রংপুরে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের একটি হত্যা মামলাকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতের নিদেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার মাহমুদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে ৩ জুন রংপুর নগরের হাজিরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন রংপুর নগরে রাধাকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬০)। এ মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মসূচি বানচাল, প্রয়োজনে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হত্যা করাসহ আন্দোলন প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। রংপুরের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের উল্লেখিত নেতা–কর্মীরা গত বছরের ২ আগস্ট তাঁর স্বামী ছমেস উদ্দিনকে বাড়ি–সংলগ্ন মুদিদোকাানের সামনে দেশি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম করেন। পরে তাঁকে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত আটটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তবে ছমেস উদ্দিনের কবরে টাঙানো সাইনবোর্ডের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে ছমেস উদ্দিনকে ‘জাতীয় বীর’ উল্লেখ করে লেখা আছে, ‘২ আগস্ট ২০২৪ পুলিশ বিভাগের একটি দল তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি পুলিশ দেখে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে যান। তিনি সেখানে স্ট্রোক করে মারা যান—তা নিশ্চিত করেন প্রাইম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক।’

মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ
রংপুর নগরের ধাপ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া এলাকার বাসা থেকে গতকাল দুপুরে শিক্ষক মাহমুদুল হককে আটক করে মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানার পুলিশ। বিকেলে তাঁকে আদালতে তোলা হয় এবং বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান অভিযোগ করেন, যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি (ছমেস উদ্দিন) হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। মামলার বাদীর কাছ থেকে হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। পরে ইচ্ছামতো আসামি করেছেন। আমার স্বামীকে মূলত পরিকল্পনা করে ফাঁসানোর জন্য এটা করা হয়েছে। এর পেছনে আছেন দুজন—একজন চিকিৎসক, অন্যজন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। আমি তাঁদের নাম এখন বলব না। এর আগেও ওই দুজন আমার স্বামীকে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন।’

মামলার এজাহারে দেওয়া আমিনা বেগমের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে ফোন ধরেন তাঁর ছেলে আশিকুর রহমান। আশিকুর বলেন, তাঁর বাবা ২ আগস্ট মারা গেছেন। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন না। তবে যতটুকু শুনেছেন, ওই দিন প্রশাসনের কিছু লোক ছিলেন। আওয়ামী লীগের কিছু লোক ছিলেন।

আশিকুর বলেন, ‘আব্বু মুদিদোকান করেন। পুলিশ দেখে উনি দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। ওখানে আওয়ামী লীগের লোক ছিলেন, প্রশাসনের লোক ছিলেন, তাঁরা পেছন থেকে ধাওয়া দেন। ওখানেই উনি পড়ে যান। তারপর কী হয়েছে, কী হয় নাই, আমি বলতে পারি না।’ মামলার আসামি মাহমুদুল হককে চেনেন কি না জানতে চাইলে আশিকুর বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী।

রাধাকৃষ্ণপুরের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রংপুর নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক আমির নাছির উদ্দিনের বাড়ি রাধাকৃষ্ণপুর মৌলভীপাড়ায়। বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের সময় তাঁর বাড়িতে যান সাদাপোশাকের ৯ পুলিশ সদস্য। তিনি তথ্য পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময় মুদিদোকানি ছমেস উদ্দিন ভয়ে পালানোর চেষ্টা করেন এবং হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এ সম্পর্কে নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন ২ আগস্ট নয়; ২ জুলাই ছিল। তিনটি মোটরসাইকেলে সাদাপোশাকে ৯ পুলিশ সদস্য আমার বাড়ির দিকে আসেন। আগেভাগে জানতে পেরে আমি বাড়ি ছাড়ি। পরে রাতে জানতে পারি, ছমেস পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। মূলত এটা (মামলা) সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, সাজানো নাটক। ছমেস উদ্দিন হার্টের রোগী ছিলেন। মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে ঢাকায় তাঁর রিং লাগিয়ে আনা হয়েছিল।’

রংপুর নগরে রাধাকৃষ্ণপুরে ছমেস উদ্দিনের কবর। ১৩ জুন তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প র নগর ২ আগস ট আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম কারাগারে 

বিএনপির মহাসমাবেশে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ্ ফারজানা হকের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির মতিজিল জোনাল টিমের উপপরিদর্শক মো. ফেরদৌস আলম। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী আবুল হাসান ও নিজাম উদ্দিন জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। দেশের জন্য অবদান রাখার ২০২১ সালে একুশে পদক পেয়েছিলেন। তিনি কৃষি অর্থনীতিবিদ। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী না। তার জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য বিগত সরকার তাকে প্রতিমন্ত্রী করেন। তাকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এতে তিনি সন্দিগ্ধ আসামি। এ মামলার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। 

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, আমরা খুবই দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, উনি একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। একজন সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে উনি দেশের ফ্যাসিস্ট রেজিমকে সহযোগিতা করেছেন। সেনাবাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইজিপি, প্রধান বিচারপতি, ডাক্তার হওয়ার পরও তাদের খায়েশ জেগেছে মন্ত্রী, এমপি হওয়ার। তাদের কেন অন্য রাজনীতিতে আসতে হবে? তার বিরুদ্ধে নিউজ করার পর সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা সব আসামিকে ধরছি না। যে ঘটনার সঙ্গে আমরা তাদের সংশ্লিষ্টতা পাই, তাদেরই আমরা গ্রেপ্তার করি। ফ্যাসিস্টের সহযোগীরা বিভিন্নভাবে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। দেশে ফ্যাসিবাদমুক্ত গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার পরিপন্থি কাজ করছেন। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ভারতের আবুল কালাম আজাদ দেশের জন্য অবদান রাখার জন্য তাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকের যে বিষয়টা ছিলো সেটা পারিবারিক। সেখানে তার পক্ষে রায় এসেছে। 

এ সময় পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় ডিজিএফআইয়ের একজন এসেছে। তিনি আমার ছবিসহ সব নিয়ে গেছেন। আমাকে একটা কোর্টের দায়িত্ব দিতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি সেখানে যাইনি। যদি যেতাম তাহলে আজ পিপি হতে পারতাম না। মানুষ আমাকে চাইবে, কিন্তু আমি কোথায় যাবো, কোথায় যাবো না। সেটা আমাদের নির্ধারণ করতে হবে।  

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে শামসুল আলমকে আটক করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকা হয়। মহাসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য একই দিনে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ ডাকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে পুলিশের সহায়তায় মহাসমাবেশে হামলা চালানো হয়। হামলায় যুবদল নেতা শামীম নিহত হন। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • করোনা পরীক্ষার কিটের সংকট কেটেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের নানা প্রস্তুতি
  • নওগাঁয় গণ অধিকার পরিষদের বহিষ্কৃত নেতার এনসিপিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা
  • গাজীপুরে গাড়ির আঘাতে ডাকাত দলের একজন নিহত, গ্রেপ্তার ৪
  • টানা ৩১ ঘণ্টা ড্রাম বাজিয়ে রেকর্ড গড়লেন তরুণ
  • সরকারি সেবায় প্রতি তিনজনের একজন ঘুষ-দুর্নীতির শিকার
  • নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো সংগ্রামী বীরের মহাপ্রস্থান
  • কালাপাহাড় পালিয়েছে
  • করোনায় যশোরে আরেকজনের মৃত্যু, সারাদেশে ২৮ জন শনাক্ত
  • সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম কারাগারে