পৃথিবীর দূরতম অঞ্চলে ছুটে গেছেন মহুয়া রওফ। আর সেই পথচলার মধ্যেই জন্ম নিয়েছে তাঁর লেখকসত্তা। তাঁর ভ্রমণগদ্য মানুষের জীবন, ইতিহাস, প্রকৃতি আর স্মৃতির ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এক আলেকরেখা। ১৪৩২ অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন এবার ভূপর্যটক ও লেখক মহুয়া রউফ।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর বেঙ্গল শিল্পালয়ে মহুয়া রউফের হাতে তুলে দেওয়া হয় অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার সম্মাননা। এই পুরস্কারের সঙ্গে আছে এক লাখ টাকা। মহুয়া রউফের লেখা ‘দখিন দুয়ার খোলা’ এবং ‘লাতিনের নাটাই’ বই দুটির জন্য তিনি এ সম্মাননা পেলেন।

অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন এই পুরস্কার প্রদান আয়োজনের শুরুতে জানান, ৩০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে দেওয়া হচ্ছে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার। ১৯৯৪ সালে যখন এই পুরস্কার প্রথম দেওয়া হয়, তখন নারীদের জন্য একক কোনো সাহিত্য পুরস্কার ছিল না। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে শুধু নারীদের জন্য সাহিত্য পুরস্কারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ দেশের নারীদের পদে পদে কাঁটা বিছানো থাকে।

তাসমিমা হোসেন বলেন, এই প্রথম অনন্যা ভ্রমণসাহিত্যকে সম্মাননা দিল। বাংলাদেশে নারী লেখকদের মধ্যে খুব কম ভ্রমণসাহিত্যিক পাওয়া যাবে। মহুয়া ভ্রমণ বিষয়ে লেখালেখির মধ্যে নতুন আঙ্গিক এনেছেন।

পুরস্কার প্রদানের জন্য মঞ্চে আহ্বান করা হয় কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসক তানজিনা হোসেন এবং কবি পিয়াস মজিদকে।

তানজিনা হোসেন বলেন, পুরুষেরা ভাবে নারীরা কখনো অভিযাত্রী হতে পারে না। অথচ নারীর চোখে ভিন্নভাবে দেখার বর্ণনা এখন ইতিহাস তৈরি করছে। অসামান্য দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এই প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করতে হয়েছে মহুয়া রউফকে। তিনি বলেন, মহুয়া রউফ শুধু ভ্রমণকাহিনি লেখেননি, লিখেছেন ভ্রমণসাহিত্য। যেখানে যুক্ত হয়েছে আরও বহু অনুষঙ্গ। তিনি মহুয়া রউফের ‘দখিন দুয়ার খোলা’ বই থেকে পাঠ করে শোনান।

কবি পিয়াস মজিদ বলেন, আরও অনেকে গেছেন অ্যান্টার্কটিকায়। কিন্তু কতজন লিখেছেন? মহুয়া রউফের বইয়ের ছত্রে ছত্রে আছে প্রাণিজগতের জন্য কান্না। বিশ্বনাগরিকের উদ্বেগ রয়েছে তাঁর লেখায়। পিয়াস মজিদের বক্তব্যে উঠে আসে ভ্রমণকাহিনির সূত্র ধরে সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রমণ পাঠের কথা। তিনি মহুয়া রউফের লেখা ‘লাতিনের নাটাই’ বই থেকে পাঠ করে শোনান।

আলোচকেরা বলেন, মহুয়া রউফ ‘দখিন দুয়ার খোলা’ বইয়ে অ্যান্টার্কটিকার দুর্গম অভিযাত্রার রোমাঞ্চকে তুলে এনেছেন নতুন দৃষ্টিতে। ‘লাতিনের নাটাই’ পাঠককে নিয়ে গেছে মায়া-ইনকা সভ্যতার বিস্ময়, নেরুদার কবিতার সুর আর লাতিন সংস্কৃতির প্রাণচাঞ্চল্যের ভেতরে।

মহুয়া রউফ নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর পথে পথে ভ্রমণ করতে গিয়ে লেখক হয়ে উঠেছি।’ দক্ষিণ এশিয়ার একজন নারীর এই বিশ্বমানবের মধ্যে অবস্থান কোথায়, সেটা বুঝতে চেয়েই ভ্রমণ নিয়ে লেখার শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। মহুয়া রউফ বলেন, ‘আমাদের এখন প্রতিটি বিভাজন হচ্ছে নারীকে কেন্দ্র করে। আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোতে শক্তি পেলেই দানবীয় হয়ে উঠতে দেখা যায়। কিন্তু প্রকৃতির কাছে গেলে মানুষ জানে, দানবীয় শক্তি পেলেও কীভাবে শক্তিহীনের মতো বিনয়ী আচরণ করতে হয়।’

১৪৩২ অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক মহুয়া রউফ জানান, তিনি কৈশোর থেকেই সুদূরের স্বপ্ন দেখেন। অ্যান্টার্কটিকা থেকে আমাজন জঙ্গল বা নিকারাগুয়ায় ভ্রমণ এবং সেসব অনুপুঙ্খ বর্ণনা পাঠকের কাছে তুলে ধরার শক্তি তিনি জগৎ পাঠের ইচ্ছা থেকেই অর্জন করেছেন বলে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মহুয়া রউফের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স হ ত য প রস ক র প রস ক র প র জন য অনন য রউফ র ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন মহুয়া রউফ

পৃথিবীর দূরতম অঞ্চলে ছুটে গেছেন মহুয়া রওফ। আর সেই পথচলার মধ্যেই জন্ম নিয়েছে তাঁর লেখকসত্তা। তাঁর ভ্রমণগদ্য মানুষের জীবন, ইতিহাস, প্রকৃতি আর স্মৃতির ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এক আলেকরেখা। ১৪৩২ অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন এবার ভূপর্যটক ও লেখক মহুয়া রউফ।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর বেঙ্গল শিল্পালয়ে মহুয়া রউফের হাতে তুলে দেওয়া হয় অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার সম্মাননা। এই পুরস্কারের সঙ্গে আছে এক লাখ টাকা। মহুয়া রউফের লেখা ‘দখিন দুয়ার খোলা’ এবং ‘লাতিনের নাটাই’ বই দুটির জন্য তিনি এ সম্মাননা পেলেন।

অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন এই পুরস্কার প্রদান আয়োজনের শুরুতে জানান, ৩০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে দেওয়া হচ্ছে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার। ১৯৯৪ সালে যখন এই পুরস্কার প্রথম দেওয়া হয়, তখন নারীদের জন্য একক কোনো সাহিত্য পুরস্কার ছিল না। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে শুধু নারীদের জন্য সাহিত্য পুরস্কারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ দেশের নারীদের পদে পদে কাঁটা বিছানো থাকে।

তাসমিমা হোসেন বলেন, এই প্রথম অনন্যা ভ্রমণসাহিত্যকে সম্মাননা দিল। বাংলাদেশে নারী লেখকদের মধ্যে খুব কম ভ্রমণসাহিত্যিক পাওয়া যাবে। মহুয়া ভ্রমণ বিষয়ে লেখালেখির মধ্যে নতুন আঙ্গিক এনেছেন।

পুরস্কার প্রদানের জন্য মঞ্চে আহ্বান করা হয় কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসক তানজিনা হোসেন এবং কবি পিয়াস মজিদকে।

তানজিনা হোসেন বলেন, পুরুষেরা ভাবে নারীরা কখনো অভিযাত্রী হতে পারে না। অথচ নারীর চোখে ভিন্নভাবে দেখার বর্ণনা এখন ইতিহাস তৈরি করছে। অসামান্য দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এই প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করতে হয়েছে মহুয়া রউফকে। তিনি বলেন, মহুয়া রউফ শুধু ভ্রমণকাহিনি লেখেননি, লিখেছেন ভ্রমণসাহিত্য। যেখানে যুক্ত হয়েছে আরও বহু অনুষঙ্গ। তিনি মহুয়া রউফের ‘দখিন দুয়ার খোলা’ বই থেকে পাঠ করে শোনান।

কবি পিয়াস মজিদ বলেন, আরও অনেকে গেছেন অ্যান্টার্কটিকায়। কিন্তু কতজন লিখেছেন? মহুয়া রউফের বইয়ের ছত্রে ছত্রে আছে প্রাণিজগতের জন্য কান্না। বিশ্বনাগরিকের উদ্বেগ রয়েছে তাঁর লেখায়। পিয়াস মজিদের বক্তব্যে উঠে আসে ভ্রমণকাহিনির সূত্র ধরে সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রমণ পাঠের কথা। তিনি মহুয়া রউফের লেখা ‘লাতিনের নাটাই’ বই থেকে পাঠ করে শোনান।

আলোচকেরা বলেন, মহুয়া রউফ ‘দখিন দুয়ার খোলা’ বইয়ে অ্যান্টার্কটিকার দুর্গম অভিযাত্রার রোমাঞ্চকে তুলে এনেছেন নতুন দৃষ্টিতে। ‘লাতিনের নাটাই’ পাঠককে নিয়ে গেছে মায়া-ইনকা সভ্যতার বিস্ময়, নেরুদার কবিতার সুর আর লাতিন সংস্কৃতির প্রাণচাঞ্চল্যের ভেতরে।

মহুয়া রউফ নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর পথে পথে ভ্রমণ করতে গিয়ে লেখক হয়ে উঠেছি।’ দক্ষিণ এশিয়ার একজন নারীর এই বিশ্বমানবের মধ্যে অবস্থান কোথায়, সেটা বুঝতে চেয়েই ভ্রমণ নিয়ে লেখার শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। মহুয়া রউফ বলেন, ‘আমাদের এখন প্রতিটি বিভাজন হচ্ছে নারীকে কেন্দ্র করে। আমাদের রাষ্ট্রকাঠামোতে শক্তি পেলেই দানবীয় হয়ে উঠতে দেখা যায়। কিন্তু প্রকৃতির কাছে গেলে মানুষ জানে, দানবীয় শক্তি পেলেও কীভাবে শক্তিহীনের মতো বিনয়ী আচরণ করতে হয়।’

১৪৩২ অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক মহুয়া রউফ জানান, তিনি কৈশোর থেকেই সুদূরের স্বপ্ন দেখেন। অ্যান্টার্কটিকা থেকে আমাজন জঙ্গল বা নিকারাগুয়ায় ভ্রমণ এবং সেসব অনুপুঙ্খ বর্ণনা পাঠকের কাছে তুলে ধরার শক্তি তিনি জগৎ পাঠের ইচ্ছা থেকেই অর্জন করেছেন বলে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মহুয়া রউফের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ