মাওলানা ভাসানী সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে, তিনি একজন বিভ্রান্ত মানুষ। না হতে পারলেন মাওলানা, না রাজনীতিবিদ, না পারলেন সমাজতন্ত্র কায়েম করতে, না পারলেন ইসলামি সমাজতন্ত্র কায়েম করতে। কিন্তু মাওলানা কি আদৌ সমাজতন্ত্র বা ইসলামি সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছেন? তাঁর রাজনৈতিক দর্শনটা আসলে কী?

মাওলানার চীন সফর–পরবর্তী সংবর্ধনাকে ঘিরে একটি ঘটনা প্রচলিত আছে। সেদিনও ভাসানীর মাথায় ছিল তালপাতার টুপি, পরনে লুঙ্গি। তাঁর বেশভূষা দেখে শ্রোতাদের মধ্যে গুনগুন মন্তব্য, ‘ইয়ে তো মিসকিন হ্যায়!’ কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে ভাসানী বক্তব্য শুরু করতেই সেই শ্রোতারা বলল, ‘ইয়ে তো মাওলানা হ্যায়!’

রাজনৈতিক বক্তব্য শুনে তারা এবার অবাক হয়ে পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, ‘আরি বাহ্, ইয়ে তো পলিটিশিয়ান হ্যায়!’ যখন ভাসানী বিশ্ব মোড়লদের শোষণ–নিপীড়ন সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন, তখন ওই একই দর্শকশ্রোতা বলে উঠল, ‘হায় আল্লাহ, ইয়ে তো এস্টেট মেন হ্যায়!’ কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়:

‘দুর্গত এলাকা প্রত্যাগত বৃদ্ধ মৌলানা ভাসানী
কী বলেন। রৌদ্রালোকে দাঁড়ালেন তিনি, দৃঢ়, ঋজু,
যেন মহাপ্লাবনের পর নূহের গভীর মুখ
সহযাত্রীদের মাঝে ভেসে ওঠে, কাশফুল-দাড়ি
উত্তরে হাওয়ায় ওড়ে। বুক তার বিচর্ণিত দক্ষিণ বাংলার
শবাকীর্ণ হু হু উপকূল, চক্ষুদ্বয় সংহারের
দৃশ্যাবলীময়, শোনালেন কিছু কথা, যেন নেতা
নন, অলৌকিক স্টাফ রিপোর্টার।’

(সফেদ পাঞ্জাবী/শা.

রা.)

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর গঠিত ‘হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতির’র মাধ্যমে কি প্রচলিত ধারণার ইসলমি খেলাফত চেয়েছেন নাকি ইসলামি সমাজতন্ত্র চেয়েছেন? তাঁর রাজনৈতিক পরিভাষাগুলো আমাদের অনেক শিক্ষিত ইতিহাসবিদের কাছেও অবোধ্য-দুর্বোধ্য। আমরা তাঁর তিনটি রাজনৈতিক পরিভাষার ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে বোঝার চেষ্টা করব। রুবুবিয়াৎ, খুদায়ে খিদমাতগার এবং হুকুমতে রাব্বানিয়া।

কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে আমি (আল্লাহ) খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছি। (২:৩০) এই খলিফা ইসলামি খেলাফত বা রাজতন্ত্রের খলিফা না। কারণ, খেলাফত ব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের খলিফা হন একজন। আর রুবুবিয়াতের খলিফা আমি, আপনি, সবাই।রুবুবিয়াৎ বা পালনবাদ

কোরআনের অনুবাদ করতে গিয়ে অধিকাংশ অনুবাদক ‘রব’ শব্দের অর্থ করেছেন ‘প্রভু’, যা ইসলামি দৃষ্টিতে শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার করা। মাওলানা ভাসানী সচেতনভাবে এর অনুবাদ করেছেন ‘পালনবাদ’। একজন পালনকর্তা হিসেবে আল্লাহ সবাইকে খাওয়ান, পরান, আলো–বাতাস দেন। জীবজন্তুকে খাওয়ানোরও দায়িত্ব নেন। কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে আমি (আল্লাহ) খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছি। (২:৩০) এই খলিফা ইসলামি খেলাফত বা রাজতন্ত্রের খলিফা না। কারণ, খেলাফত ব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের খলিফা হন একজন। আর রুবুবিয়াতের খলিফা আমি, আপনি, সবাই। আমরা সবাই আল্লাহর প্রতিনিধি। সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর যা যা দায়িত্ব, আমাদের ওপরও তা-ই দায়িত্ব। এটা যে ভাসানীর মনগড়া ব্যাখ্যা, বিষয়টা এমন না। তাঁর ব্যাখ্যার পেছনে কোরআনে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় মানুষকে আল্লাহর রঙে রঙিন হতে বলা হয়েছে। (২:১৩৮)

মাওলানা ভাসানীর হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতি থেকে প্রকাশিত ‘হুকুমতে রাব্বানিয়া: পূর্বশর্ত’ গ্রন্থের দ্বিতীয় প্রবন্ধে লেখক শামসুল হক বলেন, ‘আল্লাহর সমস্ত গুণাবলী মানবজীবনে রূপায়িত হলে কতই না সুন্দর হবে।...রব হিসেবে এই সৃষ্টিকে পালন অর্থাৎ রুবুবিয়াতের কাজ করাই আল্লাহর সবচাইতে বড় কাজ। আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মানুষেরও প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে রুবুবিয়াৎ পালন।’

রুবুবিয়াতের চারটি স্তর—বিয়ের আগে, পারিবারিক জীবন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে, সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে।

আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০—১৭ নভেম্বর ১৯৭৬)

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন ত ক আল ল হ হ ক মত ক রআন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প

যৌন নিপীড়ন ও নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত কুখ্যাত জেফরি এপস্টেইনের নথিগুলো প্রকাশের পক্ষে ভোট দিতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী অবস্থান নিয়েছেন তিনি।

গতকাল রোববার রাতে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে ভোট দেওয়া উচিত। কারণ, আমাদের লুকানোর কিছু নেই।’

কয়েক দিন ধরে ট্রাম্প প্রয়াত এপস্টেইনের নথি প্রকাশ–সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়ে আসছিলেন। এখন সেখান থেকে তিনি সরে এসেছেন।

ট্রাম্প এমন সময়ে তাঁর অবস্থান বদল করলেন, যখন কিনা প্রতিনিধি পরিষদে এপস্টেইনের নথি প্রকাশ–সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নের ওপর ভোটাভুটির প্রস্তুতি চলছে। ওই আইনের আওতায় মার্কিন বিচার বিভাগ নথিগুলো জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করতে বাধ্য হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটির পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে উচ্চকক্ষ সিনেটে এটি পাস হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটির পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে উচ্চকক্ষ সিনেটে এটি পাস হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

ডেমোক্র্যাট ও কিছু রিপাবলিকান সদস্য এমন একটি পদক্ষেপের জন্য চাপ দিচ্ছেন, যা জেফরি এপস্টেইনের মামলা–সংক্রান্ত আরও নথি প্রকাশ করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে বাধ্য করবে।

এপস্টেইন ফাইল ট্রান্সপারেন্সি অ্যাক্ট নামের এই বিলের উদ্দেশ্য হলো, জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব অগোপনীয় নথি, রেকর্ড, চিঠিপত্র এবং তদন্তের তথ্য প্রকাশ করতে বিচার বিভাগকে বাধ্য করা।

শোনা যাচ্ছিল, বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্য দলের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন। আর এর মধ্যেই নিজের অবস্থান বদল করে রিপাবলিকান সদস্যদের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালেন ট্রাম্প।

রিপাবলিকান প্রতিনিধি টমাস ম্যাসি গতকাল এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রায় ১০০ জন রিপাবলিকান প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে পারেন। ম্যাসি এ প্রস্তাবের উদ্য্যোক্তাদের একজন।

আরও পড়ুনজেফরি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত ইমেইলে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম১২ নভেম্বর ২০২৫

এপস্টেইন ফাইল ট্রান্সপারেন্সি অ্যাক্ট নামের এই বিলের উদ্দেশ্য হলো, জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব নথি, রেকর্ড, চিঠিপত্র ও তদন্তের তথ্য প্রকাশ করতে বিচার বিভাগকে বাধ্য করা।

ট্রাম্প ফ্লোরিডা থেকে ম্যারিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজ বিমানঘাঁটিতে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরে ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দেন।

ট্রাম্প লিখেছেন, ‘বিচার বিভাগ এরই মধ্যে এপস্টেইন–সংক্রান্ত হাজার হাজার পৃষ্ঠাভর্তি তথ্য জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করেছে। তারা বিভিন্ন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতার (যেমন বিল ক্লিনটন, রিড হফম্যান, ল্যারি সামার্স) সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক খতিয়ে দেখছে। হাউস ওভারসাইট কমিটি আইনগতভাবে যে তথ্য চাইবে, তাই পেতে পারবে—আমার কোনো আপত্তি নেই!’

এপস্টেইনকে ২০০৮ সালে ফ্লোরিডায় ১৮ বছরের কম বয়সী একজন মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যৌনবিষয়ক পণ্য পাচারের অন্য এক মামলায় বিচারের অপেক্ষায় থাকাকালে ২০১৯ সালে কারাগারে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনএপস্টেইন–কাণ্ডে নিজেকে বাঁচাতেই কি বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করলেন ট্রাম্প১৫ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হার্মিস: ভাইয়ের গরু চুরি করে বীণা উপহার দিয়েছিলেন
  • সুন্দরী প্রতিযোগিতায় হোঁচট খেয়ে পড়ার আলোচিত সব দুর্ঘটনা
  • পালানোর সময় আটক জনির দায় স্বীকার করে জবানবন্দি
  • প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ
  • অটোরিকশার জন্য বন্ধুকে হত্যা করে হাসপাতালে নেন তরুণ, পরে গ্রেপ্তার
  • সৌদি আরবে দুর্ঘটনার কবলে বাস: বেঁচে আছেন ভারতীয় ওমরাহযাত্রীদের একজন
  • টাইব্রেকারের ‘কালো জাদু’র অভিযোগ নাইজেরিয়ার, বিশ্বকাপ–স্বপ্ন ভেঙে চুরমার
  • ‘১৫ হাজার সেফটিপিন শাড়িতে লাগালেও, তারা খুঁত বের করবে’
  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প