ব্যাংক খাতে গত বছর রেকর্ড লোকসান করেছে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা ইউনিয়ন ব্যাংক। গত বছর শেষে ব্যাংকটি প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান করেছে। তাতে বছর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪৯ টাকা। ১৩ নভেম্বর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। তাতেই বিপুল লোকসানের এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ইউনিয়ন ব্যাংকসহ শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক বর্তমানে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় থাকা অপর চারটি ব্যাংক হলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটি ব্যাংকই ছিল আর্থিক খাতের সমালোচিত প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের অধীন। গত বছরের আগস্টে সরকার বদলের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে ব্যাংকগুলোর গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ইউনিয়ন ব্যাংক তাদের গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে।

ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ঋণ বা বিনিয়োগের বিপরীতে ব্যাংকটি সুদ আয় করেছে ৫২৯ কোটি টাকা। তার বিপরীতে আমানতের সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ২ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। তাতে বছর শেষে ব্যাংকটির ঋণের সুদ আয়ের চেয়ে আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা বেশি ছিল। ফলে ব্যাংক ব্যবসার মূল আয় সুদ থেকে ব্যাংকটি মুনাফার চেয়ে বড় অঙ্কের লোকসান করেছে। এ ছাড়া গত বছর ব্যাংকটির পরিচালন খরচ বাবদ খরচ ছিল ৩৯৬ কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অনাদায়ি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটিকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করতে হয় ২৩ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। বিরাট অঙ্কের এই প্রভিশনিংয়ের কারণে বছর শেষে রেকর্ড ২৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান করে ব্যাংকটি। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ব্যাংকটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ২৮৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির লোকসান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরই মূলত ব্যাংকটির প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এর আগে ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে ব্যাংকটির আর্থিক তথ্য প্রকাশ করা হতো, যা প্রকৃত তথ্য ছিল না। পটপরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও কঠোর হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ব্যাংকটির বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। যার বড় অংশই নামে–বেনামে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি থেকে বের করে নিয়েছে। ফলে পটপরিবর্তনের পর এসব ঋণ আর ফেরত আসছে না। এ কারণে বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রাখতে হয়েছে ব্যাংকটিকে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শেষে ব্যাংকটিতে গ্রাহকদের আমানতের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আমানতের চেয়েও ব্যাংকটির লোকসান কয়েক হাজার কোটি টাকা বেশি। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গত বছর র র ব পর ত বছর শ ষ ন র পর ন ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

রেকর্ড ২৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান ইউনিয়ন ব্যাংকের

ব্যাংক খাতে গত বছর রেকর্ড লোকসান করেছে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা ইউনিয়ন ব্যাংক। গত বছর শেষে ব্যাংকটি প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান করেছে। তাতে বছর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪৯ টাকা। ১৩ নভেম্বর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। তাতেই বিপুল লোকসানের এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ইউনিয়ন ব্যাংকসহ শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক বর্তমানে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় থাকা অপর চারটি ব্যাংক হলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটি ব্যাংকই ছিল আর্থিক খাতের সমালোচিত প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের অধীন। গত বছরের আগস্টে সরকার বদলের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে ব্যাংকগুলোর গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ইউনিয়ন ব্যাংক তাদের গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে।

ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ঋণ বা বিনিয়োগের বিপরীতে ব্যাংকটি সুদ আয় করেছে ৫২৯ কোটি টাকা। তার বিপরীতে আমানতের সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ২ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। তাতে বছর শেষে ব্যাংকটির ঋণের সুদ আয়ের চেয়ে আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা বেশি ছিল। ফলে ব্যাংক ব্যবসার মূল আয় সুদ থেকে ব্যাংকটি মুনাফার চেয়ে বড় অঙ্কের লোকসান করেছে। এ ছাড়া গত বছর ব্যাংকটির পরিচালন খরচ বাবদ খরচ ছিল ৩৯৬ কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অনাদায়ি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটিকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করতে হয় ২৩ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। বিরাট অঙ্কের এই প্রভিশনিংয়ের কারণে বছর শেষে রেকর্ড ২৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান করে ব্যাংকটি। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ব্যাংকটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ২৮৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির লোকসান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরই মূলত ব্যাংকটির প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এর আগে ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে ব্যাংকটির আর্থিক তথ্য প্রকাশ করা হতো, যা প্রকৃত তথ্য ছিল না। পটপরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও কঠোর হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ব্যাংকটির বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। যার বড় অংশই নামে–বেনামে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি থেকে বের করে নিয়েছে। ফলে পটপরিবর্তনের পর এসব ঋণ আর ফেরত আসছে না। এ কারণে বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রাখতে হয়েছে ব্যাংকটিকে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শেষে ব্যাংকটিতে গ্রাহকদের আমানতের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আমানতের চেয়েও ব্যাংকটির লোকসান কয়েক হাজার কোটি টাকা বেশি। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ