নানা জাতিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ এই দেশ অনেক সম্ভাবনাময়। এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দিয়ে উদযাপন ও বিকশিত করতে হবে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো উদ্যোগের মাধ্যমেই এই বৈচিত্র্যকে ম্লান হতে দেওয়া যাবে না
দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশের আদিবাসীরা তাদের অস্তিত্ব, সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখছে। এখনও তাদের মূলধারা কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ জীবন। রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি, চিরায়ত ঐতিহ্য। বাংলা নববর্ষ বাঙালির যেমন প্রাণের উৎসব, তেমনি একই সময়ে নানা আনন্দ আয়োজনে চলে আদিবাসীদের বর্ষবরণ। নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হকিকত জাহান হকি
সমকাল : আদিবাসীদের নববর্ষ উৎসব ও সংস্কৃতির রয়েছে স্বকীয়তা এবং তা শত শত বছরের পুরোনো। কখনও কখনও তা ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানা যায়। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
সঞ্জীব দ্রং : বাংলাদেশ নানা জাতির, নানা সংস্কৃতির ও নানা ভাষাভাষী মানুষের দেশ। নানা জাতিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ এই দেশ অনেক সম্ভাবনাময়। এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দিয়ে উদযাপন ও বিকশিত করতে হবে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো উদ্যোগের মাধ্যমেই এই বৈচিত্র্যকে ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। আদিবাসীদের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিকে কখনও আধুনিকায়ন ও একত্রীকরণের নামে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করা হলে তা হবে চরম ভুল ও আত্মঘাতী। ভিন্নতার সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যকে স্বীকৃতি দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে আদিবাসীদের সেতুবন্ধ রচনা করতে হবে। পাহাড়ের সঙ্গে সমতলের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। একত্রীকরণ নয়, বরং স্বকীয় সত্তা ও আত্মপরিচয় নিয়ে সব জাতি এগিয়ে যাবে। পাহাড়ে ও সমতলে যে কয়েকটি সাংস্কৃতিক একাডেমি আছে, শিল্পকলা একাডেমি আছে, তারা এই মেলবন্ধনের কাজ করতে পারে।
সমকাল : কোনো জাতি-গোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে কি বিচ্ছিন্নভাবে উপস্থাপন করা যায়?
সঞ্জীব দ্রং : আমার উত্তর হলো– না। কোনো জাতির সংস্কৃতিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখানো সঠিক নয়। সামগ্রিক জীবনের অংশ হলো আদিবাসী সংস্কৃতি। আফ্রিকার মাসাই আদিবাসীরা বলত, স্ট্রাইপ ছাড়া যেমন জেব্রা হবে না, তেমনি সংস্কৃতি ছাড়া মানুষ হবে না। তাই আদিবাসী সংস্কৃতিকে তাদের আত্মপরিচয়, জীবনে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, শিল্প ও সংগীত, ভূমির অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার– সব মিলিয়েই দেখতে হবে।
সমকাল : বাংলাদেশ নামের একটি গাছের পাতাগুলোর মধ্যে আদিবাসীরাও একটি পাতা। গাছটির একটি পাতাও ছেঁড়া যাবে না– দেয়ালে এমন একটি গ্রাফিতি আঁকা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে। পরে সেটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হলে একটি মহল এর বিরোধিতা করে পাঠ্যবই থেকে তা বাদ দেওয়ার দাবি তোলে। এর প্রতিবাদ জানাতে আদিবাসীরা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সামনে গেলে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর চড়াও হয়েছিল। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
সঞ্জীব দ্রং : গ্রাফিতিটি যিনি চিন্তা করে এঁকেছিলেন, তাঁকে আমি ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ যদি একটি বৃক্ষ হয়, তাতে যত পাতা থাকবে তার একটি হলো এই আদিবাসীরা। আমাদের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে ৫০টি জাতি-গোষ্ঠীকে স্বীকৃতিও দিয়েছে। যারা পাঠ্যপুস্তক থেকে এই ছবি বাদ দেওয়ার আন্দোলন করেছে, তারা দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করছে। এটি ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ মানসিকতা। আমি অনেক দিন ধরে বলেছি, লিখেছি– সমাজের সবখানে জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি শুধু নয়, উদযাপন করতে হবে সমাজের কল্যাণের জন্য। আমরা তো কাউকে অস্বীকার করতে পারি না বা বাদ দিতে পারি না। একটি অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ও সহনশীল মানবিক সমাজের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আদিবাসীদের বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সমকাল : আদিবাসীদের সংস্কৃতি কি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছে? রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়?
সঞ্জীব দ্রং : বলতে পারি, আদিবাসী সংস্কৃতির কিছুটা স্বীকৃতি আছে। সংবিধানের ২৩(ক) ধারা আছে, যেখানে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্বীকৃতি আছে। সেখানে উপজাতি, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় বলে আরও তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা আদিবাসী হিসেবেই স্বীকৃতি চেয়েছিলাম। সেটি হয়নি। হয়তো একসময় হবে। তা ছাড়া জাতীয় শিক্ষা নীতিসহ সরকারের এসডিজি ও অন্যান্য ডকুমেন্টে আদিবাসীদের স্বীকৃতি আছে। তবে আমাদের দাবি হলো, দেশে একটি আদিবাসী উন্নয়ন নীতি থাকা জরুরি। ভারতে জওহরলাল নেহরু ১৯৫৯ সালে ট্রাইবাল পলিসি করেছিলেন। জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হওয়া আবশ্যক। আদিবাসীদের উৎসব, যেমন– পাহাড়ে বিজু-সাংগ্রাই-বৈষু-বিহু ও অন্যান্য উৎসব, গারোদের ওয়ানগালা, সাঁওতালদের বাহা, ওঁরাওদের ফাগুয়া, খাসিয়া ও মণিপুরীদের উৎসবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অংশগ্রহণ বিশেষ মাত্রা যোগ করবে। এসব নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হলে ভালো হয়।
সমকাল : বহুকাল পরও আদিবাসীরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়নি। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
সঞ্জীব দ্রং : অবশ্যই আদিবাসীরা এ দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশীদার। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গারো, হাজং, সাঁওতাল, মণিপুরী, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ অসংখ্য আদিবাসীর গৌরবোজ্জ্বল অবদান রয়েছে। তাই আদিবাসীদের জন্য সাংবিধানিক স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দাবি বহুদিনের। সংবিধানে যথাযথ স্বীকৃতি থাকলে দেশে একটি বার্তা বিরাজমান থাকে। অন্যান্য নাগরিকের কাছেও তখন আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়টি ফুটে ওঠে। সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকলে আদিবাসীদের ভূমির অধিকার, ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার, উন্নয়নের অধিকার– এসব বিষয় নিয়ে এগিয়ে যেতে সহজ হয়।
সমকাল : আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি সর্বজনীন পর্যায়ে আনার সুযোগ আছে কি? সুযোগ থাকলে সেটি কীভাবে সম্ভব?
সঞ্জীব দ্রং : এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অবশ্যই এ সুযোগ রয়েছে এবং এটি কাজে লাগানো দরকার। এ জন্য দেশে একটি জাতীয় সংস্কৃতি নীতির প্রয়োজন। এই জাতীয় নীতি আদিবাসী সংস্কৃতিকে বিকশিত করা ও এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করবে। এই নীতিতে আদিবাসী সংস্কৃতি বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ অধ্যায় থাকবে। এ মুহূর্তে দেশে যে আটটির মতো আদিবাসী কালচারাল একাডেমি আছে, তাদের লোকবল ও বাজেট বৃদ্ধি করেও কিছু কর্মসূচি নেওয়া যায়। আমি মনে করি, দেশের তরুণ সমাজকে আদিবাসী সংস্কৃতি বিষয়ে সচেতন করার কার্যক্রম নিতে হবে।
সমকাল : অতীত থেকে এ পর্যন্ত আপনারা নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা অনুভব করেছেন?
সঞ্জীব দ্রং : সরাসরি বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা প্রকাশ্যে দেখিনি। কিন্তু গত ৫০ বছরে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে চরম অবহেলা ও উপেক্ষা দেখেছি আদিবাসী মানুষের প্রতি। ফলে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের হিসাবমতে, দেশে ১৪টি আদিবাসী ভাষা বিলুপ্তপ্রায়। আমরা জানি, আদিবাসী সমাজ মূলত কৃষিভিত্তিক সমাজ। তাদের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। অভাব-অনটন লেগে থাকে। তাই সংস্কৃতি চর্চা কঠিন হয়ে পড়েছে। সুতরাং আদিবাসী সংস্কৃতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা জরুরি।
সমকাল : পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের সংস্কৃতির মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে?
সঞ্জীব দ্রং : অবশ্যই আছে। আগেই বলেছি, এই সাংস্কৃতিক ভিন্নতা ইতিবাচক এবং ভালো। আদিবাসী সংস্কৃতি হলো ধরিত্রী ও প্রকৃতির প্রতি সমর্পণ ও শ্রদ্ধার সংস্কৃতি। তাদের সংস্কৃতি বলে– ভূমি, নদী, পাহাড়-পর্বত, পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এটি জাতিসংঘ দ্বারা স্বীকৃত, পরিবেশ রক্ষায় আদিবাসীদের রয়েছে বিশেষ জ্ঞান ও অবদান। আদিবাসী মানুষের সংস্কৃতি হলো, সব ভোগের জন্য ফুরিয়ে ফেলা যাবে না, শেষ করে দেওয়া যাবে না। অবশ্যই আদিবাসীদের কাছ থেকে মূলধারার মানুষের শিক্ষণীয় অনেক কিছু আছে। জেমস ক্যামেরনের অ্যাভেটার চলচ্চিত্র আপনারা দেখতে পারেন। সেখানে ওমাতিকায়া ন্যাটিভ পিপল ও বহিরাগত স্কাই পিপলদের কথা আছে।
সমকাল : সমাজ-রাষ্ট্রের বৈষম্যের কারণে আদিবাসীদের বিকাশ সংকুচিত হয়ে এসেছে। নানা গবেষণায়ও এ ধরনের তথ্য উঠে এসেছে.
সঞ্জীব দ্রং : আমাদের সমাজ বৈষম্যপীড়িত সমাজ। এই বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। আদিবাসী সমাজ ছিল সামষ্টিক চেতনার ও সংস্কৃতির সমাজ। সেখানে বৈষম্য এতটা ছিল না। তা ছাড়া আদিবাসী ধনী গ্রামপ্রধান অন্যদের সহায়তা করত। একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ানোর সংস্কৃতি ছিল। এখন সমাজে ও রাষ্ট্রে দুর্নীতির কারণে বৈষম্য হয়েছে লাগামহীন। সমাজ ও রাষ্ট্রকে এই বৈষম্য দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতিসংঘের এসডিজি স্লোগান– লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড বা কাউকে পেছনে রেখে নয়, সবাইকে নিয়ে এগোতে হবে। এতে আদিবাসীরাও উপকৃত হবে।
সমকাল : একটি গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে আদিবাসীরা পূর্ণ অধিকার নিয়ে কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে?
সঞ্জীব দ্রং : খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, আদিবাসীদের অংশগ্রহণ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে জরুরি। প্রথমত, রাষ্ট্রকে আদিবাসীদের জন্য স্থান দেওয়ার নীতি গ্রহণ করতে হবে। আদিবাসীদের দূরে ঠেলে দেওয়ার বা দূরে রাখার অলিখিত নীতি আমরা দেখেছি। সাংবিধানিক স্বীকৃতিও মিলছে না এই আচরণের কারণে। আদিবাসীদের নাগরিক হিসেবে বুকে টেনে নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। একটি বড় ধরনের অনুশোচনা ও রিকনসিলেশন লাগবে জাতীয় পর্যায়ে। আমরা কেন অতীতে আদিবাসীদের প্রতি সব অন্যায় ও অবিচারের জন্য অনুতাপ করতে পারি না– এটি লাগবে। রাষ্ট্র ও সরকারকে বিনীত, নম্র ও শুদ্ধ হতে হবে। আদিবাসীদের সঙ্গে নিয়েই পথ চলতে হবে। এই হোক এবারের বাংলা নববর্ষের আকাঙ্ক্ষা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নববর ষ র জন য আম দ র পর য য় ধরন র উদয প গ রহণ ত করত সরক র সমক ল ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
গোলের উৎসবের ম্যাচে বার্সা-ইন্টারের রুদ্ধশ্বাস ড্র
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল মানেই তো উত্তেজনার চূড়ান্ত রূপ। আর মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কাতালোনিয়ার মন্টজুইকে যা দেখা গেল— তা যেন শুধুই একটি ফুটবল ম্যাচ নয়, বরং ছয় গোলের অনির্দেশ্য গল্প। যেখানে বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে একসঙ্গে রচনা করল রোমাঞ্চ আর বীরত্বের এক অপূর্ব মহাকাব্য। দুইবার পিছিয়ে পড়েও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে ৩-৩ গোলে সমতা টানল কাতালান জায়ান্টরা।
ম্যাচ শুরুই হলো যেন বজ্রপাত দিয়ে। সময়ের কাঁটায় মিনিটও পেরোয়নি। এর মধ্যেই ইন্টারের মার্কুস তুরাম এক চতুর ব্যাকহিল ফিনিশে বল ঠেলে দেন জালে। সেই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো কাতালান রক্ষণভাগ। এরপর ২১ মিনিটে কর্নার থেকে ডেনজেল ডামফ্রিসের অ্যাক্রোবেটিক ভলিতে যেন বার্সার হৃদয়েই ঘা লাগে, ইন্টারের লিড তখন ২-০ গোলে।
তবে ইতিহাস বলে— বার্সেলোনার যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখনই তারা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই ধারাতেই, ডানদিক থেকে দুরন্ত ছন্দে এগিয়ে এসে বক্সে ঢুকে বল জালে পাঠালেন কিশোর বিস্ময় লামিনে ইয়ামাল। ইন্টারের দ্বিতীয় গোলের মাত্র তিন মিনিট পর আসে এই গোল, যা এই ম্যাচে বার্সার ফেরার না বলা প্রতিশ্রুতি হয়ে উঠেছিল।
সেই ইয়ামাল পরে আরও একবার প্রায় গোল করে ফেলছিলেন। কিন্তু ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নেয়। বল লাগে পোস্টে। তবে কাতালান আশা তখনও নষ্ট হয়নি। ৩৮ মিনিটে ফেরান তোরেস ডানদিক থেকে আসা পাসে ওয়ান-টাইম ফিনিশে বল জড়ান জালে, ফিরিয়ে আনেন সমতা। ম্যাচ তখন যেন টানটান থ্রিলারে রূপ নেয় এবং শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধে বলের দখলে ও খেলার ছন্দে এগিয়ে থাকলেও ৬৪ মিনিটে আবারও হোঁচট খায় বার্সা। কর্নার থেকে হেডে ডামফ্রিস করেন তার দ্বিতীয় গোল। ইন্টার আবারও এগিয়ে যায়। কিন্তু বার্সা মানেই তো ক্ষণিকের বিশ্রামে আবার অগ্নি হয়ে ওঠা। দ্রুতই আসে জবাব। রাফিনহার দূরপাল্লার গর্জে ওঠা শট প্রথমে লাগে পোস্টে, এরপর ফিরে এসে লেগে যায় গোলরক্ষক ইয়ান সমারের পিঠে, এরপর বল ঢুকে পড়ে জালে। ম্যাচ আবারও ৩-৩। যদিও এটি আত্মঘাতী গোল হিসেবে গণ্য হয়, কাতালানদের জন্য তা যেন নবজন্মের এক চুম্বন।
শেষ বাঁশি পর্যন্ত দুই দলই তীব্রভাবে চেষ্টা করেছে জয় ছিনিয়ে নিতে। কিন্তু ভাগ্য সেদিন ছিল ভারসাম্যপন্থী।
এখন সব অপেক্ষা দ্বিতীয় লেগের। আগামী ৬ মে মিলানের ঐতিহাসিক সান সিরো স্টেডিয়ামে লেখা হবে এই নাটকের অন্তিম অঙ্ক। এক ম্যাচ, এক ফলাফল, এক জয়ী— আর সেই জয়ীর জন্য অপেক্ষা করছে মিউনিখের আলো-আড়ম্বরের রাত। ইউরোপীয় ফুটবলের মঞ্চে চূড়ান্ত পরীক্ষার দিন।
সান সিরোর আকাশে হয়তো আবার জ্বলে উঠবে এক নতুন রূপকথার তারা।
ঢাকা/আমিনুল