খুলনা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নয় নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের এ সকল নেতাকে আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ময়মনসিংহে পুলিশ বক্সের সামনে যুবদলকর্মীকে হত্যা

ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না: আমান উল্লাহ

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়া নেতারা হলেন, খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শেখ ইকবাল হোসেন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মহাবুব কায়সার, সদর থানা বিএনপির সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাজেদা খাতুন, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক শেখ মুসফিকুর হাসান অভি, ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন এবং সুন্দরবন আদর্শ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন নান্নু।

এ ছাড়া খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার চালনা পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মোজাফ্ফর হোসেন শেখ, বটিয়াঘাটা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম খান জনি এবং কয়রা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুর রশিদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তবে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত অপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২৬ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে ভুলবশত মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব হাসান পিয়ারুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়, যা স্থগিত করা হলো।
 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র স ব ক দল র স

এছাড়াও পড়ুন:

নারীর দাবি কেন সবার দাবি হয়ে ওঠে না

বাংলাদেশে নারীর সংখ্যা বেড়েছে। দেশের সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী।

তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, নারী সংখ্যাগরিষ্ঠের এই দেশে অন্যান্য বিষয়ে তো বটেই, এমনকি নারীর একান্ত নিজস্ব বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেন পুরুষেরা।

এই যেমন তাঁরা কী কাজ করবেন, কোথায় যাবেন, কার সঙ্গে যাবেন, কী পোশাক পরবেন, কীভাবে চলাফেরা করবেন, কী কথা বলবেন, কার সঙ্গে কথা বলবেন ইত্যাদি।

এ ক্ষেত্রে সংখ্যা কোনো বিষয় নয়। নারীরা সংখ্যায় লঘিষ্ঠ হোন কিংবা গরিষ্ঠ, ফলাফল কিন্তু একই। যেকোনো বাস্তবতাতেই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নারী মুখ্য নন, গৌণ।

কারণ, নারীদের উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়টি সংখ্যার সঙ্গে যুক্ত নয়; যুক্ত ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে।

আরও পড়ুনসংসদে নারী আসনব্যবস্থা সংস্কারের এখনই সময়১৩ জুলাই ২০২৫

সারা বিশ্বেই নারীর ওপর পুরুষের চাপানো সিদ্ধান্তের এই সংস্কৃতি অনেক পুরোনো। বাংলাদেশেও এই সংস্কৃতি বিদ্যমান ও প্রকটভাবেই বিদ্যমান।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাপ্রবাহে নারীকে নিয়ন্ত্রিত করার কিংবা নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রবণতার যে উপর্যুপরি বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে বাড়াচ্ছে আশঙ্কা।

প্রশ্ন উঠছে, সামনের দিনগুলোয় নারীরা পারবেন তো স্বাধীনভাবে পথ চলতে, সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা নিজের মতামত নির্ভয়ে প্রকাশ করতে?

এই অনুভূতির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে অন্য একটি উপলব্ধি। আর সেটি হলো, নারীরা সংখ্যায় বেড়েছেন, শিক্ষায় এগিয়েছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু নারী ও পুরুষের মধ্যকার টানাপোড়েন কমেনি একটুও।

আরও পড়ুননারী–পুরুষের সমতা: আসিয়ান থেকে যা শিখতে পারেন আমাদের তরুণেরা১৩ নভেম্বর ২০২৫

কষ্ট হয়, যখন নারীর অধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুতে পুরুষের নীরবতার সাক্ষী হতে হয়। নারীর বিরুদ্ধে নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্তের আলোচনা-সমালোচনা কেন জানি কেবল নারীর ইস্যু হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে এবং তা মোকাবিলা করার দায়ভারও বর্তায় নারীর কাঁধে।

নারীর ইস্যু কেন জানি না পুরুষের ইস্যু হয়ে ওঠে না। অথচ একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, নারীর বিপক্ষে নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত শুধু নারীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে না; বরং তা পুরুষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বিপরীত দিক থেকেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু নারী অধিকার ইস্যুতে আওয়াজ তোলেন কিংবা কথা বলেন—এমন পুরুষের সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোনা।

সম্প্রতি নারীদের কর্মঘণ্টা আট থেকে কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি আবারও তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্য কর্মঘণ্টা কমানোর বিষয়টি বিবেচনা না করে বলা হয়নি। নারীরা ঘরে সময় দিলে, সরকার সেসব নারীকে সম্মানিত করবে।’

বলার অপেক্ষা রাখে না, তাঁর এই বক্তব্য কর্মজীবী নারীদের জন্য এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের জন্য অশনিসংকেত।

নারীদের কর্মঘণ্টা নিয়ে আলোচনার পেছনে রাজনীতি কী সেই বিষয়ে বিস্তর লেখালেখি ও আলাপ-আলোচনা হয়েছে।

তাই সেসব বিষয়ে এখানে আর নতুন করে বলতে চাই না। কিন্তু যা আমাকে বিস্মিত করেছে, তা হলো, তাঁর বক্তব্য নারীদের যেভাবে প্রতিবাদী করেছে, পুরুষদের সেভাবে করেনি।

মনে হয়েছে, মন্তব্যটি যেহেতু নারীদের নিয়ে, তাই প্রতিবাদ জানানোর দায়িত্বও যেন শুধুই নারীর।

আরও পড়ুনজাতীয় নির্বাচন ও নারী: ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়নে ফারাক কি ঘুচবে২৬ নভেম্বর ২০২৫

ফেসবুকে চোখে পড়েছে সারা জীবন মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেছেন এমন একজন সুপরিচিত পুরুষ নারীদের উদ্দেশে লিখেছেন ‘নারীরা জেগে উঠুন, আপনাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন।’ অথচ তাঁর এই আহ্বান হতে পারত নারী-পুরুষ সবার উদ্দেশ্যে।

এ ধরনের অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম নয়। নারীর প্রতি যেকোনো সহিংসতা কিংবা বৈষম্যমূলক বিষয় সামনে এলেই কিছু পুরুষ নিজেরা নিরাপদে থেকে বারবার নারীকে প্রতিবাদের জন্য উসকে দেন।

আবার কেউ আছেন, যাঁরা নারীর নির্যাতন কিংবা নারীর অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রতিবাদের জন্য কেবলই খুঁজতে থাকেন নারীবাদীদের।

‘নারীবাদ’ কিংবা ‘নারীবাদী’ শব্দগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলেও তাঁরা তাঁদের গালমন্দ করতে ছাড়েন না। তাঁদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় নারীবাদীদের একমাত্র কাজ এ ধরনের যেকোনো ঘটনায় রাস্তায় নেমে আসা।

অথচ যেকোনো নির্যাতনের কিংবা অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে ‘নারীবাদী’ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

এই দায়িত্ব নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের। প্রতিবাদ জানাতে কোনো লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় না কোনো নির্দিষ্ট পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কিংবা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্বাস কিংবা আদর্শের চর্চার।

ওড়না, পোশাক, কপালের টিপের মতো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় থেকে শুরু করে নারীকে ধর্ষণ কিংবা হত্যার মতো গুরুতর অপরাধসহ প্রায় প্রতিটি বিষয়ে বিপুল সংখ্যায় বারবার সোচ্চার হয়েছেন নারী।

এ ধরনের আন্দোলনে নারী কদাচিৎই পুরুষকে পাশে পেয়েছেন।

পুরুষ কী একবারও ভেবে দেখেছেন শ্রমের এই ক্ষেত্র থেকে যদি নারীকে দূরে রাখা হয়, তাহলে পুরুষের কাঁধে কী পরিমাণ বোঝা আরোপিত হবে সামনের দিনগুলোয়? পুরুষ কী সেই বোঝা বইতে প্রস্তুত?

আজ যখন সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব কিংবা আসন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে, তখনো সচেতন পুরুষদের শক্তভাবে বলতে শুনিনি, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী ভোটারের এই দেশে সংসদে নারীর আসনসংখ্যা কেন পুরুষ দ্বারা নির্ধারিত হবে?’

নারীর অধিকার, নিরাপত্তা, কিংবা নারীর স্বাধীনতার দাবি কখনো পুরুষের দাবিতে পরিণত হয়নি বা হয় না।

অথচ নারীর গর্ভ থেকে প্রতিটি পুরুষের জাগতিক যাত্রার সূচনা, নারীর কোলে নিরাপদ আশ্রয়ে পুরুষের বেড়ে ওঠা ও বিশ্বের সঙ্গে পরিচিতি।

দেশে মোট শ্রমশক্তির ৪৪ শতাংশই নারী। আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় আড়াই কোটি কর্মজীবী নারীর দেশ এই বাংলাদেশ।

পুরুষ কী একবারও ভেবে দেখেছেন শ্রমের এই ক্ষেত্র থেকে যদি নারীকে দূরে রাখা হয়, তাহলে পুরুষের কাঁধে কী পরিমাণ বোঝা আরোপিত হবে সামনের দিনগুলোয়? পুরুষ কী সেই বোঝা বইতে প্রস্তুত?

তাই পুরুষদের বাঁচতে হলে বাঁচাতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সম–অধিকার ও অংশগ্রহণ। কর্মক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ইতিবাচক ও সম–অংশগ্রহণেই আসবে সাফল্য, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন।

আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব একমাত্র তখন, যখন নারীর ইস্যু সবার ইস্যু হয়ে উঠবে।

নিশাত সুলতানা লেখক ও উন্নয়নকর্মী

ই–মেইল: [email protected]

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ