হজরত শাহ সুলতান বলখি মাহিসাওয়ার একাদশ শতাব্দীর মুসলিম ধর্মপ্রচারক। পুণ্ড্রবর্ধন, অর্থাৎ এখনকার বগুড়া জেলা এবং সন্দ্বীপে ইসলাম প্রচার করেছিলেন তিনি। বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থানে তাঁর সমাধী, যেটি ‘হজরত শাহ মাহমুদ বলখি মাহিসাওয়ার (রহ.)-এর মাজার শরীফ’ নামেই পরিচিত।

এখনকার মতো অনেক আগে থেকেই এই মাজার জিয়ারত করতে আসতেন তাঁর অনুসারীরা। জিয়ারত শেষে সবার মধ্যে বিলানো হতো একধরনের চারকোনা, শক্ত, মিষ্টি খাবার, যা খাওয়ার সময় ‘কটকট’ শব্দ হতো। স্থানীয়দের ধারণা, সেখান থেকেই খাবারটির নাম হয় ‘কটকটি’।

কালক্রমে সেই কটকটি হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের মানুষের এক অন্যতম প্রিয় খাবার, কারও কাছে সেটা নস্টালজিয়া বা স্মৃতিকাতরতা। আর কেবল বগুড়াই নয়, কটকটি সুপরিচিত সারা দেশে।

এ অঞ্চলের যাঁরা বিদেশে বসবাস করছেন, তাঁরাও স্থানীয় যেসব জিনিস মিস করেন, তার মধ্যে মহাস্থানের কটকটি অন্যতম। আর তাই অনেকে দেশে এসে গ্রামের হাতে বানানো বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি কটকটিও লাগেজে ভরে নেন। এভাবেই বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মহাস্থানের কটকটি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে ইউরোপ-আমেরিকায়।

একদিন কটকটির বাজারে

একসময় ফেরি করে যে কটকটি বিক্রি হতো মহাস্থানের আশপাশে, সেটাই এখন রূপ নিয়েছে স্থায়ী দোকানের ব্যবসায়। কেউ কেউ তো দেড় শ বছরের বেশি সময় ধরে বংশপরম্পরায় চালাচ্ছেন কটকটির দোকান!

আবালবৃদ্ধবণিতা—সবার কাছেই খাবারটি লোভনীয়। মহাস্থানে হাট বসে সপ্তাহের শনি ও বুধবার। হাটবারে অধিকাংশ হাটুরে কেনাকাটা শেষে পরিবারের জন্য কটকটি নিতে ভোলেন না। কারণ, আর কিছু নিতে ভুললেও মাফ মেলে, কটকটি কিনতে ভুললে রক্ষা নেই!

স্থানীয় দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মহাস্থানগড় এলাকায় কটকটির দোকানের সংখ্যা চার শতাধিক। একেকটি দোকানে প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ কটকটি বিক্রি হয়। তবে শুক্রবার মহাস্থানগড়ে দর্শনার্থী বেশি থাকায় সেদিন বিক্রি বেড়ে যায়। প্রতি শুক্রবার তিন থেকে চার মণ কটকটি বিক্রি হয় বলে জানালেন বিক্রেতা আহসান হাবিব।

মৌসুম ভেদে কটকটির বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয় শীতকালে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শাহ আরেফিন টিলা থেকে আবার পাথর লুট, ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর লুট থামছে না। গতকাল শনিবার রাতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের অভিযানে কোম্পানীগঞ্জের টুকেরবাজার এলাকা থেকে ট্রাকভর্তি পাথরসহ এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে।

পরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিন মিয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওই ব্যবসায়ীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্ত ওই পাথর ব্যবসায়ীর নাম মনির হোসেন (৩৫)। তিনি কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুরের খায়ের গাঁও এলাকার বাসিন্দা। টুকেরবাজার এলাকায় তাঁর স্টোন ক্রাশার মিল (পাথর ভাঙার) আছে। শাহ আরেফিন টিলা থেকে লুট হওয়া পাথর মজুত রাখেন তিনি। পরে পাথরগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন। গতকাল রাতে বিক্রির জন্য ট্রাকে থাকা পাথরসহ তাঁকে আটক করা হয়। আজ রোববার দুপুরে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সরকারি খাস খতিয়ানে ১৩৭ দশমিক ৫০ একর জায়গায় শাহ আরেফিন টিলার অবস্থান। কথিত আছে, প্রায় ৭০০ বছর আগে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর অন্যতম সফরসঙ্গী হজরত শাহ আরেফিন (রহ.) খাসিয়া পাহাড় এলাকা পরিভ্রমণকালে পাহাড়-টিলার চূড়ায় বিশ্রাম নিতেন। শাহ আরেফিনের একটি ‘আসন’ (বিশ্রামের স্থান) হিসেবে পরিচিতি থেকে ওই টিলার নামকরণ হয় শাহ আরেফিন টিলা।

লালচে, বাদামি ও আঠালো মাটির এ টিলার নিচে আছে বড় বড় পাথর। এসব পাথর উত্তোলন করতেই চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। এর মধ্যে টিলার প্রায় ৮৫ শতাংশ পাথর লুট হয়ে গেছে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রতন শেখ এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহ আরেফিন টিলা থেকে আবার পাথর লুট, ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড