পালাকার ও বয়াতি মহারাজ আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার এবং মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন কবি–চিন্তক ফরহাদ মজহার। ভবিষ্যতে বাউলদের নিয়ে মানিকগঞ্জেই সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

আবুল সরকারের মুক্তির দাবি এবং মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এ ঘোষণা দেন ফরহাদ মজহার। সাধুগুরুভক্ত ও ওলি-আওলিয়া আশেকান পরিষদের ডাকে এই সমাবেশ হয়।

সমাবেশে যোগ দিয়ে বাউল-ফকির, সাধুসন্তদের পরবর্তী মহাসম্মেলন মানিকগঞ্জে করার ঘোষণা দিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘মানিকগঞ্জে যাঁরা এই নিরীহ বাউলদের পেটাচ্ছেন, আমি থাকব, আমাকে পেটাবেন, আমি পিটুনি খাব। আমরা প্রতিহিংসা করি না। কিন্তু আপনাদের একটা শিক্ষা দিয়ে যাব।’

ঘিওরের এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর গতকাল রোববার তাঁর অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাঁদের ওপর হামলা চালায়।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনারা যেটাকে ইসলামের নামে চালাচ্ছেন, এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নাই। আপনি নিজে মনে করেন ঠিক, এটাই মনে করতেছেন কোরআনে আছে, এটাই ভাবতেছেন হাদিসে আছে। এগুলা নাই।’

সহিংসতা ইসলামের পথ নয় মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘যারা নিরীহ মানুষের ওপর জুলুম করে, সহিংসতা করে, তারা কখনোই রসুলের উম্মত হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারে না। ফলে আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ করব, আজ যেভাবে আমাদের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট ধারা হামলা করছে, আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমাদের সঙ্গে এই লড়াইটা চালিয়ে যান।’

রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে বিশৃঙ্খল করার চেষ্টাকারীদের হুঁশিয়ার করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বাংলাদেশকে আরও গভীর গহ্বরে ফেলার জন্য চক্রান্ত করছেন, আপনারা সাবধান হয়ে যান। চক্রান্ত চিরদিন লুক্কায়িত থাকে না।’

আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকার কারাগারে২১ নভেম্বর ২০২৫

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এনসিপি থেকে শুরু করে বিএনপি এবং জামায়াত—আপনাদের বলব, আপনারা ভোটের জন্য যদি অন্যায়ের বিরোধিতা না করেন, আপনারা যদি জালিমের পক্ষে থাকেন, আপনারা ভাববেন না যে এ দেশের জনগণ জালিমের সহযোগীদের ভোট দিয়ে পরবর্তী সময়ে নির্বাচনে আনবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই। আজকে এই ফকির, বয়াতি, সাধুসন্ত—এই মজলুমের পক্ষে যদি আপনারা না দাঁড়ান, আপনাদের আল্লাহ যেমন ক্ষমা করবেন না, এ দেশের মানুষও আপনাদের ক্ষমা করবে না।’

পালাকার আবুল সরকারের স্ত্রী আলেয়া বেগম। আজ সোমবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ আপন দ র আপন র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির অঙ্গীকার খুব পরিষ্কার, স্বাধীন গণমাধ্যম তৈরি করতে চাই: মির্জা ফখরুল

বিএনপি স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে ও তৈরি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিটমেন্ট খুব পরিষ্কার। আপনারা দেখেছেন যে আমরা ৩১ দফায় খুব পরিষ্কার করেই বলেছি যে আমরা একটা স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে চাই এবং আমরা সেটাকে তৈরি করতে চাই।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশন করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। ইতিমধ্যে সেই কমিশন করা হয়েছে। তবে কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি হলেও সেটি নিয়ে পরবর্তীকালে কোনো আলোচনা হয়নি।

বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, সরকার পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণের মাধ্যমে পাই, তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে এটাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখব বলে বিশ্বাস করি।’

ফখরুল বলেন, সংস্কার যদি হৃদয়ে ধারণ না করা হয়, মনের মধ্যে না নেওয়া হয়, পরিবর্তন করতে না চাওয়া হয়, তাহলে কতটুকু সংস্কার করা সম্ভব হবে, সেটি জানা নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। চারটি পত্রিকা ছিল যেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলেছে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে একটা মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদপত্রের ব্যবস্থা করেছেন। পরবর্তীকালে বিএনপি যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসেছে, তখনই গণমাধ্যমকে উন্নত বা উপযোগী করে তোলার জন্য অনেক ব্যবস্থা নিয়েছিল।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সাংবাদিকদের অনেকগুলো ইউনিয়ন আছে। আবার দুই দলের দুই ভাগ–তিন ভাগ আছে। তারা নিজেরাই দলীয় হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো কাউকে পকেটে নিতে চায় না। কিন্তু তারা যদি পকেটে ঢুকে যায়, সেটা বড় সমস্যা।

গত ১৫ বছর অনেক সাংবাদিক নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিকদেরও অঙ্গীকারের প্রয়োজন আছে, তাঁরা সেই জায়গা থেকে নিজেরা বাইরে থাকবেন এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা করবেন।

বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদস্যসচিব ইলিয়াস হোসেন। মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।

মত‌বি‌নিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ক‌রেন বি‌জে‌সির নির্বাহী মিলটন আনোয়ার। বি‌জে‌সির ট্রাস্টিদের ম‌ধ্যে আলোচনায় অংশ নেন তালাত মামুন ও ফা‌হিম আহ‌মেদ। অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন।

বিজেসির আট দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—সম্প্রচারমাধ্যমের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন, একটি স্বাধীন জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন, টিভি চ্যানেলগুলোকে পে-চ্যানেল ঘোষণা করা ও সম্প্রচারমাধ্যমকে শিল্প ঘোষণা এবং সম্প্রচার সাংবাদিকদের জন্য জবাবদিহিমূলক ‘কোড অব এথিকস’ প্রণয়ন; টিভি লাইসেন্স নীতিমালা ও মালিকানার ধরন নির্ধারণ, পরিচালনা পর্ষদে কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মতো কাঠামোগত সংস্কার, স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কর্তৃপক্ষ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সাংবাদিকতার নীতিমালার প্রণয়ন ইত্যাদি।

গণমাধ্যম কমিশনের সুপারিশ ও সাংবাদিকদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তায় পড়ে আছে বলে উদ্বেগও জানিয়েছে বিজেসি।

এই সুপারিশগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরবে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেবে বলে প্রত্যাশা করে বিজেসি।

অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা ছাড়াও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং গণমাধ্যমের উন্নয়নে কাজ করা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ