প্যান ইন্ডিয়ান দাবি করা ‘দরদ’ ভারতে মুক্তিই পেল না, আসছে ওটিটিতে
Published: 15th, January 2025 GMT
‘দরদ’ সিনেমার শুটিং শুরুর সময় নির্মাতা অনন্য মামুন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে একই দিনে হিন্দি, তেলুগুসহ পাঁচটি ভাষায় ভারতে মুক্তি পাবে ‘দরদ’। ফলে সিনেমাটিকে প্যান ইন্ডিয়ান ছবি দাবী করেছিলেন তিনি। সিনেমাটিতে নায়ক ছিলেন শাকিব খান। প্যান ইন্ডিয়ান দাবিতে নায়কেরও মৌন সম্মতি ছিল,সন্তুষ্টি চিত্তে মেনেও নিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু বাস্তবে প্যান ইন্ডিয়ান কেবল পরিচালকের দাবি করার মধ্যেই আটকে থেকেছে। বাস্তবে কোনো রুপ পায়নি। মুক্তির সময় কথা ও কাজের মিল দেখা যায়নি। গত বছরের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশে মুক্তি পেলেও ভারতে উপেক্ষিতই ‘দরদ’।
যদিও বাংলাদেশে মুক্তির সময় সাংবাদিকদের কাছে ভারতে মুক্তি এ প্রসঙ্গ নির্মাতা বলেছিলেন, বাংলাদেশে মুক্তির দুই সপ্তাহ পরে দরদ ভারতে মুক্তি পাবে। এর কারণ মূলত পাইরেসি। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় বাংলা, হিন্দি ও তামিলে দরদ মুক্তি পেয়েছে। কেবল একটা দেশেই মুক্তি পায়নি এটা বড় কোনো বিষয় নয়।
সেই দুই সপ্তাহ গিয়েছে কবেই ভারতে আর মুক্তি পায়নি। ফলে দরদের দরদের বেলায় প্যান ইন্ডিয়ান মুভি হয়ে ওঠা আর সম্ভব হয়নি!
প্যান ইন্ডিয়ান অর্থ:
‘প্যান-ইন্ডিয়ান ফিল্ম’ শব্দটি এমন একটি চলচ্চিত্রের জন্য ব্যবহৃত হয় যা একই সাথে সারা ভারত জুড়ে একাধিক ভাষায় বাজারজাত করা হয় এবং মুক্তি পায় - তেলেগু , হিন্দি , তামিল , কন্নড় এবং মালায়ালাম । এই ধরনের চলচ্চিত্র ভাষাগত, সামাজিক, আঞ্চলিক এবং সাংস্কৃতিক বাধা অতিক্রম করে ভারতের সব প্রদেশের সকল দর্শকদের কাছে পৌছানের চেষ্টা করে।
দরদ কি প্যান ইন্ডিয়ান?
যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, কানাডাসহ প্রায় ২০ দেশে দরদ মুক্তি পেলেও ভারতে এখনো মুক্তি পায়নি দরদ। এবার জানা গেল, ভারতে মুক্তির আগেই ওটিটিতে দেখা যাবে সিনেমাটি। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিন তাদের ফেসবুক পেজে সিনেমার পোস্টার শেয়ার করে দরদ মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তার মানে আদৌ দরদ ভারতে মুক্তি পাবে কি না, তা নিয়ে আছে সংশয়। পাকিস্তানেও দরদ মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেখানকার একটি পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা দরদের প্রিভিউ কপি দেখার পর সিনেমাটি পাকিস্তানে মুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন বলেও জানা গেছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
একাত্তরের চিঠি: প্রাপক বনলতা সেন
ক্রন্দসী এখন বাংলা। বনলতা, বহুদিন আজ
আমাদের যোগাযোগ নেই। এখনো হাঁটছি আমি
ইতিহাস অন্ধকারে হাজার বছর। শ্যামভূমে
দিনের গভীরে দিন, রাতের আড়ালে রাত। তুমি
শুধু নও শূন্য—কবিতার খাতাও এখন। ভাগ্যে
যদি এই চিঠি পৌঁছে যায় ঠিকানায়, জেনো আজও
একজন বেঁচে আছে—লিখি বেঁচে আছে সে কীভাবে।
এখন সূর্যের আলো পোড়া কাঠ অঙ্গারের কষ—
আমি যে বাংলার কবি আমি এই কষ চেটে খাই
শব্দের বদলে আজ—ছন্দের বদলে আমি এই
কষ টেনে টেনে খাই; ইদানীং ইতিহাস এই।
আকাশের মহাশূন্যতায় এখন কবর খুঁড়ি;
বাংলার মাটিতে আজ মাটি নেই সাড়ে তিন হাত;
আকাশেই হতে পারে তবে স্থানসংকুলান।—ভালো!
যখন আকাশে ফের দেখা দেবে নক্ষত্রসকল—
প্রতিটি নক্ষত্র হবে আমাদের প্রতিটি মৃত্যুর
উজ্জ্বল ফলকচিহ্ন। আকাশেই তবে অবিরাম—খোঁড়ো।
বনলতা, বাড়িঘর শেয়ালেরই গর্ত আজ বটে
কালো সাপ কোলে নিয়ে অবরুদ্ধ বাড়িতে প্রবাসী—
কবিতা এ নয়—আমি লিখে চলি চিঠি তোমাকেই
সুদূর নাটোরে। এখন তোমার চুল শ্রাবস্তীর
দ্রুত কালো হয়ে যাচ্ছে ঘোর অমাবস্যার বুরুশে।
তোমাকেই লিখে চলি, বনলতা, সমূহ সংবাদ।
কিন্তু এ অক্ষর ছাঁদ, এটা কার? নিজেই চিনি না।
হঠাৎ গুলির শব্দ চৌরাস্তায়—নিশ্বাস লুকিয়ে
গর্তে আরও ঢুকে যাওয়া—কিন্তু কী অদ্ভুত, আমি আজ
আমা থেকে এতটা বিচ্যুত—গুলি চলছে সত্ত্বেও
পথে ছুটে যাই, দেখি লাশ; একটি কুকুর একা—
তার লেজ নড়ছে না, সটান উদ্বেগে খাড়া, শুঁকে
চলে মনিবের ঘ্রাণ নাকি মৃত্যুর বুটের ছাপ।
কবি কিম্বা অন্যতর এখন যে আমি সেই লোক
চাপা শিস দিয়ে তাকে কাছে ডাকি: তবে তুই–ই আয়!
কে এখন তুই ছাড়া! সে কি আসে! দৌড়ে ছুটে যায়।
বাঙালি যে আছে আজও মাটি কামড়ে এখনো বাংলায়—
ভীষণ চিৎকার করে উঠি আমি: এ–ই তো কোদাল,
ছুটে এসো ধারালো কোদাল, একটি কবর খোঁড়ো
তোমার মৃতের জন্য রূপসী বাংলায়।—স্তব্ধতাই!
এখন সময় দ্যাখো নষ্ট ধ্বস্ত সময়ে গড়ায়।
এখন সূর্যের আলো পোড়া কাঠ অঙ্গারের কষ।
যুদ্ধ কী করব আমি!—হৃৎপিণ্ডে এতখানি শোক—
নদীবক্ষে ভাসে লাশ—বন্ধ সব জানালা–দরোজা—
বাতাসে উৎকট ঘ্রাণ পেট্রলের সতত অস্থির।
মাংস কি কাঠের মতো চড়চড় পোড়ে? ব্যাবিলন
নিমেষেই হয়ে যেতে পারে কি শ্মশান? এখন যে
যুদ্ধ করে, শত্রুর বিরুদ্ধে যারা এখন সৈনিক
প্রতি হৃৎস্পন্দনে তাদের জানি আমারই স্পন্দন,
অবরুদ্ধ আমারই নিশ্বাস তারা টানছে এখন।
আমি যে বাঙালি, আমি এইভাবে নিজেকেই দ্যাখো
আজ বাঁচিয়ে রাখছি।