জলাবদ্ধতায় ধুঁকছে শেরপুর বাজারের লক্ষাধিক মানুষ
Published: 12th, May 2025 GMT
কৃত্রিম জলজটে নাকাল মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর বাজারের এক বর্গকিলোমিটার এলাকার ব্যবসায়ী ও বসবাসকারী জনসাধারণ। পরিস্থিতি বলছে, নিজেদের ভুলেই এই ভোগান্তির ভার কাঁধে উঠেছে তাদের।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পানি নিষ্কাশনের খাল দখল করে মার্কেটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি গড়ে তোলায় পুরো বর্ষা মৌসুম জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ এলাকার লক্ষাধিক মানুষকে। ভোগান্তিতে থাকা এলাকার বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর বাজারকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল। কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী এ জনপদ হয়ে কয়েকটি উপজেলার অধিকাংশ মানুষকে ভৌগোলিক কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হয়। ফলে শেরপুর বাজার এলাকার পরিসর দিনদিন বাড়ছে।
এখানে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠেছে হাইওয়ে থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ব্যাংক, বীমা, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ নানা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো রয়েছেই। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না করে এবং একই সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান সংরক্ষিত না থাকায় জলাবদ্ধতা ওই এলাকার মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। একদিন বৃষ্টি হলে এক সপ্তাহেও জলাবদ্ধতা কাটে না। এমন মন্তব্য করেছেন বিশ্বজিৎ ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক বিধান রায়।
শেরপুর বাজারের আবাসিক এলাকার বাসিন্দা, স্থানীয় ইউপি বিএনপি সভাপতি এমদাদ মো.
স্থানীয় আলতাফুর রহমান মার্কেটের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জুহিন বলেন, নিজ দায়েই ভুগছে এখানকার মানুষ। পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে নিজ মার্কেটের সামনে ড্রেন নির্মাণ করেও কাজে আসেনি অন্যান্য মার্কেটের সামনের অংশ বন্ধ থাকায়। জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে হলে প্রত্যেক মার্কেট মালিকসহ বাসাবাড়ির লোকজনকে ড্রেন নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে। মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের সরকারি খাল উদ্ধারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) সহায়তা দিলে পানি নিষ্কাশন নির্বিঘ্ন হবে।
ইখওয়ান মার্কেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টুটুল আহমদ জানান, শেরপুর বাজারের সব মার্কেট মালিক ও ব্যবসায়ীরা সম্মিলিতভাবে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীলদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
শেরপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, বছর পনেরো আগে সড়কের দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের খাল দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এতে পুরো এলাকা বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে। খাল অবমুক্ত করে স্থানীয় বেরী বিলে পানিপ্রবাহের ব্যবস্থার লক্ষ্যে শিগগিরই ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের কাছে বাজার কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রতি বছরের ইজারামূল্য থেকে সরকার ১৫ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব পেয়ে থাকে।
অন্যদিকে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিভিন্ন কোম্পানি ও ওই বাজারের ছোট-বড় ব্যবসায়ী কোটির টাকার বেশি ট্যাক্স দেন। এর পরেও শেরপুর বাজারের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর নেই।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ সমকালকে বলেন, সিলেট-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের সওজ বিভাগের ভূমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ইতোপূর্বে অভিযান হয়েছে। ফের কেউ দখল করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ র ব যবস র লক ষ এল ক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কে মরা গাছ, চলাচলে ঝুঁকি
মহাসড়কের দুই ধারে সারি সারি গাছ। ছয় শতাধিক গাছ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেব চিহ্নিত করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। ৩৫টি গাছ পচে ঘুণে ধরেছে।
ঝড়-বৃষ্টিতে মাঝেমধ্যে মরা ডাল ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় পথচারী, যাত্রী ও যানবাহন চালকেরা ঝুঁকি নিয়ে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন।
এ দৃশ্যের দেখা মেলে সিলেট-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর-শাহবাদ অংশে। এ সড়কের পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে থাকা মরা গাছগুলোর বেশ কয়েকটিতে এরই মধ্যে ঘুণপোকা আক্রমণ করেছে। যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে যানবাহন ও পথচারীর ওপর। অথচ বছরের পর বছর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও গাছগুলো কাটছে না সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।
সিলেট-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। পরিবেশ রক্ষা ও পথচারীদের ছায়া দেওয়ার লক্ষ্যে সড়কের দুই পাশে পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে সওজের পক্ষ থেকে ৩০ বছর আগে গাছের
চারা রোপণ করা হয়। আকাশি, ইউকেলিপটাস, কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির লাগানো চারাগুলো পরিণত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৩৫টি গাছ ঝড়-তুফানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মরে গেছে।
এরমধ্যে বেশ কয়েকটি গাছের ওপরের আবরণ খসে পড়েছে। বাসা বেঁধেছে উঁইপোকা। কোনোটিতে স্বর্ণলতাসহ পরজীবী আঁকড়ে ধরেছে।
হামরকোনা গ্রামের রেফা বেগম-ওমর আলী দম্পতির ভিটেবাড়ি নাই। মহাসড়ক সড়কসংলগ্ন জমিতে কোনোরকমে থাকার মতো ঘর তুলেছেন। তাদের ঘরের ওপরে ডালপালাহীন একটি মরা
গাছ দাঁড়িয়ে আছে। যে কোনো সময় সেটি ভেঙে পড়তে পারে।
রেফা বেগম বলেন– ‘বৃষ্টি-বাদল, তুফান আইলে ডরে (ভয়) থাকি কোন সময় যে হুকনা (শুকনা) গাছ ভেঙে পড়ে সব তছনছ হয়ে যায়! ওই সময় আল্লারে ডাকা ছাড়া কোন পথ সামনে থাকে না।’
শেরপুর বাজারের ব্যবসায়ী গৌছ আহমেদ বলেন, কয়েক বছর ধরে শেরপুর-মৌলভীবাজার সড়কের পাশের বেশ কয়েকটি গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের এ দিকে কোনো নজর নেই। গাছগুলো আগে নিলামে বিক্রি করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় হতো। এখন শুকিয়ে যাওয়া গাছগুলো জ্বালানি ছাড়া কোনো কাজে লাগবে না।
সরেজমিন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ দিয়ে পল্লি বিদ্যুৎ বিভাগের ৩৩ হাজার কেভির লাইন চলে গেছে। কথা হলে পথচারী কয়েকজন জানান, ঝড়-বৃষ্টির দিনে প্রায়ই বাতাসে শুকনো গাছের শাখা-প্রশাখা ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। যে কোনো সময় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
পরিবহন শ্রমিক মোশাহিদ আলী জানান, ‘বাক্কা দিন (অনেক দিন) ধরি গাছগুলো মরি (মরে) গেছে। এখন উলি (উঁই) ও ঘুণপোকায় বাসা করছে। কোন সময় যে তুরাতুড়ি (অল্পস্বল্প) বাতাসে হুকনা গাছ ভাইঙ্গা পড়তে পারে চলাচল করা গাড়ির ওপর। যাত্রী ও গাড়ি সবকিছুর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’
মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ বলেন সিলেট-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের শেরপুর বাজার-মৌলভীবাজার অংশে বিপুল সংখ্যক গাছ মরে গেছে। কিছু গাছ এমনভাবে সড়কের ওপর রয়েছে, যাতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে। জেলাজুড়ে এরকম ৬শর বেশি গাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো কাটার অনুমোদন চেয়ে বনবিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলেই দরপত্র আহ্বান করে গাছ কাটতে নিলামের ব্যবস্থা করা হবে।