রাসূলে আকরাম (সা.) এর বিদায় হজ এবং ঈদে গ্বাদীর উপলক্ষে শুক্রবার (২০ জুন) সকালে রাজশাহীর শাহ ডাইন কমিউনিটি সেন্টারে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন রাজশাহী শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইমামিয়া ওলামা সোসাইটির সেক্রেটারি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড.

এম আব্দুল কুদ্দুস বাদশা।

সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ রাসুলে আকরাম (সা.) ইসলামিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মোহাম্মদ আলী মোর্তজা।

আরো পড়ুন:

ভাঙা নয়, মূল নকশায় ফিরছে ভাস্কর্য ‘অঞ্জলি লহ মোর’: উপাচার্য

ইউরোপীয় গুপ্তচর যেভাবে মক্কায় ঢুকেছিলেন

রাজশাহী সুগার মিলস লিমিটেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ওসমান গণী, রাজশাহী আলিয়া মাদ্রাসা ও আল মোস্তফা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষার শিক্ষক ড. আব্দুল হান্নান ইমামি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পবিত্র কুরআন ও আহলে বাইত শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন ড. আব্দুল্লাহ, কুষ্টিয়ার আমলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আ.জ.ম মনিরুল ইসলাম, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক টিপু সুলতান, রাজশাহীর মোহাম্মদ আমীন (সা.) ফার্সি শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন শেখ আলী আকবর।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিদায় হজে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত জনসমুদ্রের উদ্দেশে রাসুল (সা.) এক যুগান্তকারী ভাষণ দেন। এ ভাষণে বিশ্বমানবতার সবকিছুর দিক নির্দেশনা ছিল। মুসলমানরা যাতে তাদের দীন থেকে বিচ্যুত না হয়, সেজন্য ছিল বিশেষ দিক নির্দেশনা। মহানবী (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণে বলেন, তোমরা যতদিন পবিত্র কুরআন ও আমার আহলে বায়েতকে অনুসরণ করবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। পবিত্র ঈদে গাদির উপলক্ষে বক্তারা বলেন, ঈদে গাদির ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গাদিরে খুমের  ভাষণে রাসূল (সা.) ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছেন বিশেষ করে হযরত আলী (আ.) এর মর্যাদা ও মহাত্ম্য সম্পর্কে দীপ্ত কণ্ঠে যে ঘোষণা দিয়েছেন তা মুসলিম উম্মাহর জন্য স্পষ্ট পথ নির্দেশনা।

সেমিনারে বেলায়েতের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তারা বলেন, পবিত্র কোরআনের আলোকে "বেলায়াত" একটি মৌলিক বিষয়। মু'মীনের ইহজাগতিক জীবন অর্থপূর্ণ হয় না এই বেলায়াতের ছায়াতলে অবস্থান গ্রহণ ব্যতীত। তদ্রুপ তার সকল আমলের পারলৌকিক মূল্যমান নির্ভর করে এই বেলায়াতের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার মাধ্যমে। এই কারণে মহানবী (সা.) গাদীরে খুমের ময়দানে মাওলা আলী (আ.) এর জন্য যে বেলায়েতের অভিষেক করে গেছেন, তা মু'মীন-মুসলমানদের তরফ থেকে গ্রহণ বা বর্জন করার কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। বরং এই হকিকতের গভীর মর্মার্থ অনুধাবন করতে হবে এবং বুঝতে হবে বেলায়াত ধারণ না করলে জীবন অর্থপূর্ণ হবে না। আয়াতুল কুরসিসহ কোরআনের একাধিক আয়াত এবং অসংখ্য সহীহ হাদীস থেকে এই সত্য অনায়াসে প্রমাণিত।

সেমিনার শেষে একটি কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ কুইজ প্রতিযোগিতা পরিচালনা করেন রাজশাহীর মোহাম্মদ আমীন (সা.) ফার্সি শিক্ষা কেন্দ্রের সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম মোহাম্মদ মাজিদুল ইসলাম।

ঢাকা/হাসান/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম ম হ ম মদ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা

বর্ণাঢ্য আয়োজন আর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে মণিপুরি অধ্যূষিত জনপদ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে এ উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। কমলগঞ্জের মাধবপুর শিব বাজারের জোড়ামণ্ডপ এলাকায় রাখাল নৃত্য ও রাতে রাসনৃত্য এ উৎসবের অন্যতম মূল আকর্ষণ। 

পাশাপাশি আদমপুরে মৈতৈই মণিপুরি সম্প্রদায় মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে এ উৎসব উদযাপন করছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ভোরে শেষ হবে শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। উৎসব উপলক্ষে উভয়স্থানে মেলা বসেছে। রাস উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হবে কমলগঞ্জের মণিপুরি জনপদ। 

এ উপলক্ষে উভয় জায়গায় বসবে বিরাট মেলা। রাসলীলা উপলক্ষে এরইমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় সাজ সাজ রব বিরাজ করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসী মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি মহারাসলীলা উপজেলার মাধবপুর শিববাজার জোড়া মণ্ডপে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের আয়োজনে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৮৩তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মৈতৈ মণিপুরি সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব হবে এবার।

কমলগঞ্জের মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের হাওয়া। আগামী বুধবার দুপুরে উভয় স্থানে গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য এবং রাতে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও রাসনৃত্য।

উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। এছাড়া মণিপুরি রাস উৎসব উপলক্ষে বুধবার বিকাল ৫টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি মিলনায়তনে মণিপুরি থিয়েটারের আয়োজনে ‘নুংশিপি’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

অপরদিকে উৎসবস্থল আদমপুরেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরি মৈতৈ এরা আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্তঃস্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।

আলাপকালে মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপ-পরিচালক (অ: দা:) প্রভাস চন্দ্র সিংহ জানান, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন।

মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকালে ‘গোষ্ঠলীলা’ বা ‘রাখালনৃত্য’ হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখালনৃত্য। রাত ১২টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ।

মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে-গেয়ে কৃষ্ণবন্দনায় ভোর পর্যন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৫০ জন গোপী থাকেন। গোপীর সংখ্যা অনেক সময় কমবেশি হয়।

একটি রজনীকে কেন্দ্র করে মণিপুরিদের সংস্কৃতির এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরি পাড়া সমুহে চলে প্রস্তুতি ও উৎসবের আমেজ। রং ছড়িয়ে মন্ডপগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে। 

রাসের দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। রাস উৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসেন।

মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, রাস উপলক্ষে আমাদের পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ১৮৩তম শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। 

রাসলীলা মণিপুরিদের আয়োজন হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আগমনে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর সকল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বাঁধনে বেধে চলেছে এই উৎসব রাসলীলা, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রেমপ্রীতির ঐতিহ্য দর্শন।

কমলগঞ্জ থানার ওসি আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির জানান, নির্বিঘ্নে মণিপুরি মহারাসলীলা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উৎসব নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের টহলও থাকবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, ঐতিহ্যবাসী মণিপুরি রাসোৎসব উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে আইনশৃংখলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকা/আজিজ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘হুমায়ুন আহমেদ সপ্তাহ’
  • মহান বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ফতুল্লায় বিএনপির প্রস্তুতিমুলক সভা
  • মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা
  • পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন
  • সাহস করে সত্য প্রকাশ করে যাবে প্রথম আলো
  • প্রথম আলো পথভ্রষ্ট হয়নি : আলমগীর কবির
  • প্রথম আলো কোনো সংবাদ প্রকাশ করলে ধরে নিই সংবাদটি ঠিক আছে: মানজুর-আল-মতিন
  • অ্যাওয়ার্ড পেলে নিজেকে মাটিতে নামাতে হয়: স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম
  • প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু