সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় সুন্দরবনসংলগ্ন কুলতলী এলাকা থেকে ১৮ বস্তা শামুক ও ঝিনুক উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এসব শামুক ও ঝিনুক উদ্ধার করা হয়। এগুলোর ওজন প্রায় ৮৬০ কেজি।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুন্দরবনসংলগ্ন নদীতে এসব শামুক-ঝিনুক অবমুক্ত করেছে বন বিভাগ। কর্মকর্তারা বলছেন, বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শামুক ও ঝিনুক অপরিহার্য।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল রাত ১২টায় মুন্সিগঞ্জ টহল ফাঁড়ির একটি দল কুলতলী এলাকায় অভিযান চালান। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ১৮টি বড় বস্তা উদ্ধার করেন। বস্তাগুলোতে ছিল শামুক ও ঝিনুক। বস্তাগুলোর ওজন প্রায় ৮৬০ কেজি। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উদ্ধার করা এসব শামুক ও ঝিনুক সুন্দরবনের খোলপেটুয়া নদীতে অবমুক্ত করা হয়। অবমুক্তকরণের সময় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুল হক, মুন্সিগঞ্জ টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডেপুটি রেঞ্জার নির্মল কুমার ও ফরেস্টার জিয়াউর রহমান।

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, শামুক ও ঝিনুক সুন্দরবনের খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অবৈধভাবে এগুলো সংগ্রহ করা হলে নদী ও জলজ প্রাণীর ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। তাই যেখানেই তথ্য পাচ্ছি, সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালানো হচ্ছে।

মুন্সিগঞ্জ এলাকায় প্রায়ই এ ধরনের শামুক ও ঝিনুক পাচারের চেষ্টা হয় বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, বেশির ভাগ সময় সংগ্রহকারী ব্যক্তিরা পুলিশ ও বন বিভাগের টহল দেখে মালামাল ফেলে পালিয়ে যান।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার কতিপয় ব্যক্তি নদী-খাল থেকে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। এগুলো পরে খাদ্য ও বিভিন্ন কারুশিল্প তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বন বিভাগ বলছে, এ ধরনের অপরাধ দমন করতে টহল আরও বাড়ানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত বন ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনে হরিণ শিকার রোধে টানা অভিযান, তিন দিনে সাড়ে ৯ হাজার ফুট ফাঁদ উদ্ধার

মোংলার সুন্দরবনসংলগ্ন পশুর নদের তীরের কানাইনগর এলাকা। চারদিকে নোনা হাওয়া আর নদীর গন্ধে ভরা নীরবতা। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সেই নীরবতা ভাঙে কোস্ট গার্ড ও পুলিশের যৌথ অভিযানে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে স্থানীয় একটি ঝুপড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ কেজি হরিণের মাংস, দুটি মাথা, আটটি পা ও আড়াই হাজার মিটার লম্বা ফাঁদ। ঘটনাস্থল থেকেই একজন শিকারিকে আটক করা হয়।

সুন্দরবনের বিভিন্ন টহলফাঁড়ি এলাকায় টানা অভিযান চলছে। গত তিন দিনে উদ্ধার করা হয়েছে ৯ হাজার ৪১০ ফুট ফাঁদ।

এ বিষয়ে কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম–উল–হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আটক শিকারির সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী শিকারের নানা আলামত। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান চলবে।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার বন বিভাগের চরপুটিয়া টহলফাঁড়ির বনরক্ষীদের টহলে গহিন জঙ্গলের চরের খাল এলাকা থেকে উদ্ধার হয় ৮০০ ফুট লম্বা হরিণ শিকারের পেতে রাখা ফাঁদ। একই দিনে হুলার ভারানী ও সূর্যমুখী খালসংলগ্ন বনাঞ্চলে হেঁটে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় আরও ১৩৫ ফুট লম্বা ফাঁদ।

এর আগের দিন মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরপুটিয়া ফাঁড়ির টহলে উদ্ধার হয় আরও দুটি ফাঁদ—একটি ৫০০ ফুট লম্বা, আরেকটি বস্তায় ভরা অবস্থায়। একই দিনে শেলার চর এলাকার ভাঙ্গার খাল থেকে উদ্ধার করা হয় ৩০০ ফুট লম্বা ফাঁদ।

আরও পড়ুনসুন্দরবনের খালে নৌকায় ‘হিমায়িত’ ৪৮ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার১৪ অক্টোবর ২০২৫

সোমবার শেলার চর টহলফাঁড়ির বনরক্ষীরা আদানি–গুড়গুড়ি বনাঞ্চলে টহলের সময় কেওড়া ও গরানগাছের মাঝখানে মালা ফাঁদ দেখতে পান। প্রায় ২০০ ফুট লম্বা এসব ফাঁদ জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। একই দিনে জোংড়া টহলফাঁড়ির বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার হয় আরও ২৫০ ফুট ফাঁদ। তার আগের দিন ২৩ নভেম্বর মুচিরদোয়ানি খালের পাশের বনাঞ্চল থেকে ১৫০ মিটার ফাঁদ উদ্ধার করে বন বিভাগ।

স্থানীয় গ্রামবাসী ও শিকারি হিসেবে পূর্বে দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবনের যেখানে কেওড়াগাছ বেশি, সেসব এলাকায় হরিণ চলাচল তুলনামূলক বেশি। শিকারিরা দড়ি দিয়ে ‘ডোয়া’ নামে লম্বা ফাঁদ তৈরি করে হরিণের চলার পথে রাখে। এতে চলাফেরার সময় হরিণ আটকা পড়ে। ‘ছিটকে ফাঁদ’ নামে আরেক ধরনের ফাঁদে ধরা পড়ে হরিণ। শিকারিরা সাধারণত দড়ির বোঝা নিয়ে বনে ঢোকে এবং ভেতরেই ফাঁদ তৈরি করে। পরে এসব ফাঁদ বস্তায় ভরে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা হয়, বারবার ব্যবহারের জন্য।

আরও পড়ুনসুন্দরবনে ফাঁদে আটকে ছটফট করছিল প্রাণীটি১৯ অক্টোবর ২০২৫

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এখন ‘প্যারালাল লাইন সার্চিং’ পদ্ধতিতে সারিবদ্ধভাবে বনের ভেতর হেঁটে টহল দেওয়া হয়, যাতে চিরুনির মতো অগ্রসর হয়ে ফাঁদ দ্রুত শনাক্ত করা যায়। বাঘ–কুমিরের ঝুঁকি থাকলেও নিয়মিত কাউন্ট ও কথা বলতে বলতে বনের ভেতর দিয়ে এগোলে নিরাপত্তা থাকে। তিনি বলেন, ‘হরিণকে বাঁচাতেই হবে, না হলে বাঘও বাঁচবে না। হেঁটে টহল দেওয়ায় অনেক ফাঁদ আগেই শনাক্ত হচ্ছে, এতে বহু হরিণ রক্ষা পাচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে হরিণ শিকার রোধে টানা অভিযান, তিন দিনে সাড়ে ৯ হাজার ফুট ফাঁদ উদ্ধার