অনেক অগ্রগতি, তবে কিছু জটিলতাও আছে
Published: 19th, November 2025 GMT
সংশোধিত শ্রম আইনে অনেক অগ্রগতি আছে। শ্রমিকের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে পরিধি বাড়ানো হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শ্রমিকের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এত দিন মধ্যম সারির কর্মীদের কোনো সুরক্ষা ছিল না। এ ছাড়া সংশোধিত আইনে গৃহশ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও তাঁদের পরিপূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। তবে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ পাবেন তাঁরা।
এ ছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন আবেদন সহজ করা হয়েছে। কত জন শ্রমিকের সম্মতি লাগবে, সেটি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। দর–কষাকষিতে ফেডারেশনগুলোর ভূমিকা আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য ভবিষ্য তহবিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একটি জাতীয় সামাজিক সংলাপ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কর্তৃপক্ষ করার কথা বলা হয়েছে। এগুলো ইতিবাচক অগ্রগতি।
সংশোধনের পর কিছু ঘাটতি ও জটিলতা রয়ে গেছে। যেমন গৃহশ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকেরা এখনো আইনি সুরক্ষার বাইরে রয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত গাড়িচালক, আউটসোর্সিংকর্মী, দৈনিক ভিত্তিক কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা ও দর–কষাকষির জন্য সংগঠন করার অধিকার দেওয়া এখন সময়ের দাবি হয়ে পড়েছে।
এখন থেকে ন্যূনতম ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যাবে। এটি বড় কারখানাগুলোতে সুফল দিলেও ছোট কারখানার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করবে। কোনো কারখানায় ৫০ জন শ্রমিক থাকলে কমপক্ষে ২০ জন, অর্থাৎ ৪০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। কারখানার মোট শ্রমিক সংখ্যা ৩০ হলে ৬০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। যেহেতু দেশের অধিকাংশ কারখানা ছোট, সে কারণে এই জটিলতায় শ্রমিকের সুরক্ষা বিঘ্নিত হবে।
একটি কারখানায় পাঁচটি ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ প্রতিষ্ঠানে সমস্যা সৃষ্ট করবে না যদি সেখানে সংগঠন করার উপযুক্ত পরিবেশ থাকে। একটি ইউনিয়ন যদি কার্যকর হয়, তাহলে আর ইউনিয়ন হবে না। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কেউ যেন ইউনিয়ন করার প্রতিযোগিতায় না নামে, সেটি তদারকি করতে হবে।
জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের কোনো নির্দেশনা সংশোধিত শ্রম আইনে নেই। এটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তায় আরও কড়াকড়ি দরকার ছিল। সব মিলিয়ে বললে, আমরা এক ধাপ এগিয়েছি। আরও এগোতে হবে। তার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ, সাবেক শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কেউ কেউ জীবন দিয়েছে, কেউ কেউ বক্তৃতা
ওরহান ভেলি কনিক (১৯১৪—১৯৫০) তুরস্কের অন্যতম প্রধান কবি ছিলেন। তুর্কি কবিতার আধুনিকায়নে তাঁর ব্যাপক ভূমিকা ছিল। মাত্র ৩৬ বছরের জীবন। গ্যারিপ মুভমেন্টের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এই মুভমেন্টের সঙ্গে আরও ছিলেন তাঁর দুই বন্ধু কবি ওকতাই রিফাত ও মেলিহ চেভদেত আন্দাই। কবিতা ছাড়াও তিনি তাঁর ৩৬ বছরের জীবনে অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। অনেক অনুবাদও করেছেন। কবিতা লেখার পুরোনো নিয়মকানুন ত্যাগ করে তিনি তুরস্কে নতুন স্বাদের কবিতা রচনার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন। প্রচলিত ছন্দ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি মনে করতেন কবিতায় রূপক, উপমা, হাইপারবোল ইত্যাদি অলংকারের কোনো প্রয়োজন নেই। কবিতার ভাষায় তিনি সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষাকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তাঁর ছোট ছোট কবিতাগুলোই বেশি টানে পাঠককে। তাঁর কবিতায় দর্শন আছে, কিন্তু দার্শনিক বিমূর্ততা কিংবা জটিলতা নেই। জীবনের সহজতা ঘিরে আছে তাঁর কবিতার আলো-হাওয়া।
১৯৪১ সালে দুই বন্ধু ওকতাই রিফাত ও মেলিহ চেভদেত আন্দাইয়ের সঙ্গে তাঁর নতুন চিন্তাভাবনায় রচিত কবিতার সংকলন ‘গ্যারিপ’ (স্ট্রেঞ্জ) প্রকাশিত হয়। তাঁরা বললেন, কবিতা রাজপ্রাসাদের নয়, সাধারণ মানুষের ভাষায় লেখা উচিত। ‘গ্যারিপ মুভমেন্ট’ ১৯৪৫-১৯৫০ সময়কালে তুর্কি কবিতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। গ্যারিপ কবিতা তুর্কি কবিতার জগতে পরশপাথরের মতো গ্রহণ করা হয়েছিল একইসঙ্গে এসব কবিতার ধ্বংসাত্মক ও গঠনমূলক চরিত্রের জন্য। বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে তাঁকে ভাবা হয়। তাঁর লেখায় একধরনের কোমল বিষণ্নতা ও মৃদু হাস্যরস মিশে থাকে, যা তাঁকে অন্যের থেকে আলাদা করেছে।
ওরহান ভেলির বন্ধু কবি ওকতাই রিফাত লিখেছেন, ‘ওরহান তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনে কবিতায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, তা ফরাসি কবিতার কয়েক জেনারেশনের সমতুল্য। তাঁর কলমকে ধন্যবাদ দিতে হয় এ কারণে যে তিনি একাই তুরস্কের কবিতাকে ইউরোপীয় কবিতার সমকক্ষ করে তুলেছিলেন।’ তিনি আরও বলেছেন, সাধারণত কয়েকটি জেনারেশন পরপর কাজ করে কবিতায় যে রূপান্তর ঘটায়, নতুন কিছু অর্জন করে, তিনি সেটা কয়েক বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করেছিলেন। বিশেষ করে তুর্কি কবিতার ক্ষেত্রে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সৃজনশীল প্রতিভার প্রাবল্যে, কসমোপলিটন বোধ, ব্যাপক শ্রম তথা গ্যারিপ মুভমেন্টের মধ্য দিয়ে তিনি তুরস্তের কবিতায় যে নতুনত্বের সন্ধান দিয়েছিলেন, তা সারা পৃথিবীর কবি, কবিতা-পাঠক ও কবিতা-সমালোচকদের অভিভূত করেছিল।
তিনি তাঁর ৩৬ বছরের জীবনে অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। অনেক অনুবাদও করেছেন। কবিতা লেখার পুরোনো নিয়মকানুন ত্যাগ করে তিনি তুরস্কে নতুন স্বাদের কবিতা রচনার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন।ওরহান ভেলি কনিক (১৪ এপ্রিল ১৯১৪—১৪ নভেম্বর ১৯৫০)