অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষাসম্পন্ন করা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হলো টেম্পোরারি গ্র্যাজুয়েট ভিসা। এই ভিসার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করার পর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় থেকে কাজ, উচ্চতর পড়াশোনা বা ভ্রমণ করতে পারেন। এটি মূলত শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। ভিসার মেয়াদ নির্ভর করে শিক্ষার্থীর অর্জিত ডিগ্রির ওপর।

বিশেষ করে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া-ইন্ডিয়া ইকোনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের (এআই-ইসিটিএ) আওতায় অতিরিক্ত সুবিধা রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি ভিসা মেয়াদ প্রদান করে। এর ফলে তারা অস্ট্রেলিয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ের পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান।

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস ফেলোশিপ, ৬ খাতে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ১৭ নভেম্বর ২০২৫এই ভিসার সুবিধা

এই ভিসাধারী প্রার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত বসবাস ও কাজ করতে পারেন। এটি নির্ভর করে তাঁদের সম্পন্ন ডিগ্রির ওপর। তবে এই ভিসা চাকরির নিশ্চয়তা দেয় না, শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে চাকরি খুঁজতে হয়।

ভিসার মেয়াদ

ব্যাচেলর ডিগ্রি (অনার্সসহ): দুই বছর

মাস্টার্স (কোর্সওয়ার্ক বা এক্সটেন্ডেড): দুই বছর

মাস্টার্স (রিসার্চ): তিন বছর

ডক্টরাল ডিগ্রি (PhD): তিন বছর

গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত প্রার্থীদের সাধারণত দুই বছরের মেয়াদ দেওয়া হয়, যদিও ব্যক্তিগত পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।

আরও পড়ুনজার্মানিতে সামার স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম, আইইএলটিএস ছাড়াই আবেদন০৮ নভেম্বর ২০২৫যোগ্যতার শর্তাবলি

ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই:

বৈধ ছাত্র ভিসাধারী হতে হবে এবং অস্ট্রেলিয়ার কোনো অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হবে।

স্বাস্থ্য ও চরিত্রসংক্রান্ত শর্ত পূরণ করতে হবে।

যথাযথ স্বাস্থ্যবিমা রাখতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে কোনো বকেয়া থাকলে, তা পরিশোধ করতে হবে।

আবেদনকারী প্রার্থীরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের একই আবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন বা পরবর্তী সময় আলাদাভাবে আবেদন করতে পারেন।

এই ভিসার মূল আবেদন ফি ২ হাজার ৩০০ অস্ট্রেলীয় ডলার।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ভ স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বেপরোয়া গতিতে চলে গাড়ি, বাড়ছে ঝুঁকি

চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মানা হচ্ছে না নির্ধারিত গতিসীমা। ফাঁকা পেলেই সেখানে দ্রুতগতিতে চলছে যানবাহন। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলছে মোটরসাইকেল। গত বছরের আগস্ট মাসে পরীক্ষামূলক চালুর পর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। সম্প্রতি দুর্ঘটনার তালিকায় যোগ হয়েছে প্রাইভেট কার। এ ঘটনার পর আবারও আলোচনায় আসে এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের নিয়মনীতি।

চলতি নভেম্বর মাসেই দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যায় এই উড়ালসড়কে। এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক, চালকদের গতিসীমা না মানা এবং বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সিডিএ বলছে, এগুলো স্বাভাবিক বাঁক। চলাচলে কোনো ঝুঁকি নেই। গতিসীমা না মেনে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।

নগর পুলিশের বন্দর অঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে নভেম্বর মাসের দুটি দুর্ঘটনা গতি না মানার কারণে হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ গাড়ির গতিসীমার বিষয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) কবীর আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘গতি না মানা একটি কারণ। পাশাপাশি অনেক বাঁক আছে সেখানে। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করি দুর্ঘটনারোধে ব্যবস্থা নিতে।’

২০১৭ সালে অনুমোদিত হওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ সাড়ে সাত বছরেও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৯২ শতাংশ। এর মূল অংশের উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। সে সময় ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ নামে এর উদ্বোধন করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এর নাম পরিবর্তন করে শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে করা হয়। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ব্যয় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

সিডিএ সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা অংশে সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং গাড়ি থেকে নামা নিষিদ্ধ। পরীক্ষামূলক যান চলাচলের সময় সাময়িকভাবে ট্রাক, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে চলছে মোটরসাইকেল।

সরেজমিন দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলরত গাড়ির অধিকাংশই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। এ ছাড়া বড় একটি অংশ কার ও মাইক্রোবাস। চলাচলের সময় অধিকাংশ গাড়িই গতিসীমা মেনে চলছে না। গতিসীমার মাপার জন্য কোথাও নেই যন্ত্র বা ক্যামেরা। কিছু স্থানে গতিরোধক থাকলেও নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকেরা।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

গতি না মানা একটি কারণ। পাশাপাশি অনেক বাঁক আছে সেখানে। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করি দুর্ঘটনারোধে ব্যবস্থা নিতে।কবীর আহম্মেদ, উপকমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর), চট্টগ্রাম নগর পুলিশ

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। কখনো পেছন থেকে এসে সামনের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। কখনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি পড়ে যায়। যদিও ছোট দুর্ঘটনায় অভিযোগ না করায় পুলিশের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ৫ ও ১২ নভেম্বর এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যায়। দুই ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। দুটোই এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা অংশে। একটি পতেঙ্গা থানা এলাকায়।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে নিরাপদে গাড়ি চলাচলের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাঁকগুলোতে গতিরোধক বসানো হয়েছে। আলোকায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। একটু পরপর গতিসীমা, বাঁক, গতিরোধকের তথ্য জানিয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চালক ও যাত্রীরা তা মানতে চান না। নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালালে স্বাভাবিকভাবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে কখনো পেছন থেকে এসে সামনের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। কখনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি পড়ে যায়। সম্প্রতি দুটি ঘটনাতেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বহু স্থানে প্রকৌশলগত ত্রুটির কারণে তীব্র বাঁক আছে, যেখানে গতিরোধক বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে। দুর্ঘটনা রোধে এসব বাঁকে গতি কমানো এবং ছোট যান, বিশেষত মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থার সঙ্গে চালকদেরও নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ