কাছাকাছি দুটি বাড়ি, মাঝখানে শুধু একটুকরা ধানখেত। হেমন্তের সোনালি ধানের জমি পেরিয়ে এবাড়ি-ওবাড়ি করে দিন কাটে একঝাঁক শামুকখোল পাখির। সারা দিন এদের আসা-যাওয়া, ওড়াউড়িতে মুখর থাকে বাড়ি দুটির চারপাশ। এখানকার মানুষ এসব পাখিকে আশ্রয় আর নিরাপত্তা দিয়েছে বলেই এদের বসবাস বেশ স্বচ্ছন্দ।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর এলাকার এই দুই বাড়িতে বেশ কিছুদিন ধরে আশ্রয় নিয়েছে শামুকখোলের বড় একটি ঝাঁক। সকাল থেকে সন্ধ্যা এদের গাছে বসা, আকাশে ভেসে বেড়ানো কিংবা দল বেঁধে উড়ে যাওয়া এলাকাটিকে যেন একপ্রকার ছোট্ট অরণ্যে পরিণত করেছে। মানুষ আছে নিজ গার্হস্থ্যে আর পাখিরা প্রকৃতির আপন নিয়মে—দুয়ে মিলেই তৈরি করেছে সহাবস্থানের এক পরিবেশ।

সোমবার সকালে হালকা কুয়াশা কাটতে না কাটতেই নরম রোদ গায়ে লাগিয়ে জেগে ওঠে কয়েক শ শামুকখোল। তখনো এলাকার বেশির ভাগ মানুষের ঘুম ভাঙেনি। দূর আকাশে রঙের খেলা, রাস্তা ধরে মাঝেমধ্যে ছুটে যাওয়া গাড়ি—এর মধ্যেই হঠাৎ দক্ষিণ দিক থেকে একঝাঁক শামুকখোলের উড়ে আসার দৃশ্য নজর কাড়ে। সেখানে গাছে আগেই বসে ছিল আরও অনেক শামুকখোল।

ধানখেতের ওপারে আরেকটি বাড়ির গাছগুলোতেও একই দৃশ্য। কোথাও শুকনা ডালের পাতার মতো সেঁধিয়ে আছে পাখি, কোথাওবা পুরো গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে। একদল উড়াল দিলে আরেক দলও উড়তে শুরু করে। কেউ এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যায়, কেউ আকাশে চক্কর দিয়ে আবার আগের গাছে ফিরে আসে। এদের ওড়াউড়িতে সকালটা আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

ঝাঁকে ঝাঁকে চলাই এদের স্বভাব। প্রতিটি ঝাঁকে থাকে ৪০ থেকে ৬০টি পাখি। সম্প্রতি তোলা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বেপরোয়া গতিতে চলে গাড়ি, বাড়ছে ঝুঁকি

চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মানা হচ্ছে না নির্ধারিত গতিসীমা। ফাঁকা পেলেই সেখানে দ্রুতগতিতে চলছে যানবাহন। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলছে মোটরসাইকেল। গত বছরের আগস্ট মাসে পরীক্ষামূলক চালুর পর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। সম্প্রতি দুর্ঘটনার তালিকায় যোগ হয়েছে প্রাইভেট কার। এ ঘটনার পর আবারও আলোচনায় আসে এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের নিয়মনীতি।

চলতি নভেম্বর মাসেই দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যায় এই উড়ালসড়কে। এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক, চালকদের গতিসীমা না মানা এবং বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সিডিএ বলছে, এগুলো স্বাভাবিক বাঁক। চলাচলে কোনো ঝুঁকি নেই। গতিসীমা না মেনে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।

নগর পুলিশের বন্দর অঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে নভেম্বর মাসের দুটি দুর্ঘটনা গতি না মানার কারণে হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ গাড়ির গতিসীমার বিষয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) কবীর আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘গতি না মানা একটি কারণ। পাশাপাশি অনেক বাঁক আছে সেখানে। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করি দুর্ঘটনারোধে ব্যবস্থা নিতে।’

২০১৭ সালে অনুমোদিত হওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ সাড়ে সাত বছরেও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৯২ শতাংশ। এর মূল অংশের উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। সে সময় ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ নামে এর উদ্বোধন করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এর নাম পরিবর্তন করে শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে করা হয়। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ব্যয় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

সিডিএ সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা অংশে সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং গাড়ি থেকে নামা নিষিদ্ধ। পরীক্ষামূলক যান চলাচলের সময় সাময়িকভাবে ট্রাক, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে চলছে মোটরসাইকেল।

সরেজমিন দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলরত গাড়ির অধিকাংশই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। এ ছাড়া বড় একটি অংশ কার ও মাইক্রোবাস। চলাচলের সময় অধিকাংশ গাড়িই গতিসীমা মেনে চলছে না। গতিসীমার মাপার জন্য কোথাও নেই যন্ত্র বা ক্যামেরা। কিছু স্থানে গতিরোধক থাকলেও নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকেরা।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

গতি না মানা একটি কারণ। পাশাপাশি অনেক বাঁক আছে সেখানে। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করি দুর্ঘটনারোধে ব্যবস্থা নিতে।কবীর আহম্মেদ, উপকমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর), চট্টগ্রাম নগর পুলিশ

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। কখনো পেছন থেকে এসে সামনের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। কখনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি পড়ে যায়। যদিও ছোট দুর্ঘটনায় অভিযোগ না করায় পুলিশের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ৫ ও ১২ নভেম্বর এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যায়। দুই ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। দুটোই এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা অংশে। একটি পতেঙ্গা থানা এলাকায়।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে নিরাপদে গাড়ি চলাচলের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাঁকগুলোতে গতিরোধক বসানো হয়েছে। আলোকায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। একটু পরপর গতিসীমা, বাঁক, গতিরোধকের তথ্য জানিয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চালক ও যাত্রীরা তা মানতে চান না। নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালালে স্বাভাবিকভাবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে কখনো পেছন থেকে এসে সামনের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। কখনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি পড়ে যায়। সম্প্রতি দুটি ঘটনাতেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বহু স্থানে প্রকৌশলগত ত্রুটির কারণে তীব্র বাঁক আছে, যেখানে গতিরোধক বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে। দুর্ঘটনা রোধে এসব বাঁকে গতি কমানো এবং ছোট যান, বিশেষত মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থার সঙ্গে চালকদেরও নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ