নগরের সড়কের খুঁটিতে ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল সরাতে চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এসব প্রতিষ্ঠান নগরের ৯টি ওয়ার্ডের ঝুলন্ত ডিশ ও ইন্টারনেট সংযোগের তার মাটির নিচ দিয়ে 
নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। দেড় বছরে একটি ওয়ার্ডেরও সড়কে খুঁটির ঝুলন্ত তার মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে গত ১৮ জুন আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে চসিক। 
চুক্তি করা নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরগুলো বলছে, সিটি করপোরেশন ও বিটিআরসির অনুমোদন জটিলতার কারণে 
কাজ এগোচ্ছে না। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে জটিলতা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরে বৈধ-অবৈধ ইন্টারনেট সেবাদাতা ও ডিশ ব্যবসায়ীরা মাটির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও সিটি করপোরেশনের সড়কবাতির খুঁটি ব্যবহার করে তার ঝুলিয়ে ইন্টারনেট ও ডিশ সেবা দিচ্ছেন। এতে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায় সময় ঝুলন্ত তারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। গত ২৫ মার্চ নগরের বহদ্দারহাটে কয়েকটি খুঁটিতে ঝুলন্ত তারে একযোগে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

২০২৪ সালের শুরুতে দুর্ঘটনা এড়ানো ও সৌন্দর্যবর্ধনে ঝুলন্ত তার সরাতে উদ্যোগ নেয় চসিক। পরে ১৫ জানুয়ারি ইন্টারনেট ও কেবল অপারেটরদের সঙ্গে এক সভায় নগরের 
তিনটি ওয়ার্ডের ঝুলন্ত তার মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মাটির নিচ দিয়ে ফাইবার অপটিক কেবল বসিয়ে নেটওয়ার্ক তৈরির কথা ছিল ইন্টারনেট 
সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি)। ২৬ মে বিটিআরসি থেকে তিন ওয়ার্ডে নেটওয়ার্ক তৈরির অনুমতি পায় আইএসপিএবি। এক বছর পার হলেও ওয়ার্ড তিনটিতে নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে পারেনি সংগঠনটি।
আবার ২০২৪ সালের ১২ মার্চ তিন ওয়ার্ডের ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সিটি করপোরেশন। চুক্তির পর নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজও শুরু করে সামিট। একই ওয়ার্ডে আইএসপিএবি বিটিআরসির অনুমোদন পাওয়ায় আপত্তি জানায়। এতে সামিটের নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ থমকে যায়। জটিলতা নিরসনে চলতি বছরের ১৫ জুন বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি দেয় চসিক। চিঠিতে আইএসপিএবিকে আগের তিনটি ওয়ার্ডের পরিবর্তে নতুন তিনটি ওয়ার্ডে নেটওয়ার্ক স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
জানতে চাইলে আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক সমকালকে বলেন, তিনটি ওয়ার্ডে নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য বিটিআরসির অনুমোদন পেলেও সিটি করপোরেশনের অনুমোদন মেলেনি। তাই কাজ শুরু করা যায়নি। সিটি করপোরেশনের অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে।

সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তির পর তিনটি ওয়ার্ডের মূল সড়কে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি। আইএসপিএবির আপত্তির কারণে কাজটি স্থগিত হয়ে যায়। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের নতুন প্রশাসন বলেছে, বিটিআরসির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এখন আমরা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।
এদিকে গত ২০ মার্চ বেসরকারি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি বাহন লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে সিটি করপোরেশন। চুক্তি অনুযায়ী, নগরের ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ড ও ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে মাটির নিচ দিয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনের কথা ছিল। বর্ষার আগে একটি ওয়ার্ডের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের। তিন মাস পার হলেও প্রতিষ্ঠানটি কাজই শুরু করতে পারেনি।

বাহন লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাশেদ আমিন বিদ্যুৎ বলেন, চুক্তি হলেও সড়ক খনন করার জন্য সিটি করপোরেশনকে ফি দিয়ে অনুমোদন নিতে হয়। সেটি পাইনি। তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে পারিনি।
তিনটি ওয়ার্ডের নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ বাহন লিমিটেডকে দিলেও গত ১৮ জুন বেসরকারি আরেকটি এনটিটিএন অপারেটর ফাইবার অ্যাট হোমের সঙ্গে পাঁচটি ওয়ার্ডে চুক্তি করেছে সিটি করপোরেশন। তারা ডিশ ও ইন্টারনেট সংযোগের নেটওয়ার্ক মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শুরুতে আইএসপিএবি নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে পারেনি। এ কারণে সামিটকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তাদের অন্য তিনটি ওয়ার্ডে কাজ করার অনুমোদন দেওয়া হবে। কাজ শুরু হলে বাহন ও ফাইবার অ্যাট হোমের সঙ্গে বসেও ওয়ার্ডগুলোর কাজ সমন্বয় করা হবে।
অনুমোদন জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। মাটির নিচ দিয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য সড়ক ও অলিগলি খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে। তাতে জলাবদ্ধতা তৈরির হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ জন্য তখন অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বর্ষা শেষ হলে অনুমোদন পাবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ন টওয় র ক র জন য র ঘটন নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশপ্রেমিক ও পেশাদার কর্মকর্তাদের বাহিনীর নেতৃত্বে চান প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক, মেধাবী, দক্ষ, পেশাদার, সৎ, মানবিক ও নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন যোগ্য কর্মকর্তাদের নির্বাচনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী নির্বাচনী পর্ষদকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

নৌবাহিনী সদর দপ্তরে ‘নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৫’–এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন থেকে কমোডর, কমান্ডার থেকে ক্যাপ্টেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার থেকে কমান্ডার এবং বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন থেকে এয়ার কমোডর, উইং কমান্ডার থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং স্কোয়াড্রন লিডার থেকে উইং কমান্ডার পদবিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ভবিষ্যৎ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা নির্বাচন করবে।

আইএসপিআর জানায়, নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্য, সব শ্রেণি-পেশার মুক্তিকামী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদকে স্মরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস, সংগ্রাম ও বীরত্বের কথা স্মরণসহ শান্তিকালীন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং জাতীয় প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন।

আইএসপিআর আরও জানায়, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও নানা সংকটে মানুষের ভালোবাসা ও পরম নির্ভরতা অর্জন করায় নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানান প্রধান উপদেষ্টা। এ ক্ষেত্রে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের নিরাপত্তা, সংকটে আপামর জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশ গঠনে উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণের বিষয় উল্লেখ করেন।

আইএসপিআর আরও জানায়, দেশের সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ ও আহরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র গভীর সমুদ্রবন্দরের ব্যবস্থাপনায় নৌবাহিনীর অবদান এবং সার্বিকভাবে সুনীল অর্থনীতির বিকাশে প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি দেশের সুনীল অর্থনীতির বিকাশে চলমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এমআইডিএ) প্রতিষ্ঠা, উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত করেন। এসব কাজে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানসহ দেশমাতৃকার সেবায় ও সুরক্ষায় বাহিনী দুটির ভূমিকা ও সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে যেকোনো রাষ্ট্রীয় সংকটে এবং দুর্যোগে আর্তমানবতার সেবায় জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান। দুই বাহিনী প্রধান উল্লেখ করেন, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার সম্পৃক্ততা ও দিকনির্দেশনা নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর সদস্যদের কর্মস্পৃহা ও মনোবল বৃদ্ধি করেছে। প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীতে নেতৃত্ব প্রদানে দেশপ্রেম, পেশাগত দক্ষতা, মানবিক ও অধিনায়কত্বের গুণাবলির মাপকাঠিতে দক্ষ ও উপযুক্ত কর্মকর্তা নির্বাচনের মাধ্যমে সুদক্ষ বাহিনী গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন বাহিনী প্রধানগণ।

নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা নৌবাহিনী সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে একটি বৃক্ষ রোপণ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশপ্রেমিক ও পেশাদার কর্মকর্তাদের বাহিনীর নেতৃত্বে চান প্রধান উপদেষ্টা