেন এক বছর পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হয়, সেই নির্দেশনা দেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি বিআরটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান।
দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও ট্রাক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন য় র পর ব র অন দ ন র ব আরট এ উপজ ল আহত ব এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
পাহাড়ি ছড়া থেকে সিলিকা বালু উত্তোলন, ৭ জনের জেল-জরিমানা
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় যৌথবাহিনীর অভিযানে পাহাড়ি ছড়া থেকে অবৈধভাবে সিলিকা বালু উত্তোলনের অভিযোগে সাতজনকে কারা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ যৌথভাবে উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের বদরগাজী ও হলহলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
আরো পড়ুন:
ধামরাইয়ে অটো রাইস মিলে জরিমানা
ঝিনাইদহে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাংস বিক্রি, ২ ব্যবসায়ীকে জরিমানা
অভিযান শেষে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে চারজন কারা ও অর্থদন্ড এবং তিনজনকে শুধু অর্থদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত দেউন্দি গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন (৪০), কাঠালবাড়ির সিরাজ মিয়ার ছেলে খয়ের মিয়া (৩১), আব্দুল গনির ছেলে আবু সায়েম (৪৭) ও হলদিউড়া গ্রামের ডেঙ্গু খানের ছেলে রউফ খানকে (৪৫) ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দেন।
এছাড়া হলহলিয়া গ্রামের ইন্তাজ উল্যার ছেলে ফারুক মিয়া (৫৫), কাঁঠালবাড়ী গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে তাউজ মিয়া (৪১) এবং দেউন্দির আইয়ুব আলীর ছেলে আলী হায়দরকে (৫৮) ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন।
জানা যায়, পাহাড়ি ছড়া থেকে ড্রেজার মেশিনে দেদারসে বালু উত্তোলন চলছে। ছড়ার তলদেশ খুঁড়ে বালু তোলায় সরু ছড়াটি পরিণত হয়েছে গভীর খাদে। বছরের পর বছর অনিয়ন্ত্রিত বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে পুরো এলাকা। নিয়মিত বালু তোলায় ছড়ার দুই তীরও ভেঙে পড়ছে, তৈরি হয়েছে ঘরবাড়ি ধসের ঝুঁকি।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার কোনো পাহাড়ি ছড়ায় সিলিকা বালুর মহাল ইজারা দেওয়া হয়নি। তবুও এসব এলাকায় চলছে অবাধ বালু উত্তোলন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে একাধিক বালু লুটের চক্র। তাদের নামে কথা বললেই হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়।
ইউএনও মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “বুধবার ভোর থেকে অভিযান শুরু হয়। দীর্ঘ অভিযানে আটক সাতজনের মধ্যে চারজনকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং তিনজনকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “দণ্ডপ্রাপ্তদের বিকেলে কঠোর নিরাপত্তায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/মামুন/মেহেদী