প্রায় ১৭ বছর আগে মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফিরছিলেন রুবেল হোসেন। সে সময় তার বয়স কেবল আট। ঝড়ে মাঠের মাঝে ছিঁড়ে পড়ে ছিল বিদ্যুতের তার। অবুঝ মনে সেই তার স্পর্শ করতেই হন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট। সে যাত্রায় জীবন নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে ফেরেন। তবে, কেটে ফেলতে হয় তার দুইটি হাত।

সেই রুবেল এখন ২৫ বছরের যুবক। শারীরিক অক্ষমতা নয়, মানসিক দৃঢ়তাকে নিজের জীবনের সঙ্গী করে নিয়েছেন তিনি। দুই পাকে সঙ্গী করে দিনাজপুরের হিলি শহরে ঘুরে ঘুরে ডালা গলায় নিয়ে করেন সিদ্ধ ডিম বিক্রি। পাশাপাশি করছেন ছাগল পালন। পঙ্গুত্ব তাকে ভিক্ষুক নয়, বানিয়েছে ব্যবসায়ী।

আরো পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

হিলি পৌর এলাকার জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা রুবেল। বাবাকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। এখন মা এবং স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বসবাস তার।

এলাকাবাসী জানান, হাত না থাকায় রুবেলকে খাবার খাওয়ানো ও গোসল করানোর কাজ করেন তার মা। তিনি বিয়ে করেছেন। সংসারে একটি কন্যা সন্তানও আছে। ছোট বেলায় দুই হাত হারানো এই যুবক ভিক্ষার পরিবর্তে বেছে নিয়েছেন ব্যবসাকে। ছাগল পালনের পাশাপাশি তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যায় হিলি শহরে গিয়ে গলায় ডালা ঝুলিয়ে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করেন। নিজের জীবিকা তো বটেই, চালিয়ে নিচ্ছেন পরিবারের ভরণপোষণও।

রুবেল হোসেন জানান, সন্ধ্যা হলেই ডিমের ডালা গলায় ঝুলিয়ে হিলি শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন। ডিমের খোসা ছিড়ে ক্রেতাদের দেওয়ার কোন উপায় নেই তার, কেননা হাত নেই। ক্রেতারাই খোসা ছাড়িয়ে ডিম কেনেন। টাকা পকেটে রাখেন। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি ডিম বিক্রি করতে পারেন। তা থেকে দিনে লাভ আসে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। 

রুবেলের কাছ থেকে ডিম কিনছেন হিলি শহরের দুই বাসিন্দা

আইনুল হক নামে এক ব্যক্তি বলেন, “আমার বাড়ি পাঁচবিবিতে, হিলিতে এসেছি কাজে। দুই হাতবিহীন যুবককে গলায় ডালা ঝুলিয়ে ডিম বিক্রি করতে দেখে অবাকই হয়েছি। আমার খুব মায়া লেগেছে তার জন্য। নিজেই তার ডালা থেকে তিনটি ডিম নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে খেলাম। সে তো ভিক্ষে করতে পারতো, কিন্তু ব্যবসা করছে। তার এই ইচ্ছে শক্তিকে আমি স্যালুট জানাই।”

লুৎফর রহমান বলেন, “দূর থেকে দেখলাম, গলায় ডালা ঝুলিয়ে এক ব্যক্তি ডিম বিক্রি করছেন। শীতের দিন তাই ডিম খেতে ইচ্ছা করল। কাছে এসে দেখি, ডিম ব্যবসায়ীর দুই হাতিই নেই। খুব খারাপ লাগল। নিজেই ডিম নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে খেলাম। বিক্রেতার পকেটেই টাকা রেখেছি।” 

হান্নান নামে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে এলাকার বাসিন্দা বলেন, “রুবেলকে আমরা চিনি। তার বাড়ি জালালপুরে। দুই হাত নেই, কোনো কাজ করার ক্ষমতাও নেই, তবুও তিনি ভিক্ষা করেন না। ডিমের ব্যবসা করে সংসার চলান। তার এই সংগ্রামী জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষার আছে।” 

রুবেল হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, “ছোট বেলায় কারেন্টে আমার দুই হাত নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছি। বাবা নেই, মা আছেন। দুই বছর হলো বিয়ে করেছি, একটা মেয়ে হয়েছে। সংসার বড় হয়েছে, বসে থাকলে তো হবে না। তাই ডিমের ব্যবসা করছি। সবাই আমার ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। সিদ্ধ ডিম কিনে ক্রেতারা নিজেরাই খোসা ছাড়িয়ে খান। আমি ছোট থেকে পরিশ্রম করে আসছি, কারো কাছে হাত বাড়ায়নি।”

তিনি বলেন, “অনেক আগে থেকেই পঙ্গু ভাতা পাচ্ছি। ব্যবসা করে আর ভাতার টাকা দিয়ে আল্লাহ আমার সংসার ভালই চালাচ্ছেন।”

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফলত ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিংয়ের লভ্যাংশ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১.২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর পুরোটাই নগদ লভ্যাংশ। প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ০.১২৫ টাকা নগদ লভ্যাংশ পাবেন শেয়ারহোল্ডারা।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তথ্য মতে, ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ৩০ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় হাইব্রিড প্ল্যাটফর্মে। আর ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ ডিসেম্বর।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৮৬ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৮৮ টাকা।

এদিকে, সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ৩.৫৫ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির এনওসিএফপিএস ছিল ৩.৯৭ টাকা।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩.২৪ টাকা।

এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্য সীমা থাকবে না।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ