নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্পের চিঠি
Published: 13th, November 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগগুলো রাজনৈতিক ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ‘অন্যায্য’ বলে সমালোচনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক মাস পর গতকাল বুধবার ট্রাম্প এ চিঠি পাঠান। তবে গাজায় নিয়মিত ইসরায়েলি হামলা এবং ত্রাণ প্রবেশে বাধার কারণে যুদ্ধবিরতি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
আইজ্যাক হারজগের কাছে পাঠানো চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজা যুদ্ধে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন। যদিও যুদ্ধে অন্তত ২০ হাজার শিশুসহ ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকেরা এটিকে ‘জাতিহত্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পুরোপুরি ক্ষমা করে দিতে আমি আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি যুদ্ধের সময় শক্তিশালী ও দৃঢ়চেতা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসরায়েলকে এখন শান্তির পথে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি।’
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নেতানিয়াহুসহ মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করছেন, যাতে আরও অনেক দেশ ঐতিহাসিক আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেয়।
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি পাঠানোর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প দেশটির স্থানীয় রাজনীতিতে নিজেকে আরও বেশি জড়ালেন। যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ায় তিনি নেতানিয়াহুকে পুরস্কৃত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।গতকাল ইসরায়েলের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম ট্রাম্পের ওই চিঠির ছবি প্রকাশ করেছে।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি পাঠানোর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প দেশটির স্থানীয় রাজনীতিতে নিজেকে আরও বেশি জড়ালেন। যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ায় তিনি নেতানিয়াহুকে পুরস্কৃত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।
নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দেওয়ার এ আহ্বান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দক্ষিণপন্থী নেতাদের প্রতি ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান সমর্থনের দিকেও ইঙ্গিত করছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে এমনই এক নেতা হাভিয়ের মিলেইয়ের নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষায় চার হাজার কোটি ডলার ঋণসহায়তা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
চিঠিতে ট্রাম্প আবারও সেই ভ্রান্ত ধারণা পুনরাবৃত্তি করেছেন যে তিনি নাকি এ অঞ্চলে ‘কমপক্ষে তিন হাজার বছরের জন্য’ শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইসরায়েলের জন্ম ১৯৪৮ সালে। আর ফিলিস্তিন দখলের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত জায়নবাদী আন্দোলনের সূচনা ১৮০০ সালের শেষ দিকে।
গত মাসে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে কথা বলার সময়ও ট্রাম্প নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগগুলো প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে তিনি ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেছেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আইজ্যাক, আমাদের মধ্যে একটি দারুণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ ও গর্বিত। জানুয়ারিতে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরই আমরা একমত হয়েছিলাম যে আমাদের মূল লক্ষ্য হবে জিম্মিদের মুক্তি ও শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করা। এখন যেহেতু আমরা এ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি এবং হামাসকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি; সময় এসেছে নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে এ আইনি লড়াই শেষ ও ইসরায়েলকে ঐক্যবদ্ধ করার।’
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। তবে তাঁর হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমার ক্ষমতা আছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর বিচারপ্রক্রিয়া চলমান থাকায় রায় না হওয়া পর্যন্ত হারজগের পক্ষে নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুননিজের দুর্নীতির বিচার বন্ধে গাজা যুদ্ধকে কাজে লাগাচ্ছেন নেতানিয়াহু: ইসরায়েলি আইনপ্রণেতাদের অভিযোগ৩০ জুন ২০২৫হারজগের দপ্তর ট্রাম্পের চিঠির জবাবে এক বিবৃতিতে জানায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি হারজগ গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করেন। পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতি তাঁর অক্লান্ত সমর্থন, জিম্মিদের ফেরাতে তাঁর অবদান এবং মধ্যপ্রাচ্য ও গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তবে বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, ক্ষমা পেতে নেতানিয়াহুকে নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করতে হবে।
আরও পড়ুননেতানিয়াহুর মতো ‘মহান নায়ককে’ ক্ষমা করে দেওয়া উচিত: ট্রাম্প২৬ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প র আহ ব ন কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আমিনবাজারে পুলিশের চেকপোস্ট, যানচলাচল স্বাভাবিক
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশপথ আমিনবাজারে চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে ঢাকা জেলা পুলিশের এই তল্লাশি কার্যক্রম চলতে দেখা যায়। এর আগে, গতকাল বুধবারও দিনব্যাপী এ তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচি ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে এই চেকপোস্ট বসানো হয়।
সকাল থেকে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতো সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত পরিবহনও চলছে স্বাভাবিকভাবেই। যদিও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহন কম দেখা যায়।
সরেজমিনে আমিনবাজারে পরিচালিত পুলিশের চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী বিভিন্ন গণপরিবহন, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ সড়কে চলাচলকারী পথচারীদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগসহ মালপত্র তল্লাশি করছে পুলিশ। এসময় যাত্রীদের গন্তব্য এবং কোথা থেকে এসেছেন সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হচ্ছে।
গতকাল চেকপোস্টের প্রথম দিনের তল্লাশিতে যাত্রীদের মুঠোফোন ও মুঠোফোনের গ্যালারি চেক করতে দেখা গেলেও আজ এমন কিছু লক্ষ্য করা যায়নি।
চেকপোস্ট পরিচালনায় থাকা সাভার মডেল থানার আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল আলম বলেন, “আমাদের চেকপোস্ট কার্যক্রম চলমান আছে। কেউ যেন কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কিংবা কোনো নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সেই লক্ষ্যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।”
তবে এখন পর্যন্ত চেকপোস্ট থেকে সন্দেহভাজন কেউ আটক বা গ্রেপ্তার নেই বলেও জানান তিনি।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের অংশ হিসেবে গত কয়েকদিন ধরে আমাদের পিকেট ডিউটিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা কিংবা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”
ঢাকা/সাব্বির/এস