ব্যস্ততা নেই, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় কর্মকর্তা–কর্মচারীরা
Published: 19th, November 2025 GMT
ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনায় ২২ বছরের জন্য দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ। টার্মিনালটি নির্মাণের এক যুগের বেশি সময় পরও এটিকে লাভজনক করতে না পারায় সেটিকে বিদেশিদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই টার্মিনাল শুধু পরিচালনার দায়িত্ব কেন বিদেশিদের হাতে দেওয়া হলো—এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যেও রয়েছে নানা আলোচনা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে পানগাঁও টার্মিনালটি নির্মাণ করে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হয় ১৪৯ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে এটির কার্যক্রম শুরু হলেও প্রথম জাহাজ ভেড়ে ২০১৫ সালে। পরে ২০১৮ সাল থেকে কনটেইনার ওঠানামা বাড়তে থাকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮ হাজারের বেশি একক কনটেইনার পণ্য ব্যবস্থাপনা হয় এই টার্মিনালে। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা দেড় হাজার একক কনটেইনারে নেমে আসে।
সরকারি হিসাবে, গত ১২ বছরে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে এই টার্মিনালে। প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা লোকসান করে টার্মিনালটি। এখন বিদেশিদের হাতে দেওয়ায় বছরে ১ কোটি ১ লাখ টাকা মাশুল পাবে সরকার।
সরেজমিনে গতকাল পানগাঁও টার্মিনাল ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো কর্মচাঞ্চল্য ছিল না সেখানে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায়। সবার মাঝে গতকাল আলোচনার মূল বিষয় ছিল এরপর কী হবে? টার্মিনালটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সর্বশেষ এই টার্মিনালে পণ্যবোঝাই জাহাজ ভিড়েছিল ১১ নভেম্বর। তাঁরা জানান, বর্তমানে সপ্তাহে একটিও জাহাজ আসে না। তাই জাহাজ না থাকলে এই টার্মিনালে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে শ্রমিকদের তেমন ব্যস্ততা থাকে না। তাই জাহাজ না থাকলে অনেকটা অলস সময় কাটে তাঁদের। গতকালও তেমনই দেখা যায় সরেজমিনে। তবে এই অলস সময়ের আলোচনায় যুক্ত হয়েছে বিদেশিদের সঙ্গে করা টার্মিনালটি পরিচালনা চুক্তি। এই চুক্তির কারণে কারা থাকবেন, কারা থাকবেন না—এই ছিল আলোচনার মূল বিষয়। অনেকেই বিদায়ের প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই টার্মিনালে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক মিলিয়ে বর্তমানে রয়েছেন ৫০০ জন। যার মধ্যে ৩৯১ জনই শ্রমিক। এর বাইরে আছেন কাস্টমসের কর্মকর্তা। এ ছাড়া পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজে বেসরকারি খাতের বেশ কিছু শ্রমিক ভাড়ায় কাজ করেন। তবে টার্মিনালে জাহাজ না ভিড়লে শ্রমিকদের নিয়মিত তেমন কোনো কাজ থাকে না। টার্মিনালটি পরিচালনায় বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তির পর এসব শ্রমিক এখন আরও বেশি শঙ্কিত তাঁদের চাকরি নিয়ে। চাকরি বহালের দাবিতে গতকাল তাঁরা টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো.
পানগাঁও টার্মিনাল দিয়ে আমদানি হওয়া কৃষিপণ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আফরিন সুলতানা। তিনিও এখন শঙ্কায় আছেন চুক্তির পর তাঁর অবস্থান কী হবে, সেই ভাবনায়। আফরিন সুলতানা জানান, এই টার্মিনাল দিয়ে কখনো মাসে একটি, কখনো বড়জোর দুটি কৃষিপণ্যের চালান আসে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই টার্মিনালের বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ১০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিযুক্ত রয়েছেন। তাঁদের সবাই ধারণা করছেন নতুন চুক্তির ফলে তাঁদের এই টার্মিনাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। টার্মিনালটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন বন্দর নিযুক্ত একজন টার্মিনাল ব্যবস্থাপক। গতকাল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁর কাছে নানা বিষয় জানতে ভিড় করেন। কিন্তু তিনিও সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারছেন না। পরে টার্মিনাল ব্যবস্থাপকের সঙ্গে টার্মিনালের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
টার্মিনালটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এখন টার্মিনালে ১৫৪টি পণ্যভর্তি কনটেইনার রয়েছে। তার মধ্যে ১০৮টিই বিভিন্ন মামলায় নিলামে উঠেছে। তাঁরা জানান, বর্তমানে মাসে গড়ে পণ্যবোঝাই তিনটি জাহাজ ভেড়ে এই টার্মিনালে। এই টার্মিনাল দিয়ে কম পণ্য আসার জন্য পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা ও বেশি খরচকে বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নেওয়াজ শরিফ। তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে একটি স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা চালায়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁও টার্মিনালে এক কনটেইনার পণ্য পরিবহনে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া পড়ে। কিন্তু রেলপথে পণ্য পরিবহনে খরচ তার চেয়ে কম। আবার সময়ও লাগে বেশি। তাই এই টার্মিনাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন ব্যবহারকারীরা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই ট র ম ন ল কর মকর ত র জন য গতক ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাক্তন স্ত্রী দেবশ্রীর সঙ্গে প্রসেনজিৎ জুটি, সঙ্গী ঋতুপর্ণা
ভারতীয় বাংলা সিনেমার তারকা জুটি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ও দেবশ্রী রায়। পর্দায় এ জুটির রোমান্স দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অসংখ্য ভক্ত। রুপালি পর্দার রোমান্স ব্যক্তিগত জীবনেও গড়ায়। ভালোবেসে দেবশ্রী রায়কে বিয়ে করেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু কয়েক বছর পরই এ বিয়ে ভেঙে যায়। তারপর দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায়।
সংসার ভাঙার পাশাপাশি দর্শক হারান রুপালি পর্দার জনপ্রিয় এই জুটিকে। এরপর আর কোনো সিনেমায় একসঙ্গে দেখা যায়নি তাদের। কয়েক মাস আগে দূরত্ব কমিয়ে দেবশ্রীর সঙ্গে সিনেমা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন প্রসেনজিৎ।
আরো পড়ুন:
মুখোমুখি জিতু-দিতিপ্রিয়া, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সংকট কী কাটল?
গায়িকা থেকে সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক, মৈথিলীকে কতটা জানেন?
এবার টলিপাড়ার সুপারস্টার আনন্দের খবর দিয়ে বললেন, “খুব শিগগির কিছু ঘটতে চলেছে। আমাদের অতি পরিচিত দুই পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখার্জি ও নন্দিতা রায় ‘প্রাক্তন টু’ করতে চান। আমাকে দেবশ্রী রায় এবং ঋতুকে নিয়ে।”
এর আগে ‘আমি যখন হেমা মালিনী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেছিলেন—“দেব-শুভশ্রী জুটির পর আমি চাই আবার প্রসেনজিৎ-দেবশ্রী জুটি ফিরুক, এই জুটিটা ফেরার অত্যন্ত প্রয়োজন।” ‘দেবী চৌধুরানী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিতের এই বক্তব্য প্রসেনজিৎকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে প্রসেনজিৎ বলেছিলেন, “আমি তো চাই দীপকদা একটা স্ক্রিপ্ট লিখুক আমাদের জন্য, আমার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল এবং আমি অনেকবার দীপকদাকে বলেছি যে, আমি তোমার পরিচালনায় একটা কাজ করতে চাই। দীপকদা, আমাদের জন্য যদি পরিচালনা করেন তাহলে অবশ্যই আমি সিনেমা করতে চাই। আর আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে দেবশ্রীর সঙ্গে আবারো একটা পরিণত প্রেমের সিনেমা করতে চাই।”
তাহলে কী পুরোনো তিক্ততা ভুলে গেছেন প্রসেনজিৎ? জবাবে এই নায়ক বলেছিলেন, “আমার কারো সঙ্গে কোনো তিক্ততা নেই। যে আমার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলবে, আমি সব সময় তাদের জন্য আছি। আর কোনো তিক্ততা নিয়ে বাঁচতে চাই না, যে কটা দিন আছি সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নিয়েই থাকতে চাই।”
এক সময় দেবশ্রীকে নিয়ে কথা বলতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন না প্রসেনজিৎ। তবে অভিমান ভুলে কাজের ক্ষেত্রে আবার এক হওয়ার কথা বললেন তিনি। বর্তমানকে ভালোবেসে যেমন এগিয়ে যান, ঠিক তেমনই কি অতীতকেও আঁকড়ে বাঁচেন?
এ প্রশ্নের জবাবে প্রসেনজিৎ বলেছিলেন, “নিজের অতীতকে কখনো উপেক্ষা করা যায় না। মাঝেমাঝেই আমি আমার অতীতে ফিরে যাই; সেই সময়গুলোর জন্যই আজকের আমি। অতীত আমাকে অনেক ভালোবাসা, রাগ-দুঃখ-ক্ষোভ দিয়েছে। আমার ক্ষেত্রে যেটা অল্প কিন্তু তবু আছে সেটা হলো—ঘৃণা। সেটাও পেয়েছি, তবে অতীত যেমনই হোক না কেন, তাকে কখনো ফেলে দেওয়া যায় না। আমরা সবাই মাঝে মাঝে অতীতে ফিরে যাই।”
সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেছে। বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেও দ্বিধাবোধ করেন না প্রসেনজিৎ। তার ভাষায়—“এই বদলগুলোকে মেনে না নিলে আমাকে পিছিয়ে পড়তে হবে। আমি প্রচুর বদল দেখেছি, তবে যেই সময় যেটা এসেছে, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছি, এটাই তো করা উচিত। না হলে বর্তমান প্রজন্ম থেকে দূরে সরে যেতে হবে।”
দেবশ্রী-প্রসেনজিৎ অনেক ছোটবেলা থেকে একে অপরকে চিনতেন। ১৯৯২ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়েন দেবশ্রী-প্রসেনজিৎ। ১৯৯৫ সালে এ সংসার ভেঙে যায়। ১৯৯৭ সালে অপর্ণা গুহ ঠাকুরতার সঙ্গে ঘর বাঁধেন প্রসেনেজিৎ। কিন্তু এই বিয়েও ভেঙে যায়। বর্তমানে অর্পিতাকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছেন এই নায়ক।
ঢাকা/শান্ত