ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় দফার প্রথম হোয়াইট হাউস প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয় ২৯ জানুয়ারি। ওই দিন সামনের সারিতে বসা এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) যে ৩ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের মধ্যে কতজনের অপরাধের রেকর্ড আছে, আর কতজন শুধু অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করেছেন?’

হোয়াইট হাউসের নবনিযুক্ত প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট উত্তর দেন, ‘সবাই। কারণ, তারা আমাদের দেশের আইন ভেঙে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে, তাই এই প্রশাসনের দৃষ্টিতে তারা অপরাধী।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি, আগের প্রশাসন বিষয়টিকে এভাবে দেখত না, তাই এখন আমাদের দেশে একটা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আসছে। যারা অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করে, তারা অপরাধী—এটাই বাস্তবতা।’

এই বক্তব্য মাগা (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) মিডিয়ায় প্রশংসিত হয় এবং রক্ষণশীল মহলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ডেইলি ওয়ায়ারের এক প্রতিবেদক এটি ‘ফায়ার’ ইমোজি দিয়ে শেয়ার করেন; হ্যারিটেজ ফাউন্ডেশন ‘বুলসআই’ ইমোজি দেয় আর রিপাবলিকান স্টাডি কমিটি ‘মাইক ড্রপ’ ইমোজি ব্যবহার করে। কিন্তু বাস্তবে লেভিটের এই দাবি পুরোপুরি ভুল, বিভ্রান্তিকর ও আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে অসত্য।

এই প্রশাসনের দৃষ্টিতে নথিপত্রবিহীন (আন ডকুমেন্টেড) অভিবাসীরা সবাই ‘অবৈধ অভিবাসী’ এবং তাই তারা অপরাধী। কিন্তু আসলে এটা সত্য নয়। এটা ডানপন্থী মহলের ছড়ানো একটি ভুল ধারণা। ধারণাটি দ্রুত ভেঙে দেওয়া দরকার।

প্রথমত, একজন মানুষ কখনোই অবৈধ হতে পারে না। নোবেল বিজয়ী ও হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া এলি উইজেল বলেছিলেন, ‘কোনো মানুষই “অবৈধ” হতে পারে না: কারণ, এটি শব্দগতভাবে অসংগতিপূর্ণ। একজন মানুষ সুন্দর বা কম সুন্দর, ন্যায়পরায়ণ বা অন্যায়পরায়ণ হতে পারে, কিন্তু অবৈধ? একজন মানুষ অবৈধ হতে পারে কীভাবে?’

একটি কাজ অবৈধ হতে পারে, কিন্তু একজন ব্যক্তি অবৈধ হতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, কেবল ভাষাগত ভুল নয়, আইনের দৃষ্টিতেও ডানপন্থী অভিবাসনবিরোধীরা ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন। আমেরিকার ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (আকলু) জানিয়েছে, ‘শুধু অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিত থাকাটা কোনো অপরাধ নয়।’ কারণ, অবৈধ প্রবেশ একটি লঘু অপরাধ, গুরুতর অপরাধ নয়। এটি ৮ ইউএস কোড ১৩২৫-এর আওতায় একটি নাগরিক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ফৌজদারি শাস্তি আরোপ করা হয় না।

তবে ৮ ইউএস কোড ১৩২৬ অনুযায়ী, যদি কেউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর পুনরায় প্রবেশ করে, তাহলে সেটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সেটি ফৌজদারি শাস্তির আওতায় পড়ে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নথিপত্রবিহীন অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেকই অবৈধভাবে প্রবেশ করেননি। তাঁরা মূলত কাজ, পড়াশোনা বা ভ্রমণের জন্য বৈধ ভিসায় প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু বিভিন্ন কারণে সময়সীমার মধ্যে দেশ ছাড়তে পারেননি।

সাম্প্রতিক এক মামলায় ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে স্বীকার করেছে যে তারা মেরিল্যান্ডের এক বাবা, যিনি আইনগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকারী ছিলেন, তাঁকে প্রশাসনিক ভুলের কারণে এল সালভাদরে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। এটা অবাক করার মতো নয় যে এই উগ্র ডানপন্থী প্রশাসন ও আইস কর্মকর্তারা প্রকৃত অপরাধী খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

অভিবাসনবিরোধীদের জন্য অস্বস্তিকর সত্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্রবিহীন অভিবাসীদের উপস্থিত থাকা কোনো অপরাধ নয়। তারা ‘অবৈধ’ নয়। শুধু আকলু নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টও এই কথা বলেছেন।

২০১২ সালে ‘অ্যারিজোনা বনাম যুক্তরাষ্ট্র’ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ৫-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রায় দিয়েছিলেন, সাধারণভাবে একজন বহিষ্কৃত অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা কোনো অপরাধ নয়।

এই রায় স্পষ্ট করে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্র ছাড়া থাকাটা কোনো ফৌজদারি অপরাধ নয়।

তৃতীয়ত, অভিবাসনবিরোধী মহল নথিপত্রবিহীন অভিবাসীদের অপরাধী হিসেবে চিত্রিত করতে চায়, কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ নেই।

আরও পড়ুনট্রাম্পের ‘মুক্তির দিন’ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপন্ন করবে২০ ঘণ্টা আগে

স্মরণ করুন, ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন যখন দাবি করেছিল, গুয়ানতানামো বেতে সবচেয়ে খারাপ অপরাধী অভিবাসীদের রাখা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম তখন বলেছিলেন, খুনি, ধর্ষক, শিশু নিপীড়ক ও গ্যাং সদস্যদের গুয়ানতানামোতে পাঠানো হবে। পরে জানা যায়, তাদের এক-তৃতীয়াংশেরই কোনো অপরাধের রেকর্ড ছিল না। মার্চে ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় ৩০০ জন অভিবাসীকে এল সালভাদরে পাঠায়।

সরকারের তরফে অভিযোগ ছিল, তারা ‘সন্ত্রাসী’ এবং ‘অপরাধী’। পরে আদালতে আইন কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, তাদের মধ্যে অনেকেরই কোনো অপরাধের রেকর্ড ছিল না। আরও জানা যায়, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তি ছিল শুধু শরীরে উল্কি থাকা!

সাম্প্রতিক এক মামলায় ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে স্বীকার করেছে যে তারা মেরিল্যান্ডের এক বাবা, যিনি আইনগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকারী ছিলেন, তাঁকে প্রশাসনিক ভুলের কারণে এল সালভাদরে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। এটা অবাক করার মতো নয় যে এই উগ্র ডানপন্থী প্রশাসন ও আইস কর্মকর্তারা প্রকৃত অপরাধী খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

ডানপন্থীদের দাবি, অভিবাসীরা বেশি অপরাধ করেন, কিন্তু গবেষণা বলে ভিন্ন কথা। একের পর এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, বেশি অভিবাসন মানেই বেশি অপরাধ নয়, বরং অভিবাসীরা সাধারণত স্থানীয় বাসিন্দাদের তুলনায় কম অপরাধ করেন।

অভিবাসনবিশেষজ্ঞ অ্যারন রাইখলিন-মেলনিক বলেছেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী নথিপত্রবিহীন অভিবাসীদের শহরে বসবাস করা নিরাপদ, তুলনায় যেখানে শুধু স্থানীয় আমেরিকানরা বাস করে।

তাহলে ডেমোক্র্যাটরা কেন এই সত্যগুলো জোরালোভাবে বলছে না? কেন তারা ‘অবৈধ অভিবাসী’ শব্দবন্ধের ভুল ও অভিবাসন আইন নিয়ে ডানপন্থীদের ছড়ানো বিভ্রান্তি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে না?

এটা বলার সময় এসেছে, সত্য তথ্য কারও আবেগের তোয়াক্কা করে না। ‘অবৈধ অভিবাসী’ বলে কিছু নেই। নথিপত্রবিহীন অভিবাসীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপরাধী নয়। আর অভিবাসনের কারণে অপরাধের হার বেড়ে যায় না।

মেহেদি হাসান সাংবাদিক, লেখক ও টেলিভিশন টকশোর উপস্থাপক

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: একজন ম ন ষ অপর ধ নয় র অপর ধ অপর ধ র ড নপন থ আম র ক অন য য়

এছাড়াও পড়ুন:

সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন

র‍াস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা

রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।” 

দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।” 

তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” 

পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন