আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে দেশের একেবারে পশ্চিমে হেরাত প্রদেশের দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটারের বেশি। বাসে পৌঁছাতে লাগল প্রায় ১৮ ঘণ্টা। পরের দিন ভোরে (১৮ অক্টোবর) রওনা হলাম আরও ১২০ কিলোমিটার পশ্চিমে ইসলাম কালার শরণার্থীশিবিরের উদ্দেশ্যে। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে আলাপ হলো আক্তার জান নামের বছর চল্লিশের এক তালেবান মুজাহিদ ও তাঁর তরুণ ভাইপোর সঙ্গে। তাঁরাও সীমান্তে যাচ্ছিলেন, তুলে নিলাম ট্যাক্সিতে।

আক্তার জানের সঙ্গে আলাপ না হলে তালেবানের রণনীতি নিয়ে অনেক কিছুই জানা যেত না। মাঠপর্যায়ের সৈনিক আক্তার জান। দেশ বাঁচাতে অল্প বয়সে রুশ রাইফেল একে ৪৭ হাতে মাঠে নেমে পড়েছিলেন। তারপর বিদ্রোহীদের প্রিয় এই বন্দুকই যে ব্যবহার করেছেন, তা বুঝলাম যখন বললেন, ‘ম্যাগাজিনে ৩০টি গুলি ধরে।’

তবে আক্তার জানের কথায় বোঝা যায়, তিনি মুজাহিদদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। বিশেষ করে সোভিয়েত জমানার রকেট-চালিত গ্রেনেড (আরপিজি) কাঁধে বসিয়ে মর্টার নিক্ষেপের কারণে। বছর ১৫ প্রত্যক্ষ লড়াইয়ের পর চাকরি পেয়েছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে। আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, পাহাড়ে পাহাড়ে আর ঘুরতে হয় না। রাতে বাড়িতে ঘুমান বা সীমান্তের ছাউনিতে, ভাইপোকেও ঢুকিয়েছেন বাহিনীতে।

তালেবানের প্রথা-বিরুদ্ধ যুদ্ধ

যুদ্ধের সময় কিছু জায়গা বেছে ভয়ংকর আক্রমণ চালিয়েছিল আন্তর্জাতিক যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী (আইএসএএফ)। পাল্টা হামলা চালিয়েছিল মুজাহিদরাও। বড় ধরনের যুদ্ধ হয়েছিল ইরান সীমান্তবর্তী ফারাহ প্রদেশের বালা বুলুক জেলার সিয়ান গ্রামে। পশ্চিমাঞ্চলে এখানেই ছিল মুজাহিদদের বড় ঘাঁটি, ছিলেন আক্তার জানও।

ইসলাম কালা যাওয়ার পথে তিন ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে আক্তার জান সিয়ানে জয়ের কারণ ব্যাখ্যা করেন। অবাক করে বললেন, প্রথাগত যুদ্ধ এবং গেরিলা যুদ্ধের প্রাথমিক শর্তই তাঁরা মানেননি। যেমন স্কোয়াড, প্লাটুন, কোম্পানি, ব্যাটালিয়ন প্রভৃতি ভাগে বাহিনীকে ভাগ করেননি। তিনি বললেন, ‘ব্যাপারটা ছিল অন্য রকম’।

প্রথাগত ‘কমান্ড স্ট্রাকচার’ তৈরি না করে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার আগেই একটা রাজনৈতিক-সামরিক কাঠামো তৈরি করেছিল। কাউকে প্রদেশের গভর্নর ঘোষণা করেছিল, কেউ–বা ছিলেন গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানের দায়িত্বে, ছিলেন সামরিক কমান্ডার এবং পুলিশপ্রধানও।

আক্তার জান বলেন, ‘গুরুত্ব অনুসারে তাঁদের অধীনে ছেলে বা যোদ্ধা দেওয়া হয়েছিল। কারও অধীনে ছিল ৫০, কারও ১০০, ২০০ বা ৩০০ বন্দুকধারী।  তাঁর জানামতে, সিয়ানে সবচেয়ে বেশি ফৌজ ছিল দুই কমান্ডার ভাইয়ের হাতে। দুই ভাই হলেন হাজি সুলতান সাব্বির ও হাজি তৈয়াব।

আক্তার জান বলেন, ‘একেকজনের অধীনে মোটামুটিভাবে ৬০০-৬৫০ যোদ্ধা ছিল, অর্থাৎ মোট ১২০০-১৩০০ যোদ্ধা। প্রয়োজনমতো তাঁরা এই যোদ্ধাদের বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করতেন। কখনো ৫০ জনকে পাঠাতেন, কখনো ৪০০-৫০০ ছেলেও পাঠানো হতো।’

তালেবান মুজাহিদ আক্তার জান (ডানে) ও তাঁর ভাইপো.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ন ড

এছাড়াও পড়ুন:

‘গোলকিপার’ হামজাকে কেমন দেখলেন

নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে কথাটা উঠেছিল—হামজা চৌধুরীর শুধু গোলকিপিং করাটাই বাকি! কেন এমন কথা, সেটিও সবার জানা। গত ১৩ অক্টোবরের সেই ম্যাচে হামজার দুর্দান্ত দুটি গোলে ম্যাচে ২–১ এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ড্র করে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে হামজা কী করেননি—গোল করা থেকে গোল ঠেকানো, এমনকি মাঝমাঠে খেলাও তৈরি করেছিলেন। এ কারণে সমর্থকেরা সেদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে হামজাকে নিয়ে ওই কথাটি বলেছিলেন।

মজার বিষয়, সমর্থকদের সেই কথা যেন মাটিতে পড়ার আগেই হামজা বুঝিয়ে দিলেন, পোস্টের নিচে দাঁড় করিয়ে দিলেও তিনি একেবারে খারাপ করবেন না! নেপালের বিপক্ষে ড্রর পরের ম্যাচেই কাল রাতে ভারতের বিপক্ষে এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়েছিল হামজাকে।

ম্যাচটি ছিল এশিয়ান কাপের বাছাই। দুই দলই চূড়ান্ত পর্বে ওঠার সুযোগ হারানোয় বলতে পারেন কাগজে–কলমে নিয়ম রক্ষার ম্যাচ; কিন্তু প্রতিপক্ষ যেহেতু ভারত—ম্যাচটি তাই মর্যাদার লড়াই হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের জন্য। সে লড়াইয়ে ১–০ গোলের জয়ে অবশ্যই উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। তবে জয় হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা ছিল, যদি ৩১ মিনিটে গোলকিপারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গোল না ঠেকাতেন হামজা।

বল দেওয়া–নেওয়া করতে গিয়ে অকারণে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোলকিপার মিতুল মারমা। কর্নারের কাছাকাছি গিয়ে বল হারান মিতুল। সেখান থেকে বল পেয়ে যান ভারতের উইঙ্গার লালিয়ানজুয়ালা চাংতে। ফাঁকা পোস্ট দেখে শট নেন। তবে এমন কিছু ঘটতে পারে, সেটা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন হামজা। দৌড়ে পোস্টের মাঝমাঝি এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। তখন তাঁর আরেক সতীর্থও পোস্ট পাহারায় থাকলেও পজিশনটা সুবিধাজনক ছিল না।

আরও পড়ুনভারতকে হারানোয় ২ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা ক্রীড়া উপদেষ্টার১ ঘণ্টা আগে

লালিয়ানজুয়ালার বাঁকানো শট পোস্টে ঢোকার আগেই লাফিয়ে করা হেডে বল ‘ক্লিয়ার’ করেন হামজা। নইলে নিশ্চিত গোল!

গোলকিপারের কাজ গোল ঠেকানো। সে জন্য দুই হাত ব্যবহারের সুবিধাটা পান; কিন্তু হামজা তো গোলকিপার নন, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। সে বিচারে ম্যাচের ওই মূহূর্তে গোলকিপারের ভূমিকায় তাঁর কাজটি গোলকিপারের চেয়েও কঠিন ছিল। কারণ, গোলকিপার অনায়াসেই দুই হাতের ব্যবহারে লালিয়ানজুয়ালার শটটি থামাতে পারতেন। হামজা একই কাজ করলে পেনাল্টি পেত ভারত, হামজাকে হয়তো কার্ডও দেখতে হতো; কিন্তু পাকা ডিফেন্ডারের মতোই মাথার ব্যবহারে গোলকিপারের বিকল্প কাজটা করে দেন হামজা।

জয়ের পর সতীর্থদের সঙ্গে উদ্‌যাপন হামজার

সম্পর্কিত নিবন্ধ