ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শিল্পসমৃদ্ধ গাজীপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ছে। জেলার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করা আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ভোটের মাঠে অনুপস্থিতি নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনী প্রস্তুতির কথা বললেও তেমন দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। তৎপরতা নেই বাম দল ও জাতীয় পার্টির (জাপা)।

এদিকে পুনর্বিন্যাসের পর নির্বাচন কমিশন গাজীপুরের আসন ৫টি থেকে ৬টি করে। সিটি করপোরেশনের ৩২-৩৯ এবং ৪৩-৫৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর গাজীপুর-৬ আসনের গেজেট প্রকাশ করা হয়। তবে হাইকোর্ট ১০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের ওই গেজেটকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ফলে গাজীপুর-৬ আসন বাতিল হয়ে যায়। 

পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা আগাম প্রচার শুরু করেছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি ইসলামি দলের নেতারা মাঠে কাজ করছেন। 

আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে শিল্পসমৃদ্ধ জেলা গাজীপুরের ভোটের মাঠে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে।

গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও সিটির একাংশ)

১৯৯১ সাল থেকে গাজীপুর-১ আসনে কখনো জিততে পারেনি বিএনপি। প্রতিবারই আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় পেয়েছেন। এবার আসনটিতে অনেক হেভিওয়েট নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম (বাবুল), কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিন মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া বিএনপির নেতা চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে চৌধুরী ইসরাক আহমেদ সিদ্দিকীও দলীয় মনোনয়ন চান।

আসনটিতে প্রায় ছয় মাস আগে সাবেক সচিব মো.

শাহ্ আলম বকশিকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। ইতিমধ্যে তিনি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে জি এম রুহুল আমিন গণসংযোগ করছেন।

গাজীপুর-২ (টঙ্গী ও সিটির একাংশ)

গাজীপুর-১ আসনে সাবেক মেয়র এম এ মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিমকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও মহানগরের নায়েবে আমির হোসেন আলীকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের এম এ হানিফ সরকারকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। 

শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত আসনটির ভোটাররা সাধারণত দলীয় প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তিগত পরিচিতি, উন্নয়ন ও সুনাম বিবেচনায় নিয়ে ভোট দেন। এবার বিএনপি প্রার্থীর পারিবারিক প্রভাব ও জামায়াতের সংগঠিত কাঠামো ভোটের লড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলতে পারে। 

এম মঞ্জুরুল করিম বলেন, ‘মহানগরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেছি।’

হোসেন আলী বলেন, এখানকার শ্রমিকদের একটি অংশ জামায়াতকে পছন্দ করে। তাঁরা শ্রমিক ও সাধারণ ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও সদর উপজেলার একাংশ)

গাজীপুর-৩ আসনে দলের কেন্দ্রীয় সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও জেলার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম রফিকুল ইসলামকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। তাঁর বিরুদ্ধে জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য জাহাঙ্গীর আলমকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। এখানে ইসলামী আন্দোলনের আলমগীর হোসেন প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা গাজীপুরের সব আসনের প্রার্থী অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছি। এখন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রার্থী ও কর্মীরা ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন।’

গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া)

স্বাধীনতার পর থেকে মূলত তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল গাজীপুর-৪ আসন। তবে ১৯৯১ সালে এখানে জয় পেয়েছিলেন আ স ম হান্নান শাহ। বিএনপি থেকে হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বাবার জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ তাঁকে আলোচনায় রেখেছে। 

অন্যদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও মহানগরের সদর থানা জামায়াতের আমির সালাহউদ্দিন আইউবীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি অনেক দিন ধরেই নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে ইসলামী আন্দোলনের কাজীম উদ্দিনকে প্রার্থী করা হয়েছে।

সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে আমরা নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। ভোটারদের কাছে যাওয়ার জন্য সব রকমের চেষ্টা আমাদের আছে।’

শাহ রিয়াজুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাজীপুর চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি আছে শুধু গাজীপুর-১। শুরুতে প্রতিটি আসনেই অনেক প্রার্থী ছিল; তবে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণার পর প্রচারের কাজ শুরু করেছি।’

গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ ও সিটির একাংশ) 

গাজীপুর-৫ আসনে বিভিন্ন দল বিভিন্ন সময়ে জয় পেয়েছে। এবার প্রধান লড়াই গড়ে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীর মধ্যে। এখানে সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হককে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়, অভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক ভিত্তি তাঁকে এগিয়ে রাখছে।

অন্যদিকে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য খায়রুল হাসানকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের আতাউর রহমানকে প্রার্থী করা হয়েছে।

খায়রুল হাসান বলেন, ‘শুধু মাঠে নয়, ভোটারদের বাড়িতেও যাচ্ছি। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। ফেসবুকেও ভোটাররা আমাদের সমর্থন ও ভালোবাসা জানাচ্ছেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র সদস য করছ ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাক্তন স্ত্রী দেবশ্রীর সঙ্গে প্রসেনজিৎ জুটি, সঙ্গী ঋতুপর্ণা

ভারতীয় বাংলা সিনেমার তারকা জুটি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ও দেবশ্রী রায়। পর্দায় এ জুটির রোমান্স দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অসংখ্য ভক্ত। রুপালি পর্দার রোমান্স ব্যক্তিগত জীবনেও গড়ায়। ভালোবেসে দেবশ্রী রায়কে বিয়ে করেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু কয়েক বছর পরই এ বিয়ে ভেঙে যায়। তারপর দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায়।   

সংসার ভাঙার পাশাপাশি দর্শক হারান রুপালি পর্দার জনপ্রিয় এই জুটিকে। এরপর আর কোনো সিনেমায় একসঙ্গে দেখা যায়নি তাদের। কয়েক মাস আগে দূরত্ব কমিয়ে দেবশ্রীর সঙ্গে সিনেমা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন প্রসেনজিৎ।  

আরো পড়ুন:

মুখোমুখি জিতু-দিতিপ্রিয়া, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সংকট কী কাটল?

গায়িকা থেকে সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক, মৈথিলীকে কতটা জানেন?

এবার টলিপাড়ার সুপারস্টার আনন্দের খবর দিয়ে বললেন, “খুব শিগগির কিছু ঘটতে চলেছে। আমাদের অতি পরিচিত দুই পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখার্জি ও নন্দিতা রায় ‘প্রাক্তন টু’ করতে চান। আমাকে দেবশ্রী রায় এবং ঋতুকে নিয়ে।” 

এর আগে ‘আমি যখন হেমা মালিনী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেছিলেন—“দেব-শুভশ্রী জুটির পর আমি চাই আবার প্রসেনজিৎ-দেবশ্রী জুটি ফিরুক, এই জুটিটা ফেরার অত্যন্ত প্রয়োজন।” ‘দেবী চৌধুরানী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিতের এই বক্তব্য প্রসেনজিৎকে জানানো হয়।

এ বিষয়ে প্রসেনজিৎ বলেছিলেন, “আমি তো চাই দীপকদা একটা স্ক্রিপ্ট লিখুক আমাদের জন্য, আমার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল এবং আমি অনেকবার দীপকদাকে বলেছি যে, আমি তোমার পরিচালনায় একটা কাজ করতে চাই। দীপকদা, আমাদের জন্য যদি পরিচালনা করেন তাহলে অবশ্যই আমি সিনেমা করতে চাই। আর আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে দেবশ্রীর সঙ্গে আবারো একটা পরিণত প্রেমের সিনেমা করতে চাই।”  

তাহলে কী পুরোনো তিক্ততা ভুলে গেছেন প্রসেনজিৎ? জবাবে এই নায়ক বলেছিলেন, “আমার কারো সঙ্গে কোনো তিক্ততা নেই। যে আমার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলবে, আমি সব সময় তাদের জন্য আছি। আর কোনো তিক্ততা নিয়ে বাঁচতে চাই না, যে কটা দিন আছি সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নিয়েই থাকতে চাই।” 

এক সময় দেবশ্রীকে নিয়ে কথা বলতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন না প্রসেনজিৎ। তবে অভিমান ভুলে কাজের ক্ষেত্রে আবার এক হওয়ার কথা বললেন তিনি। বর্তমানকে ভালোবেসে যেমন এগিয়ে যান, ঠিক তেমনই কি অতীতকেও আঁকড়ে বাঁচেন?   

এ প্রশ্নের জবাবে প্রসেনজিৎ বলেছিলেন, “নিজের অতীতকে কখনো উপেক্ষা করা যায় না। মাঝেমাঝেই আমি আমার অতীতে ফিরে যাই; সেই সময়গুলোর জন্যই আজকের আমি। অতীত আমাকে অনেক ভালোবাসা, রাগ-দুঃখ-ক্ষোভ দিয়েছে। আমার ক্ষেত্রে যেটা অল্প কিন্তু তবু আছে সেটা হলো—ঘৃণা। সেটাও পেয়েছি, তবে অতীত যেমনই হোক না কেন, তাকে কখনো ফেলে দেওয়া যায় না। আমরা সবাই মাঝে মাঝে অতীতে ফিরে যাই।”

সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেছে। বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেও দ্বিধাবোধ করেন না প্রসেনজিৎ। তার ভাষায়—“এই বদলগুলোকে মেনে না নিলে আমাকে পিছিয়ে পড়তে হবে। আমি প্রচুর বদল দেখেছি, তবে যেই সময় যেটা এসেছে, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছি, এটাই তো করা উচিত। না হলে বর্তমান প্রজন্ম থেকে দূরে সরে যেতে হবে।” 

দেবশ্রী-প্রসেনজিৎ অনেক ছোট‌বেলা থে‌কে একে অপরকে চিনতেন। ১৯৯২ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়েন দেবশ্রী-প্রসেনজিৎ। ১৯৯৫ সালে এ সংসার ভেঙে যায়। ১৯৯৭ সালে অপর্ণা গুহ ঠাকুরতার সঙ্গে ঘর বাঁধেন প্রসেনেজিৎ। কিন্তু এই বিয়েও ভেঙে যায়। বর্তমানে অর্পিতাকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছেন এই নায়ক। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ