ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলোর একটি; যা তাদের সাংস্কৃতিক প্রভাব ও বিশাল বৈশ্বিক দর্শকশ্রেণির জন্য পরিচিত। ভারতীয় সিনেমা, বিশেষ করে বলিউড ও সাউথ ইন্ডিয়ার ব্লকবাস্টার সিনেমাগুলো কেবল ভারতেই নয়, চীন, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আয় করে থাকে। 

সময়ের সঙ্গে বিদেশি বাজার আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠায় দেশটির চলচ্চিত্র নির্মাতারাও অভূতপূর্ব খ্যাতি ও আর্থিক সাফল্য অর্জন করছেন। দশকের পর দশক ধরে অভিনেতারাই লাইমলাইটের সিংহভাগ আলো কেড়ে নিতেন, আর পরিচালকরা আড়ালে থেকে খুবই কম স্বীকৃতি পেতেন। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ইদানীং পরিচালকরা অভিনেতাদের মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, অনেক সময় তাদের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গির জন্য আরো বেশি পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন। চলতি বছরে ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ৭ পরিচালককে নিয়ে এই প্রতিবেদন—

আরো পড়ুন:

ভেঙে গেল মীরার তৃতীয় সংসার

আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না: এসএস রাজামৌলি

এসএস রাজামৌলি
‘বাহুবলি’ সিনেমা খ্যাত পরিচালক এসএস রাজামৌলি। কেবল নির্মাতাই নন, তার পরিচালিত ৯৯ ভাগ সিনেমার চিত্রনাট্যকারও তিনি। ক্যারিয়ারে ১৪টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এই তারকা পরিচালক। এরই মধ্যে তার ‘ট্রিপল আর’ সিনেমা অস্কারও জিতে নিয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া পরিচালকের তালিকায় সবার শীর্ষে অবস্থান করছেন রাজামৌলি। তার পরবর্তী সিনেমা ‘বারাণসী’। এ সিনেমার জন্য রাজামৌলি পারিশ্রমিক নিয়েছেন ২০০ কোটি রুপি। 

সন্দীপ রেড্ডি ভাঙা
তেলেগু ও হিন্দি সিনেমার পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙা। ক্যারিয়ারে মাত্র তিনটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন ‘অর্জুন রেড্ডি’খ্যাত এই পরিচালক। এসব সিনেমা হলো—‘অজুর্ন রেড্ডি’, ‘কবীর সিং’ ও ‘অ্যানিমেল’। পরিচালনার পাশাপাশি এসব সিনেমার চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন তিনি। ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া পরিচালকের তালিকায় তার অবস্থান দ্বিতীয়। তার পরবর্তী সিনেমা ‘স্প্রিরিট’, ‘অ্যানিমেল পার্ক’। ১০০-১৫০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নেন সন্দীপ রেড্ডি ভাঙা।

অ্যাটলি কুমার
ভারতের দক্ষিণী সিনেমার তারকা পরিচালক অ্যাটলি কুমার। ২০১৩ সালে তামিল ভাষার ‘রাজা রানি’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে। নির্মাণ ক্যারিয়ারে সাতটি সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তার মধ্যে অধিকাংশ সিনেমাই ব্যবসাসফল। তার নির্মিত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো—‘থেরি’, ‘মের্শাল’, ‘বিগিলি’, ‘জওয়ান’। ‘জওয়ান’ সিনেমার মাধ্যমে নির্মাতা হিসেবে বলিউড পা রাখেন অ্যাটলি। সিনেমাটিতে প্রথমবার শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করেন এই নির্মাতা। ২০২৩ সালে মুক্তি পায় এটি। সিনেমাটি বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল। আল্লু অর্জুনকে নিয়ে ‘এএ২২×এ৬’ শিরোনামে সিনেমা নির্মাণ করছেন অ্যাটলি। এ সিনেমার জন্য ১০০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন এই পরিচালক।

প্রশান্ত নীল 
কন্নড় ও তেলেগু সিনেমার পরিচালক প্রশান্ত নীল। ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া নির্মাতার তালিকায় অ্যাটলির সঙ্গে যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি। নির্মাণ ক্যারিয়ারে খুব বেশি সিনেমা পরিচালনা করেননি। তার নির্মিত পাঁচটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে—‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ওয়ান’, কেজিএফ চ্যাপ্টার টু’, ‘সালার’ সিনেমা। অ্যাটলির মতো প্রশান্ত নীলও প্রতি সিনেমার জন্য শতকোটি রুপি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। 

রাজকুমার হিরানি
ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক রাজকুমার হিরানি। নির্মাণ ক্যারিয়ারে বেশ কিছু ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছে—‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘পিকে’, ‘ডাঙ্কি’ এর মতো সিনেমা। বলিউডের ইতিহাসে পরিচালক হিসেবে রাজকুমার হিরানির নামটি অনবদ্য। দাদাসাহেব ফালকের বায়োপিকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। প্রতিটি সিনেমার জন্য এখন ৮০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন এই পরিচালক। 

সুকুমার
তেলেগু সিনেমার আলোচিত পরিচালক সুকুমার। নির্মাণ ক্যারিয়ারে ১০টি সিনেমা উপহার দিয়েছেন। আল্লু অর্জুনকে নিয়ে ‘আরিয়া’ নির্মাণ করেই নজর কাড়েন। এটি ছিল তার অভিষেক সিনেমা। তারপর ‘আরিয়া টু’, ‘রাঙ্গাস্থালাম’ নির্মাণ করে প্রশংসা কুড়ান। তবে আল্লু অর্জুন অভিনীত ‘পুষ্পা’ ও ‘পুষ্পা টু’ সিনেমা উপহার দিয়ে হইচই ফেলে দেন এই পরিচালক। এখন ‘পুষ্পা থ্রি’ নির্মাণের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। প্রতিটি সিনেমার জন্য এ পরিচালক পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন ৭৫ কোটি রুপি। 

সঞ্জয়লীলা বানসালি
‘পদ্মশ্রী’ বিজয়ী পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানসালি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক আলোচিত ও ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছে—‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘দেবদাস’, ‘সাওয়ারিয়া’, ‘পদ্মাবত’ প্রভৃতি। ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত পরিচালকের তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছেন সঞ্জয়লীলা বানসালি। ‘লাভ অ্যান্ড ওয়ার’ সিনেমার কাজ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিটি সিনেমার জন্য ৬৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন এই নির্মাতা।

তথ্যসূত্র: সিয়াসাত ডটকম

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপহ র দ য় ছ ন স ন ম র জন য ন র ম ণ কর র পর চ ল অর জ ন করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না: এসএস রাজামৌলি

‘বাহুবলি’খ্যাত নির্মাতা এসএস রাজামৌলি। এ পরিচালক বহুবার বলেছেন—“আমার সিনেমাগুলো পৌরাণিক কাহিনি সমৃদ্ধ।” কিন্তু রাজামৌলি ধর্ম চর্চাকারী কোনো হিন্দু নন। বরং নিজেকে একজন ‘নাস্তিক’ হিসেবে দাবি করেন। তার পরবর্তী সিনেমা ‘বারাণসী’। শনিবার (১৫ নভেম্বর) হায়দরাবাদে এ সিনেমা নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। জমকালো এই অনুষ্ঠানে তার ‘নাস্তিকতা’ নিয়ে কথা বলেন এই পরিচালক। 

‘বারাণসী’ সিনেমার টিজার মুক্তির আগেই টিজারের একটি অংশ অন্তর্জালে ফাঁস হয়ে যায়। এ বিষয়ে রাজামৌলি বলেন, “অনুষ্ঠান শুরুর আগে টেকনিক্যাল বিষয় চেক দেওয়া সময় ভেন্যুতে টিজারটি চালানো হয়েছিল, তখন একটি ড্রোন ফুটেজটি ধারণ করে। এর ফলে এই ঘটনার জন্ম হয়েছে।”  

আরো পড়ুন:

রাশমিকাকে বিজয়ের চুম্বন, ভিডিও ভাইরাল

অজিতের বাড়িতে বোমা হামলার হুমকি

এরপর রাজামৌলি বলেন, “আমার জন্য এটা খুব আবেগময় মুহূর্ত। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। আমার বাবা এসে বললেন, ‘হনুমানজি পিছন থেকে সব দেখবেন।’ সত্যি যদি তিনি দেখতেন, তাহলে এটা তিনি কীভাবে দেখলেন? এটা ভাবতেই আমার রাগ হচ্ছে।”  

রাজামৌলির স্ত্রী রমা রাজামৌলিও হনুমানের ভক্ত। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীও হনুমানের খুব ভক্ত। সে হনুমানের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করে এবং কথা বলে। স্ত্রীর ওপরও রাগ করেছিলাম।” 

রাজামৌলি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করার কথা বলায় সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কারণ তার নির্মিত ‘বাহুবলি’ ফ্র্যাঞ্চাইজি বিশ্বব্যাপী ব্লকবাস্টার সিনেমার তকমা পেয়েছে। ২০২২ সাল মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ট্রিপল আর’ সিনেমার সব জায়গাতে হিন্দু পুরাণ থেকে নেওয়া চমকপ্রদ ভিজ্যুয়াল দেখা যায়।  

‘বাহুবলি’ সিনেমায় প্রভাসের চরিত্রের সঙ্গে মহাদেবের সাদৃশ্য রয়েছে। ‘ট্রিপল আর’ সিনেমার চূড়ান্ত অ্যাকশন দৃশ্যে রামচরণের মাঝে রাম-সুলভ ছায়া দেখা যায়। একটি অনুষ্ঠানে রাজামৌলি দাবি করেছিলেন, বারাণসীর গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকশন দৃশ্য রামায়ণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং শুটিং সেটে মহেশ বাবুকে রামের সাজে দেখে তার গায়ে কাঁটা দিয়েছিল। 

২০২২ সালে বিয়ন্ড ফেস্টে রাজামৌলি বলেছিলেন, “অনেকে মনে করেন হিন্দুইজম একটি ধর্ম, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা সত্যি। কিন্তু ধর্ম হিসেবে হিন্দুইজমের আগে ছিল ধর্ম বিশ্বাস; এটি একটি জীবনধারা, একটি দার্শনিক ধারণা। যদি ধর্ম হিসেবে দেখেন, তাহলে আমিও হিন্দু নই। কিন্তু যদি ধর্ম বিশ্বাস হিসেবে দেখেন, তাহলে আমি গভীরভাবে হিন্দু। আমি ‘ট্রিপল আর’ সিনেমায় যে বিষয়গুলো দেখিয়েছি, তা বহু শতাব্দী ও যুগ ধরে চলে আসা একটি জীবনদর্শন।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না: এসএস রাজামৌলি