১১তম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা টানা কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ এ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। সোমবার (৫ মে) থেকে তাদের এ কর্মসূচি শুরু হবে। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত চলবে এ কর্মসূচি। প্রথম দফায় তারা প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবেন।

এর আগে, গত ২৪ এপ্রিল গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে সরকারের কাছে দাবি-দাওয়া জানিয়েছিলেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের নেতারা। সেখানে তারা ৪ মে’র মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ৫ মে থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টানা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।

বেঁধে দেওয়া সময়ে দাবি মেনে না নেওয়ায় সোমবার থেকে সহকারী শিক্ষকরা এক ঘণ্টার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ। তিনি বলেন, ‘‘সরকার আমাদের দাবি মেনে নেয়নি, কোনো আলোচনাও হয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছি।’’

কখন কর্মবিরতি হবে- এমন প্রশ্নে শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘‘স্কুলগুলোর সময়সূচী তো ভিন্ন। কোথাও সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়, কোথাও ৯টায় শুরু। আমরা এজন্য যে স্কুল সকালে যখন খুলবে, শুরুতেই এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করার নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি, আমাদের সহকর্মীরা দাবি-দাওয়া আদায়ের এ আন্দোলনে শামিল হয়ে সারা দেশে একযোগে এ কর্মসূচি পালন করবেন।’’

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী, ৫ থেকে ১৫ মে সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হবে। এরপর ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টা, ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা।

তারপরও যদি দাবি-দাওয়া না মানা হয়, তাহলে ২৬ মে থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ নেতারা।

সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন যেসব দাবিতে

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নে সম্প্রতি ঢাকায় কয়েক দফা সমাবেশ করেছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কনসালটেশন কমিটি সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১২তম গ্রেড বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। এটিকে সংস্কার করে এবার ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে নামছেন তারা।

তিন দফা দাবি

১.

সরকারের গঠিত কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।
২. ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন।
৩. প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নে কর্মবিরতির যে ডাক দিয়েছে, তাতে সমর্থন জানিয়েছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ।

সংগঠনটির নেতারা জানান, যদিও তারা দীর্ঘদিন ধরে দশম গ্রেড বাস্তবায়নে আন্দোলন করছেন, তারপরও ১১তম গ্রেডের দাবির আন্দোলনেও তাদের মৌন সম্মতি রয়েছে। তবে তারা দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে আগামীতেও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘‘ভেদাভেদ ভুলে আমরা কর্মবিরতি কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছি। আশা করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেড বাস্তবায়ন আন্দোলনে সফল হবেন। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের এ কর্মসূচিও দশম গ্রেড বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করছি।’’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌনে ৪ লাখেরও বেশি শিক্ষক কর্মরত। তাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের বর্তমান বেতন গ্রেড ১১তম। সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম।

ঢাকা/হাসান/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ১১তম গ র ড শ ক ষকদ র শ ক ষকর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

১১ মাসে বিদেশি ঋণ শোধে ব্যয় ৩৭৮ কোটি ডলার

বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল বাবদ অর্থ পরিশোধ ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এযাবৎকালের মধ্যে সরকারকে বিদেশি ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, চলতি অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণ শোধের পরিমাণ ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে আজ রোববার প্রকাশিত বিদেশি ঋণ পরিশোধ–সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল বাবদ সরকার পরিশোধ করেছে ৩৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের পুরোটা সময়ে বিদেশি ঋণের আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩৩৪ কোটি ডলার।

ইআরডির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ সরকার পরিশোধ করেছিল প্রায় ৩০৭ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ অর্থ পরিশোধের পরিমাণ ২৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সরকার এ বাবদ যে অর্থ ব্যয় করেছে, তার মধ্যে ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২৩৮ কোটি ডলার। ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৪০ কোটি ডলার।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত সময়ে নেওয়া বড় বড় মেগা প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে হওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। একই সঙ্গে বাজারভিত্তিক উচ্চ সুদহারের বিভিন্ন ঋণ গ্রহণও এতে প্রভাব ফেলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই অর্থনীতিবিদেরাও বিদেশি ঋণ গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন।

এদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাড়লেও কমেছে বিদেশি ঋণছাড় ও ঋণের প্রতিশ্রুতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিদেশি ঋণছাড় হয়েছে ৫৬০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭০২ কোটি ডলার। একই সময়ে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ৫৪৮ কোটি ডলারের। যদিও গত অর্থবছেরর একই সময়ে ঋণ প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৭৯২ কোটি ডলারের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ