বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে ভাইয়ের জমি কেনার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মোরশেদ আলমসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত বুধবার দুদকের উপপরিচালক শেখ গোলাম মাওলা রাজধানীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অন্য দুই আসামি হলেন মোরশেদ আলমের ছেলে বেঙ্গল কনসেপ্ট অ্যান্ড হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম এবং ভাই বেঙ্গল কনসেপ্টের পরিচালক মো.

জসিম উদ্দিন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৬ সালে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার গণিপুর মৌজায় শূন্য দশমিক ৮৯৬ একর জমি ও একটি নির্মাণাধীন ১৫ তলা ভবনের চতুর্থ তলার একটি বাণিজ্যিক স্পেস কেনে।

ওই জমির মালিক ছিলেন জসিম উদ্দিন। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে জমি বিক্রির দায়িত্বে ছিলেন সাইফুল আলম। আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও এটি গোপন রাখা হয় এবং ইনস্যুরেন্স উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে জমি কিনতে অনুমোদন দেওয়ার সময় মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, জমিটির প্রকৃত বাজারমূল্য ছিল ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৫ টাকা। তবে জাল মূল্যায়ন প্রতিবেদনে তা ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দেখানো হয় এবং সেই ভিত্তিতে পুরো অর্থ পরিশোধ করা হয়। এতে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ হয়, যা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইডিআরএ-কে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য সরবরাহ, সরকারি মূল্যায়ন প্রতিবেদন উপেক্ষা এবং প্রতারণার অভিযোগও আনা হয়েছে।

শিল্পগোষ্ঠী বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম আওয়ামী লীগের টিকিটে নোয়াখালী-২ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৯ এপ্রিল তাঁকে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও পড়ুনবেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম গ্রেপ্তার ০৮ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের উপস্থিতিতে অপহরণের অভিযোগ, দুইদিনেও উদ্ধার হয়নি পল্লী চিকিৎসক

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক পল্লী চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের হাতি চামটার ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করেন দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

ভিডিওতে দেখা যায়, মাথায় হেলমেট এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার সামনেই কয়েকজন ব্যক্তি তরিকুল ইসলামকে টেনে-হিঁচড়ে একটি অটোভ্যানে তুলছেন। এ সময় আশপাশের কয়েকজন তাকিয়ে দেখেন। তরিকুল তাদের সাহায্য চাইলেও সবাই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তদের একজনকে বলতে শোনা যায়, 'এ এখানে প্রশাসনের লোক আছে।' 

অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলাম ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর কুটিপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। ভাতগ্রাম বাজারে পল্লি চিকিৎসক হিসেবে তার চেম্বার ও ওষুধের দোকান রয়েছে। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন।

এদিকে অপহরণের দুইদিন পার হলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে না পারায় উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বজনরা। তবে অপহরণকারীরা এ পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ বার ফোন দিয়ে অপহৃত তরিকুলের ছোটভাই হিরুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে পল্লী চিকিৎসকের ছোটভাই হিরু মিয়া সাদুল্লাপুর থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তরিকুল ইসলামের ঔষধের দোকানে সুমন নামে এক ব্যক্তি ৬ মাস কাজ করেছেন। পরে তাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হলে বিভিন্ন অজুহাতে তিনি  টাকা দাবি করে আসছিলেন দোকান মালিক তরিকুলের কাছে। এ নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে শালিসি বৈঠকও হয়। গত শুক্রবার বিকেলে তরিকুল বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে ভাতগ্রাম বাজারে তার দোকানে যাচ্ছিলেন। পথে সুমনসহ স্থানীয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার পথরোধ করে মারধর করেন এবং জোরপূর্বক তাকে অটোরিকশা ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।

পল্লি চিকিৎসকের ছোটভাই হিরু মিয়া বলেন, অভিযোগ দেওয়ার দুইদিন হয়ে গেল, এখনো আমার ভাইকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ সেখানে সাদুল্লাপুর থানার একজন এএসআই উপস্থিত ছিলেন। অপহরণকারীরা সবার পরিচিত। দিনে দুপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর কারণে ভাইকে নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি আমরা। তার দুই মেয়ে শুধু কাঁদছে। 

তিনি আরও বলেন, সবশেষ রোববার দুপুরে অপহৃত তরিকুলের কাছে থাকা মোবাইল ফোন থেকে দুর্বৃত্তরা ফোন করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন। প্রশাসনের কাছে তার বড়ভাইকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। 

রোববার রাত ৯টায় সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার সমকালকে বলেন, ‘অপহরণের সময় পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির উপস্থিতির কথা শুনেছি। কিন্তু স্পষ্ট নয়। অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলামকে উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলামান রয়েছে।’ 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ