কক্সবাজারের টেকনাফে মানব পাচারকারীদের ‘জিম্মিঘর’ থেকে অপহৃত ১৪ জনকে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী এলাকার সাইফুল ইসলামের বাড়ি থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। তবে এ সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, ‘টেকনাফ ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই মানব পাচার ও অপহরণের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে। এসব অপরাধ দমনে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় অপহরণ করে জিম্মি করে রাখা ১৪ জনকে নিরাপদভাবে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। কারা এই অপহরণে জড়িত, কী উদ্দেশে তাদের অপহরণ করা হয়েছে- তা জানতে আমরা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলছি। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উদ্ধার হওয়া কক্সবাজারের বাসিন্দা মো.

কাসেম ও মহিন উদ্দিন জানান, ‘আমরা ইনানীতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকের প্রলোভনে টেকনাফে গেলে আমাদের অপহরণ করে একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে রাখা হয়। আমাদের মারধর করে পরিবারের কাছে ভিডিও পাঠিয়ে এক লাখ টাকা করে আদায় করা হয়। এরপরও ১৮ দিন ধরে আমাদের জিম্মি করে রাখা হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সাগরপথে পাচারের জন্য দালালদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া। অবশেষে বিজিবি এসে আমাদের উদ্ধার করে। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ যত অভিযোগ লক্ষ্মীপুরে গ্রেপ্তার আলমগীরের বিরুদ্ধে

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা–পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন জেলার তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ আলমগীর হোসেন (৪০)। আজ সোমবার ভোরে চন্দ্রগঞ্জ থানার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের ইমাম উদ্দিন মিজি বাড়ির কাছ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আলমগীর হোসেন উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উত্তর মাগুরী এলাকার আবুল কালামের ছেলে। সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের আলোচিত সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জিহাদীর সেকেন্ড ইন কমান্ড আলমগীর হোসেন।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফয়জুল আজীম নোমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় চারটি অস্ত্র মামলা, একটি হত্যা ও দুটি মাদক মামলা এবং চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অপহরণসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন।

আলমগীরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

পুলিশ জানায়, নোমান ও রাকিব খুনের মামলায় অন্যতম আসামি আলমগীর হোসেন। ওই মামলায় তিনি ২০২৩ সালের ৯ মে গ্রেপ্তার হন। পরে উচ্চ আদালত থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর আর আদালতে হাজিরা দেননি।

আলমগীর ২০১৩ সালের দিকে সন্ত্রাসী মাসুম বিল্লাহ লাদেন বাহিনীর সদস্য ছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি ২০১৫ সালের দিকে আবুল কাশেম জিহাদীর বাহিনীতে যোগ দেন। কাশেম জিহাদী চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। নোমান ও রাকিব হত্যার ২৩ দিন পর জিহাদীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আলমগীরের বিরুদ্ধে আজাদ হোসেন ওরফে বাবলু (২৫) নামের একজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গত ২ জুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় আজাদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মাদক বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার বশিকপুর, চাটখিল ও আশপাশের এলাকায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি

চাটখিল উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোরশেদ আলম ভূঁইয়া আলমগীরের লোকজনের হাতে অপহরণের শিকার হন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ৩১ জুলাই তিনি ও তাঁর সহযোগী তারেক রহমানকে আলমগীর হোসেনের লোকজন অপহরণ করেন। রাত ১০টার দিকে শামসুল হুদা উচ্চবিদ্যালয়ের কাছ থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে যান অপহরণকারীরা। এরপর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাঁদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়, যা পরবর্তী সময় ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যবহার করা হয়।

মোরশেদ আলম আরও জানান, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নেওয়ার পর পরদিন বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অপহরণের সময় তাঁদের মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর এলাকার মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও তাঁরা তাঁর দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। নয়তো জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করবেন, এই আশঙ্কা তাঁদের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আশুলিয়ায় সাংবাদিককে মারধর-অপহরণের চেষ্টায় আটক ২
  • খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ যত অভিযোগ লক্ষ্মীপুরে গ্রেপ্তার আলমগীরের বিরুদ্ধে