লালদিয়ার পর এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিউমুরিং টার্মিনাল
Published: 18th, November 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বা এনসিটি বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। আগামী ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি ডিপিওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তির জন্য কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৬ নভেম্বর প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়নের জন্য ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এই কমিটির অনুমোদনের জন্য চিঠি দেন বন্দরসচিব মো.
গত সোমবার লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ঢাকার একটি হোটেলে ডেনমার্কের মায়ের্সক গ্রুপের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের কোম্পানির সঙ্গে ৩৩ বছরের জন্য কনসেশন চুক্তি হয়। একই দিন বিকেলে বুড়িগঙ্গার তীরে পানগাঁও নৌ টার্মিনাল ২২ বছর পরিচালনার জন্য সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয় বন্দরের।
এদিকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি–সম্পর্কিত প্রক্রিয়ার প্রশ্নে রুল শুনানি আজ বুধবার হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন চলতি বছর রিট করেন।
আদালতে বিচার চলমান অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান রিট আবেদনকারীর আইনজীবী। রিটকারীর আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিট শুনানির জন্য অপেক্ষামাণ। আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কার্যক্রম গ্রহণ আদালত অবমাননার শামিল।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়। বর্তমানে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার আগপর্যন্ত চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড এই টার্মিনালটি পরিচালনা করার কথা রয়েছে।
‘লাভজনক টার্মিনালগুলো বিদেশিদের দেওয়া যাবে না’নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালসহ (সিসিটি) চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি কোম্পানির কাছে না দেওয়ার দাবিতে মশালমিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে বন্দর রক্ষা পরিষদ। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের বড়পোল এলাকায় পোর্ট কানেকটিং সড়কে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ সময় সাময়িকভাবে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
মিছিল–পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মারুফ। বন্দর রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক আবু সাইদ হারুনের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন শ্রমিক নেতা মো. হুমায়ুন কবীর। বক্তব্য দেন বন্দরের সাবেক সিবিএ নেতা মোজাহের হোসেন, মো. আবুল কালাম প্রমুখ।
আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বন্দরের দুই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বে বিদেশিরা১৭ নভেম্বর ২০২৫সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মারুফ বলেন, বন্দর উন্নয়নের নাম করে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। দুই দিন আগের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বন্দর আগের চেয়ে ২১ ভাগ বেশি আয় করেছে। যদি দক্ষতা বাড়াতে হয় তাহলে বিদেশি ট্রেইনার আনা যায়। দক্ষতার নামে এ দেশের বন্দর ইজারা দেওয়ার অধিকার নেই। সিসিটি, এনসিটির মতো লাভজনক টার্মিনালগুলো বিদেশিদের দেওয়া যাবে না।
প্রধান বক্তা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনাল থেকে বর্তমানে প্রতি একক কনটেইনারে বন্দর প্রায় ১৬৫ ডলার আয় করে। যার মধ্যে অপারেটর খরচ ও অন্যান্য ব্যয় বাদে আয় থাকে প্রায় ১১৫ ডলার। যদি ডিপি ওয়ার্ল্ড টার্মিনালটি পরিচালনা করে এবং বাংলাদেশকে মাত্র ৫০ ডলার দেয়, তাহলে প্রতি এককে তারা দেশে থেকে নিয়ে যাবে প্রায় ৬৫ ডলার। ট্যারিফ বাড়ালে এ পরিমাণ আরও প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে, যা দেশের ডলার সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আজিম, বিভাগীয় শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক গাজী আইয়ুব, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিকি, বন্দর শ্রমিক দলনেতা শেখ ছানুয়ার মিয়া, আকতার হোসেন, মোস্তফা চৌধুরী, মো. নাছির উদ্দিন, মোশারফ হোসেন, দিদারুল আলম, আনোয়ার হোসেন, গোলাম ছরোয়ার, মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র জন য প রক র য় এনস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলা আবশ্যক: এইচআরডব্লিউ
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ২০২৪ সালের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, দুজনেরই অনুপস্থিতিতে এ বিচার করা হয়েছে। তাঁরা নিজেদের পছন্দের আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব পাননি। আদালত তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, যা গুরুতর মানবাধিকার উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ মামলার তৃতীয় আসামি সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। তিনি প্রসিকিউশনের সাক্ষী (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে সাজা কমিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, হাসিনার দমনমূলক শাসন নিয়ে বাংলাদেশে এখনো ক্ষোভ ও বেদনা বিদ্যমান। তবে সব ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়বিচারের মানদণ্ড মেনে চলা আবশ্যক।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলি আরও বলেন, হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত ভয়ংকর নির্যাতন-নিপীড়নের জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। আর তা হতে হবে নিরপেক্ষ তদন্ত ও গ্রহণযোগ্য বিচারের মাধ্যমে।
এইচআরডব্লিউর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের তিন সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভকালে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ বিক্ষোভেই হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ ও দমন–পীড়নে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারী।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি১৫ ঘণ্টা আগেএইচআরডব্লিউ বলেছে, যাঁরা নির্যাতন ও দমন–পীড়নের জন্য দায়ী, তাঁদের যথাযথভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তবে বিচারকাজ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ এবং নিজের পছন্দের আইনজীবীর প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় বিচারপ্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, প্রসিকিউশন ৫৪ জন সাক্ষী হাজির করেছিল। তাঁদের প্রায় অর্ধেকই বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যরা ছিলেন ভুক্তভোগী বা তাঁদের পরিবারের সদস্য। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং ছিল। যেখানে তিনি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করা হয়।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আসামিদের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি। তিনি সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলেও অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করেননি।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের হত্যাযজ্ঞের ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৯ ঘণ্টা আগেএইচআরডব্লিউর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখেন, যা অবশ্যই প্রকৃত স্বাধীন ও ন্যায়সংগত বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা মানে আসামিদের অধিকার রক্ষা করাও। এর মধ্যে রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করা, যা স্বভাবগতভাবে নির্মম ও অপরিবর্তনীয়।
আরও পড়ুনএ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর১০ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনআন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর কতটা গুরুত্ব পেল১৬ ঘণ্টা আগে