কৃত্রিম জলজটে নাকাল মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর বাজারের এক বর্গকিলোমিটার এলাকার ব্যবসায়ী ও বসবাসকারী জনসাধারণ। পরিস্থিতি বলছে, নিজেদের ভুলেই এই ভোগান্তির ভার কাঁধে উঠেছে তাদের।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পানি নিষ্কাশনের খাল দখল করে মার্কেটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি গড়ে তোলায় পুরো বর্ষা মৌসুম জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ এলাকার লক্ষাধিক মানুষকে। ভোগান্তিতে থাকা এলাকার বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর বাজারকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল। কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী এ জনপদ হয়ে কয়েকটি উপজেলার অধিকাংশ মানুষকে ভৌগোলিক কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হয়। ফলে শেরপুর বাজার এলাকার পরিসর দিনদিন বাড়ছে।
এখানে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠেছে হাইওয়ে থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ব্যাংক, বীমা, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ নানা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো রয়েছেই। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না করে এবং একই সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান সংরক্ষিত না থাকায় জলাবদ্ধতা ওই এলাকার মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। একদিন বৃষ্টি হলে এক সপ্তাহেও জলাবদ্ধতা কাটে না। এমন মন্তব্য করেছেন বিশ্বজিৎ ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক বিধান রায়।
শেরপুর বাজারের আবাসিক এলাকার বাসিন্দা, স্থানীয় ইউপি বিএনপি সভাপতি এমদাদ মো.

সিরাজ জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়ির খোলা টয়লেট, স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারের ময়লা, গরু জবাইয়ের রক্তসহ আবর্জনা আবাসিক এলাকার রাস্তার ওপর দিয়ে গড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে করে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়ছে ব্যাপকভাবে। এসব নোংরা পানি মাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে সেখানকার শিক্ষার্থীদের। এই দুর্দশার ভার বইতে হচ্ছে সাধারণ পথচারীদেরও।
স্থানীয় আলতাফুর রহমান মার্কেটের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জুহিন বলেন, নিজ দায়েই ভুগছে এখানকার মানুষ। পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে নিজ মার্কেটের সামনে ড্রেন নির্মাণ করেও কাজে আসেনি অন্যান্য মার্কেটের সামনের অংশ বন্ধ থাকায়। জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে হলে প্রত্যেক মার্কেট মালিকসহ বাসাবাড়ির লোকজনকে ড্রেন নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে। মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের সরকারি খাল উদ্ধারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) সহায়তা দিলে পানি নিষ্কাশন নির্বিঘ্ন হবে।
ইখওয়ান মার্কেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টুটুল আহমদ জানান, শেরপুর বাজারের সব মার্কেট মালিক ও ব্যবসায়ীরা সম্মিলিতভাবে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীলদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
শেরপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, বছর পনেরো আগে সড়কের দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের খাল দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এতে পুরো এলাকা বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে। খাল অবমুক্ত করে স্থানীয় বেরী বিলে পানিপ্রবাহের ব্যবস্থার লক্ষ্যে শিগগিরই ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের কাছে বাজার কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রতি বছরের ইজারামূল্য থেকে সরকার ১৫ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব পেয়ে থাকে। 
অন্যদিকে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিভিন্ন কোম্পানি ও ওই বাজারের ছোট-বড় ব্যবসায়ী কোটির টাকার বেশি ট্যাক্স দেন। এর পরেও শেরপুর বাজারের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর নেই।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ সমকালকে বলেন, সিলেট-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের সওজ বিভাগের ভূমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ইতোপূর্বে অভিযান হয়েছে। ফের কেউ দখল করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ র ব যবস র লক ষ এল ক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চার দিন পর চন্দ্রঘোনায় ফেরি চলাচল শুরু, রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলছে

কাপ্তাই বাঁধ খুলে দেওয়ার পর পানির তীব্র স্রোতের কারণে বন্ধ হয়ে যায় কর্ণফুলী নদীর চন্দ্রঘোনা ঘাটে ফেরি চলাচল। চার দিন পর আজ ফেরি চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে। এতে স্বাভাবিক হয়েছে রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলাচল।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাঙামাটি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার পরিমাণ কমায় কর্ণফুলী নদীতে স্রোত কমেছে। এতে ফেরি চলাচলে ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় আজ সকাল সাতটা থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ার কারণে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। তবে জরুরি প্রয়োজনে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালা-শীলঘাটা হয়ে যান চলাচলের সুযোগ ছিল।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, কর্ণফুলী নদীর পানির স্রোত কমেছে। তাই ফেরি চলাচলে ঝুঁকি নেই বলা যায়। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ফেরি চলাচল শুরু করা হয়েছে।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে রাঙামাটিতে বৃষ্টি নেই। উজান থেকে পাহাড়ি ঢলও থেমে গেছে। এর মধ্যে কাপ্তাই বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে হ্রদেও পানির চাপ কমেছে। আজ বেলা দেড়টায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি ফটক আড়াই ফুট করে খোলা ছিল।

পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, আজ বেলা একটায় কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা ছিল ১০৭ দশমিক ৫৪ ফুট এমএসএল। এর আগে গত কয়েক দিনে হ্রদে ১০৮ দশমিক ৮৪ ফুট এমএসএল পর্যন্ত পানি ছিল। হ্রদে পানির ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি থেমে যাওয়া ও বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে হ্রদে পানি দ্রুত কমছে। পর্যায়ক্রমে তাই বাঁধের ফটক দিয়ে পানি ছাড়ার পরিমাণও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার খুলে দেওয়া কাপ্তাই বাঁধ বন্ধ করা হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চার দিন পর চন্দ্রঘোনায় ফেরি চলাচল শুরু, রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলছে