এখনো গণভোটের বিষয়ে নির্দেশনা পায়নি ইসি
Published: 19th, November 2025 GMT
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট আয়োজনের জন্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতি শুরু করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা বা চিঠি পায়নি ইসি সচিবালয়। নির্দেশনা না পেলেও কমিশনের কর্মকর্তারা নিজেরা বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছেন।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৩ নভেম্বর (গত বৃহস্পতিবার) সরকার এই ঘোষণা দেয়। সেদিন জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশও জারি করা হয়।
আরও পড়ুনজাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে ১৩ নভেম্বর ২০২৫আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা আগেই দিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ইসির প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোটও আয়োজন করবে ইসি।
এবার সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁরা গণভোট দেওয়ারও সুযোগ পাবেন কি না, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রবাসীরা গণভোট দিতে পারবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ইসি এই সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি হলেও এখনো গণভোট আয়োজনের আইন বা অধ্যাদেশ হয়নি। এ জন্য আগে একটি নতুন আইন করতে হবে। সরকার এই আইন বা অধ্যাদেশ করবে। গণভোট পরিচালনার জন্য গণভোট আইনের অধীনে একটি বিধিমালা করারও প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জাতীয় নির্বাচনের মতো প্রবাসীদের গণভোটে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে গণভোটের জন্য সংশ্লিষ্ট আইন-বিধিতে এ-সংক্রান্ত বিধান রাখতে হবে। কারণ, জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) দিয়ে গণভোট পরিচালনা করা যাবে না।
আরও পড়ুনযে চার বিষয়ে হবে গণভোট, একটি প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে মতামত১৩ নভেম্বর ২০২৫ইসি সূত্র জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের গণভোট দেওয়ার সুযোগ দিলে ইসির তেমন বাড়তি খরচ হবে না। শুধু জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট পেপারের সঙ্গে গণভোটের ব্যালট পাঠাতে হবে। প্রবাসীদের কাছে ব্যালট পাঠানো হবে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগে। কিন্তু ভোট দেবেন প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর। তাই প্রবাসী ভোটারদের জন্য জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট আগেভাগেই ছাপানো হবে। সেখানে শুধু নিবন্ধিত দলগুলো এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীকগুলো থাকবে। প্রবাসীদের গণভোটের সুযোগ দেওয়া হলে তাদের জন্য গণভোটের ব্যালটও আগেভাগে ছাপাতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট এক রঙের এবং গণভোটের ব্যালট আরেক রঙের দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আছে।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতিও কার্যত হয়ে যাচ্ছে। তবে একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট করতে হলে কিছু বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হবে।
ইসি আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সারা দেশে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র এবং ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ (বুথ) নির্ধারণ করেছে। ইসি এবার গড়ে তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র এবং ৫০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি করে ও ৪০০ নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করেছে।
আরও পড়ুনকী হবে যদি গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়১৬ নভেম্বর ২০২৫ইসি সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের হিসাব করা হয়েছিল শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করতে ভোটকেন্দ্র না হলেও ভোটকক্ষ বা বুথের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কারণ, দুটি ভোট দিতে সময় বেশি লাগবে। ভোটকেন্দ্র বা ভোটকক্ষ বাড়ানো হলে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। সম্ভাব্য ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের পুল বা তালিকা করা আছে। কর্মকর্তা বাড়াতে খুব বেশি সমস্যা হবে না।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটকেন্দ্র বাড়ানো হবে নাকি ভোটকক্ষ বা বুথ বাড়ানো হবে, এ বিষয়ে সার্বিক পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। ভোটকেন্দ্র বাড়ালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়বে। এ ছাড়া একই দিনে দুই ভোট আয়োজনের জন্য অতিরিক্ত কিছু স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং আরও কিছু নির্বাচনী সামগ্রীও প্রয়োজন হতে পারে।
গতকাল নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ইসি এখন পর্যন্ত গণভোটের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পায়নি। নির্দেশনা পাওয়ার পর ইসি কী নির্দেশনা পেয়েছে এবং কর্মপরিকল্পনা কী, তা জানানো হবে। গণভোটের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রস্তুতির বিষয়টি সার্বক্ষণিক। তাঁরা নিজেরা আলোচনা করছেন। তবে কী আলোচনা করছেন, তা তিনি জানাননি।
আরও পড়ুনগণভোট দেশে হয়েছিল কতবার, ফল ছিল কী১৩ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র ভ টক ন দ র র প রস ত ত গণভ ট র ব র র জন য গণভ ট দ ভ টকক ষ প রব স করছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এপস্টাইন ফাইল প্রকাশের অনুমতি দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস
মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষই প্রয়াত দোষী সাব্যস্ত কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টাইনের বিচার বিভাগের ফাইলগুলো জনসম্মুখে প্রকাশের অনুমোদন দিয়েছে। পরিনিধি পরিষদ ৪২৭-১ ভোটে এটি অনুমোদন করেছে এবং সিনেট আনুষ্ঠানিক ভোট ছাড়াই সর্বসম্মতিক্রমে এটি দ্রুত পাস করেছে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আরো পড়ুন:
খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কিছুই জানতেন না সৌদি যুবরাজ: ট্রাম্প
মেক্সিকোতে সামরিক অভিযান চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রস্তাবটি এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টেবিলে যাবে। তার স্বাক্ষরের পর ৩০ দিনের মধ্যে মার্কিন বিচার বিভাগ এসব ফাইল প্রকাশ করবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কয়েক মাস ধরে এসব ফাইল প্রকাশের বিরোধিতা করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি আগের অবস্থান থেকে সরে এসে কংগ্রেসকে রেকর্ড প্রকাশের জন্য ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানোর মাত্র কয়েকদিন পরেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। ট্রাম্প তার অনেক সমর্থকের জনসমক্ষে প্রতিবাদের মুখে নথিপত্র প্রকাশের জন্য ভোট দিতে বলেছিলেন।
২০ হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার নথির মধ্যে কিছু জায়গায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথাও উল্লেখ রয়েছে। গত সপ্তাহে এটি ঘিরে এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক আবারও শিরোনামে আসে। যদিও কোনো অন্যায় কাজ করার কথা অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস।
এপস্টাইনের ফাইলটি প্রকাশের বিষয়ে পরিনিধি পরিষদে একমাত্র আপত্তিকারী ছিলেন লুইজিয়ানার রিপাবলিকান ক্লে হিগিন্স। এসব তথ্য প্রকাশের ফলে ‘নিরপরাধ মানুষদের আহত করা হচ্ছে’ বলেও উদ্বেগ জানিয়েছিলেন তিনি।
ক্যাপিটল হিলের যারা ফাইলটি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তাদেরকে আক্রমণ করার পরিবর্তে ট্রাম্পের ‘লুকানোর কিছু নেই’- এমন বক্তব্য ওয়াশিংটনের অনেককে অবাক করেছে।
এপস্টাইনের ফাইল প্রকাশে বারবার চাপ প্রয়োগ করার ঘটনাকে ‘ডেমোক্র্যাটদের প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন হাউস স্পিকার মাইক জনসন। মঙ্গলবার তিনি প্রকাশের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
মার্কিন সিনেটে এই পদক্ষেপটি শেষ হতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু হাউসে বিকেলের ভোটের পর, ঘটনাক্রম দ্রুত গতিতে বদলাতে থাকে।
সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার বিলটি উত্থাপন করেন। এ নিয়ে যেহেতু কেউ আপত্তি করেনি, তাই কোনো বিতর্কও হয়নি এবং বিলটিতে কোনো সংশোধনী যুক্ত করা হয়নি।
বিলটি সিনেট থেকে প্রেসিডেন্টের ডেস্কে যাবে, যেখানে তিনি এটিকে আইনে পরিণত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফাইলগুলো প্রকাশের জন্য কংগ্রেসের ভোটের প্রয়োজন ছিল না- ট্রাম্প নিজেই প্রকাশের আদেশ দিতে পারতেন।
বিলটিতে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে আইন প্রণয়নের ৩০ দিনের মধ্যে এপস্টাইন এবং তার সহযোগী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের সাথে সম্পর্কিত ‘সব রেকর্ড, নথি, যোগাযোগ এবং তদন্তমূলক উপকরণ’ প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যৌন অপরাধী ও অর্থদাতা এপস্টাইনকে ২০১৯ সালে নিউ ইয়র্কের কারাগারে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে রায় দেওয়া হয়।
২০১৯ সালে যৌনতার জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের একটি নেটওয়ার্ক চালানোর অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছিল। এর ১১ বছর আগেও ২০১৮ সালে এক নাবালিকাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
এপস্টাইনের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি তদন্তের সময়, হাজার হাজার নথি সংগ্রহ করা হয়েছিল, যার মধ্যে ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীদের সাক্ষাৎকারের প্রতিলিপি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এপস্টাইনের নির্যাতনের শিকার অ্যানি ফার্মার মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ফাইলগুলো গোপন রাখা ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসঘাতকতা’র শামিল। যেহেতু এই অপরাধগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি, তাই আরও অনেক মেয়ে এবং নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”
ট্রাম্প এবং এপস্টাইন পূর্বে একই ধরনের লোকদের সাথে মেলামেশা করতেন। কিন্তু ট্রাম্প দাবি করেন, ২০০৮ সালে এপস্টাইন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো দাবি করেন যে, তিনি এপস্টাইনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
গত সপ্তাহে, হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাটরা তিনটি ইমেইল চেইন প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে এপস্টাইন এবং ম্যাক্সওয়েলের মধ্যে চিঠিপত্র, যিনি বর্তমানে যৌন পাচারের জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
এদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে ২০১১ সালে পাঠানো একটি ইমেইলও রয়েছে, যেখানে এপস্টাইন ম্যাক্সওয়েলকে লিখেছিলেন: "আমি চাই তুমি বুঝতে পারো যে কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করেনি সে ট্রাম্প, (ভিক্টিম) তার সাথে আমার বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছে।"
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে ইমেইলে উল্লেখিত ভুক্তভোগী হলেন এপস্টাইনকে অভিযুক্ত করা ভার্জিনিয়া গিফ্রে।
এপ্রিল মাসে মারা যাওয়া গিফ্রে বলেছিলেন যে তিনি কখনও ট্রাম্পকে কোনো নির্যাতনে অংশ নিতে দেখেননি এবং ইমেইলগুলোতে ট্রাম্পের কোনো অন্যায়ের কোনো ইঙ্গিত নেই।
ট্রাম্পও এপস্টাইনের সাথে সম্পর্কিত কোনো অন্যায়ের কথা বারবার অস্বীকার করে আসছেন।
ঢাকা/ফিরোজ