অনেক বছর ধরে একই কাঠামো, একই সিলেবাস ও একই ধাঁচের প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিসিএস পরীক্ষা। বিশেষ করে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, শিক্ষকসহ বিশেষায়িত ক্যাডারের প্রার্থীরা এমন বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন, যা তাঁদের পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। দেশের চাকরির চাহিদা, প্রশাসনিক পরিবেশ ও প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সিলেবাসের সামঞ্জস্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনও (পিএসসি) বিসিএস পরীক্ষার এই পুরোনো সিলেবাসকে এখন আর সময়ের সঙ্গে মানানসই মনে করছে না। দীর্ঘদিনের সমালোচনা ও বিশ্লেষণের পর পিএসসি সিলেবাস হালনাগাদ ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। পিএসসি ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে ১৬ নভেম্বর ঢাকায় আয়োজিত কর্মশালায় সিলেবাস পরিবর্তনের প্রাথমিক রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়। তবে চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, পিএসসি এর আগেও এমন উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সিলেবাস সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও পটভূমি

বিসিএস পরীক্ষা মূলত সাধারণ ও কারিগরি—দুই ধরনের ক্যাডারের জন্য নেওয়া হয়। সাধারণ ক্যাডারে প্রশাসন, পররাষ্ট্র, পুলিশ, কর ও হিসাবসংক্রান্ত চাকরি থাকলেও কারিগরি ক্যাডারে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও কলেজশিক্ষক। কিন্তু সব ক্যাডারের জন্য প্রায় একই সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ায় বিশেষায়িত পদে আবেদনকারীদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান যথাযথভাবে যাচাই করার সুযোগ কম থাকে।

লেখক–গবেষক ড.

আকবর আলি খান তাঁর বই ‘অবাক বাংলাদেশ–বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি’–এ উল্লেখ করেছেন, ‘বিশেষজ্ঞ নিয়োগে এ ধরনের একীভূত পরীক্ষা বিশ্বের অন্য কোথাও নেই। চিকিৎসক, কৃষিবিদ ও বিজ্ঞানীদের মূল জ্ঞান যাচাই করার সুযোগ যথেষ্ট নেই। প্রাথমিক ও লিখিত পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন স্বল্প, আর অন্যান্য বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় নম্বর বরাদ্দ করা হয়।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান সিলেবাস দীর্ঘ, জটিল ও বিশেষায়িত দক্ষতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। বিশেষ করে লিখিত পরীক্ষায় ৭০০ নম্বর সাধারণ বিষয়ে এবং মাত্র ২০০ নম্বর পেশাগত বিষয়ে বরাদ্দ থাকার কারণে প্রার্থীদের প্রকৃত যোগ্যতা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুনস্থানীয় সরকার বিভাগে বড় নিয়োগ, পদ ৮৯৭২১ ঘণ্টা আগে

বর্তমান সিলেবাসের কাঠামো ও সীমাবদ্ধতা

বর্তমান বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ) পর্যায়ে মোট ১০টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এগুলো হলো বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি, সাধারণ বিজ্ঞান, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ, গাণিতিক যুক্তি এবং মানসিক দক্ষতা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সর্বমোট নম্বর ২০০। প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ প্রার্থী একেকটি প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেন। এর মাধ্যমে সাধারণত লিখিত পরীক্ষার জন্য মাত্র ৫ শতাংশের কম প্রার্থী বাছাই হয়।

লিখিত পরীক্ষায় সাধারণ ক্যাডারের জন্য সর্বমোট ৯০০ নম্বর, যেখানে বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিসহ অন্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত। বিশেষায়িত বা টেকনিক্যাল ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য আলাদা পেশাগত পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, যা ২০০ নম্বরের। তবে এই কাঠামো প্রার্থীদের মূল পেশাগত দক্ষতা যথাযথভাবে যাচাই করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। লিখিত পেরিয়ে ভাইভায় ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ পর ক ষ র স পর ক ষ পর ক ষ য় উদ য গ প শ গত র জন য প এসস

এছাড়াও পড়ুন:

বেপরোয়া গতিতে চলে গাড়ি, বাড়ছে ঝুঁকি

চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মানা হচ্ছে না নির্ধারিত গতিসীমা। ফাঁকা পেলেই সেখানে দ্রুতগতিতে চলছে যানবাহন। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলছে মোটরসাইকেল। গত বছরের আগস্ট মাসে পরীক্ষামূলক চালুর পর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। সম্প্রতি দুর্ঘটনার তালিকায় যোগ হয়েছে প্রাইভেট কার। এ ঘটনার পর আবারও আলোচনায় আসে এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের নিয়মনীতি।

চলতি নভেম্বর মাসেই দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যায় এই উড়ালসড়কে। এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক, চালকদের গতিসীমা না মানা এবং বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সিডিএ বলছে, এগুলো স্বাভাবিক বাঁক। চলাচলে কোনো ঝুঁকি নেই। গতিসীমা না মেনে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।

নগর পুলিশের বন্দর অঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে নভেম্বর মাসের দুটি দুর্ঘটনা গতি না মানার কারণে হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ গাড়ির গতিসীমার বিষয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) কবীর আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘গতি না মানা একটি কারণ। পাশাপাশি অনেক বাঁক আছে সেখানে। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করি দুর্ঘটনারোধে ব্যবস্থা নিতে।’

২০১৭ সালে অনুমোদিত হওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ সাড়ে সাত বছরেও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৯২ শতাংশ। এর মূল অংশের উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। সে সময় ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ নামে এর উদ্বোধন করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এর নাম পরিবর্তন করে শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে করা হয়। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ব্যয় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

সিডিএ সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা অংশে সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং গাড়ি থেকে নামা নিষিদ্ধ। পরীক্ষামূলক যান চলাচলের সময় সাময়িকভাবে ট্রাক, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে চলছে মোটরসাইকেল।

সরেজমিন দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলরত গাড়ির অধিকাংশই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। এ ছাড়া বড় একটি অংশ কার ও মাইক্রোবাস। চলাচলের সময় অধিকাংশ গাড়িই গতিসীমা মেনে চলছে না। গতিসীমার মাপার জন্য কোথাও নেই যন্ত্র বা ক্যামেরা। কিছু স্থানে গতিরোধক থাকলেও নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকেরা।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

গতি না মানা একটি কারণ। পাশাপাশি অনেক বাঁক আছে সেখানে। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করি দুর্ঘটনারোধে ব্যবস্থা নিতে।কবীর আহম্মেদ, উপকমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর), চট্টগ্রাম নগর পুলিশ

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। কখনো পেছন থেকে এসে সামনের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। কখনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি পড়ে যায়। যদিও ছোট দুর্ঘটনায় অভিযোগ না করায় পুলিশের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ৫ ও ১২ নভেম্বর এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যায়। দুই ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। দুটোই এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা অংশে। একটি পতেঙ্গা থানা এলাকায়।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে নিরাপদে গাড়ি চলাচলের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাঁকগুলোতে গতিরোধক বসানো হয়েছে। আলোকায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। একটু পরপর গতিসীমা, বাঁক, গতিরোধকের তথ্য জানিয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চালক ও যাত্রীরা তা মানতে চান না। নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালালে স্বাভাবিকভাবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে কখনো পেছন থেকে এসে সামনের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। কখনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি পড়ে যায়। সম্প্রতি দুটি ঘটনাতেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বহু স্থানে প্রকৌশলগত ত্রুটির কারণে তীব্র বাঁক আছে, যেখানে গতিরোধক বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে। দুর্ঘটনা রোধে এসব বাঁকে গতি কমানো এবং ছোট যান, বিশেষত মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থার সঙ্গে চালকদেরও নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ