গুনে গুনে ২০ বছর আগের দিনটি যেন ফিরে এলো। হাবিবুল বাশার তখন টেস্ট দলের অধিনায়ক। মুশফিকুর রহিম পা রাখলেন ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে। বাংলাদেশের ৪১তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে যাত্রা শুরু হলো ১৬ বছর বয়সী মুশফিকুরের। লর্ডসে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড।

সেই মুহূর্তটাই যেন ২০ বছর পর ফিরে এলো মিরপুর শের-ই-বাংলায়। মুশফিকুর রহিমের একশতম টেস্টে। হাবিবুল বাশার আবারো ক‌্যাপ দিলেন মুশফিকুরকে। ওই একই ক‌্যাপ নয়। মুশফিকুর রহিমের জন‌্য বিশেষ ১০০তম টেস্ট ক‌্যাপ।

আরো পড়ুন:

শততম টেস্টের মঞ্চে মুশফিকুরকে সম্মানজনক সংবর্ধনা

শতরানের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাংলাদেশ

নতুন ক‌্যাপ, নতুন স্মৃতি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হানড্রেড টেস্ট খেলা মুশফিকুরের পছন্দ সেই অভিষেকের ক‌্যাপ। ২০০৫ সালে যেটা পেয়েছিলেন।

যেই ক‌্যাপটির রয়েছে বিশেষত্ব। যে ক‌্যাপে মিশে আছে ভালোবাসা, গর্ব, সম্মান, ঐশ্বর্যসহ কতো কিছু। ক‌্যাপটার বর্ণনা দিতে গেলে স্রেফ দুটি শব্দ ব‌্যবহার করলেই হবে, রঙ চটা! সত্যিই তাই। 

ক‌্যাপটার রঙ একেবারে চটে গেছে। পুরোপুরি পুরোনো দেখায়। অথচ বছরের পর বছর এই ক্যাপটা টেস্ট ম‌্যাচে পরে যাচ্ছেন মুশফিকুর। ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে কিন্তু গর্ব কমেনি। ক‌্যাপের গাঢ় সবুজ রঙ এখন ধূসর। কিন্তু মুশফিকুরের কাছে সর্বদা চাকচিক‌্যময়। বাঘের ছবিসংবলিত বিসিবির লোগো অদৃশ‌্যই হয়ে গেছে। কিন্তু হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছেন সব। 

স্রেফ ভালোবাসা, টান, ক‌্যাপটির প্রতি শ্রদ্ধার কারণেই মুশফিকুরের মাথায় থাকে তার টেস্ট ক‌্যাপ। ২০ বছর হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের পথচলা। লম্বা সময় পেরিয়ে তার মাথায় আজও শোভা পায় সেই ক‌্যাপ। দিন দশেক আগে ক্যাপটির ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন মুশফিকুর রহিম। ক‌্যাপশন দিয়েছিলেন, ‘‘সকল উত্থান-পতনের সঙ্গী…।’’ 

সত‌্যিই কি তা-ই নয়। সময় বদলেছে। ভেন্যু থেকে ভেন্যুতে গিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৩৫টি। কতকত বোলারকে খেলেছেন। বল খেলেছেন, ১৩ হাজার ১৩৯। ছয় হাজারের বেশি রান করেছেন। তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি নামের পাশে। সব কিছুর সাক্ষী এই রঙচটা ক‌্যাপ। পরম যত্নে এখনও বহন করেন লর্ডসে পাওয়া গৌরবের টুকরো। যা তাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, এই ক‌্যাপটার জন‌্যই তো কতো পরিশ্রম করা। কতো ঘাম ঝরানো। কত ঘুম ত‌্যাগ, কতো আনন্দ সময় বিসর্জন। সেজন‌্যই তো মাইলফলক ছোঁয়া দিনটাতে তার এই ক‌্যাপটাই কেড়ে নেয় সব আলো।

মুশফিকুর তার টেস্ট অভিষেক করেছিলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি, কেভিন পিটারসেন, মাইকেল হাসি এবং অ্যালিস্টার কুকেরও আগে। দুই দশক পরে, তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ২০০৫ সালে অভিষেকের পর এখনও টেস্ট ক্রিকেটে সক্রিয়। অথচ বাকি যে তিনজনের কথা বলা হলো তাদের দুজন পিটারসেন ১০৫ ও কুক ১৬১ টেস্ট খেলে অবসর নিয়ে নিয়েছেন। ধোনি সমসাময়িক সময়ে।

মুশফিকের পুরো ক‌্যারিয়ারকে দুটি ভাগে ভাগ করতে হবে। যেখানে একটি ভাগে শুধু নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। আরেকটিতে কেবল অর্জনের স্রোত।

২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩০ ম‌্যাচে মাত্র ১৫৮৭ রান করেছিলেন। ব‌্যাটিং গড় ২৮.

৮৫। সেঞ্চুরি মাত্র ১টি। প্রথম ১৫টি টেস্ট ইনিংসে, যা প্রায় তিন বছর জুড়ে ছিল, মুশফিকুর মাত্র চারবার দুই অঙ্কের স্কোরে পৌঁছান। তার গড় ৩০ স্পর্শ করেনি ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত। ৩১তম টেস্ট ম্যাচ খেলার পর মুশফিকুর খুঁজে পান নিজেকে। পায়ের নিচের মাটি শক্ত হয়। গলে মুশফিকুর করেন তার ক‌্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি।

২০১৩ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত  ৬৯ ম‌্যাচে ৪৭৬৪ রান মুশফিকুরের নামের পাশে। ব‌্যাটিং গড় ৪২.৫৩। সেঞ্চুরি অবিশ্বাস‌্য। যে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি, প্রতিটি এই সময়টাতেই।

নিশ্চিতভাবেই মুশফিকুর বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে গণ্য হবেন, যার দেরিতে উত্থান তাকে তার সমসাময়িক সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে স্থান দিয়েছে। তিনি যা যা করেছেন এবং যত দিন টিকে আছেন, তা নিজস্বভাবেই এক শ্রেষ্ঠত্ব।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

শততম টেস্টের মঞ্চে মুশফিকুরকে সম্মানজনক সংবর্ধনা

২৬০৭ তম টেস্ট চলছে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের ১৫৬তম। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বয়স ২৫ পেরিয়েছে। লম্বা পথ পেরোনোর পর বাংলাদেশ পেল টেস্ট ক্রিকেটের একশতম খেলোয়াড়। মুশফিকুর রহিম প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে পেলেন হানড্রেড টেস্ট খেলার সুযোগ। যে সুযোগটি তিনি পেয়েছেন অজস্র পরিশ্রম, নিবেদন, তাড়না দেখিয়ে। ২২ গজে পরিশ্রমের ফুল ফুটিয়ে, সততা ও নিষ্ঠার আলো ছড়িয়ে নিজেকে পাহাড়শৃঙ্গের শেপরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তার মাইলফলক ছোঁয়া দিনটি রাঙিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সম্মানজনক সংবর্ধনায় তাকে দিয়েছে বিরাট সম্মান। বিরাট এই দিনে মুশফিকুর পাশে পেয়েছেন তার বাবা-মা, স্ত্রী ও সন্তানদের। ছুটে এসেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। এছাড়া বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, তার প্রথম টেস্ট অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, ২০০৫ সালে প্রথম টেস্টের সতীর্থরা ছিলেন মাঠে।

আরো পড়ুন:

মুশফিকুরের ‘সেঞ্চুরির’ রঙে রাঙানো ক্যানভাস

মুশফিকুরের শততম টেস্ট: যেসব আয়োজন রেখেছে বিসিবি

শুরুতে তাকে বিশেষ টেস্ট ক্যাপ তুলে দেন হাবিবুল বাশার। যিনি ২০০৫ সালে লর্ডসে মুশফিকের হাতে প্রথম টেস্ট ক্যাপ তুলে দিয়েছিলেন। এরপর ক্যাপের বিশেষ কেসকেট প্রদান করেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার আকরাম খান। এরপর বিশেষ ক্রেস্ট তুলে দেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান ও বর্তমান বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সঙ্গে ছিলেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

এরপর হাবিবুল বাশার এবং বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর অটোগ্রাফ দেওয়া জার্সি পেয়েছেন মুশফিকুর। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে নাজমুল বলেছেন, ‘‘আপনার মতো খেলতে চেয়েছি, ছোটবেলা থেকে আপনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি। আশা করি আপনি এভাবেই খেলে যাবেন। যেভাবে আপনি মাঠে ও মাঠের বাইরে সবসময় পরিশ্রম করেন। সবাই আপনার পরিশ্রম ও পাগলামির কথা বলে। কিন্তু আপনি সবসময় দলের জন্য খেলেন, দলের কথা ভাবেন- নিজের ক্রিকেট খেলেন না। এটা আমাদের জন্য সবসময় অনুপ্রাণার, বিশেষত যাঁরা তরুণ ক্রিকেটার টেস্ট খেলতে চায়, তাঁদের জন্য। আমাদের সঙ্গে খেলায় আপনাকে ধন্যবাদ, আমি আশা করি আপনি খেলা চালিয়ে যাবেন।’’

মুশফিকুর নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়েছিলেন মেয়েকে কোলে নিয়ে। মুখে চওড়া হাসি, বুক ভরা গর্ব নিয়ে মুশফিকুর বলেছেন, ‘‘আল্লাহকে ধন্যবাদ এমন দারুণ একটা সুযোগের জন্য। যাঁরা উপস্থিত আছেন আপনাদের সবাইকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার পরিবারের সব সদস্য, বাবা–মাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। বিশেষত আমার স্ত্রীকে, যে অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। আমার সতীর্থ, কোচ, বন্ধু ও সব ভক্তদেরও ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই। আমিও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একশ ভাগ দেব, যেমনটা সবসময় চেষ্টা করি। আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দলকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই এখানে আসার জন্য।’’

এরপর ফটোসেশনে অংশ নেন সবাই। ২০০৫ সালে লর্ডস টেস্টে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে থাকা হাবিবুল, আনোয়ার হোসেন মনির, মোহাম্মদ রফিক, নাফিস ইকবাল, মোহাম্মদ আশরাফুল, খালেদ মাসুদ উপস্থিত ছিলেন মুশফিকুরের ঐতিহাসিক মঞ্চে। গ্র‌্যান্ড স্ট‌্যান্ডে থাকা সমর্থকদের সঙ্গেও ছবি তোলেন। মুশফিকুরের এই মুহুর্তটা গ্র‌্যান্ড স্ট‌্যান্ডে থেকে উপভোগ করেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররা।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শততম টেস্টের মঞ্চে মুশফিকুরকে সম্মানজনক সংবর্ধনা
  • মুশফিকুরের শততম টেস্ট: যেসব আয়োজন রেখেছে বিসিবি
  • প্রতিবন্ধীদের আইনি অধিকার থাকলেও জীবনের বঞ্চনা কাটেনি
  • নাতির অপেক্ষায় ৩ বছর