চুক্তি হয়, সরে না নগরের তারের জঞ্জাল
Published: 20th, June 2025 GMT
নগরের সড়কের খুঁটিতে ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল সরাতে চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এসব প্রতিষ্ঠান নগরের ৯টি ওয়ার্ডের ঝুলন্ত ডিশ ও ইন্টারনেট সংযোগের তার মাটির নিচ দিয়ে
নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। দেড় বছরে একটি ওয়ার্ডেরও সড়কে খুঁটির ঝুলন্ত তার মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে গত ১৮ জুন আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে চসিক।
চুক্তি করা নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরগুলো বলছে, সিটি করপোরেশন ও বিটিআরসির অনুমোদন জটিলতার কারণে
কাজ এগোচ্ছে না। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে জটিলতা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরে বৈধ-অবৈধ ইন্টারনেট সেবাদাতা ও ডিশ ব্যবসায়ীরা মাটির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও সিটি করপোরেশনের সড়কবাতির খুঁটি ব্যবহার করে তার ঝুলিয়ে ইন্টারনেট ও ডিশ সেবা দিচ্ছেন। এতে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায় সময় ঝুলন্ত তারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। গত ২৫ মার্চ নগরের বহদ্দারহাটে কয়েকটি খুঁটিতে ঝুলন্ত তারে একযোগে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
২০২৪ সালের শুরুতে দুর্ঘটনা এড়ানো ও সৌন্দর্যবর্ধনে ঝুলন্ত তার সরাতে উদ্যোগ নেয় চসিক। পরে ১৫ জানুয়ারি ইন্টারনেট ও কেবল অপারেটরদের সঙ্গে এক সভায় নগরের
তিনটি ওয়ার্ডের ঝুলন্ত তার মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মাটির নিচ দিয়ে ফাইবার অপটিক কেবল বসিয়ে নেটওয়ার্ক তৈরির কথা ছিল ইন্টারনেট
সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি)। ২৬ মে বিটিআরসি থেকে তিন ওয়ার্ডে নেটওয়ার্ক তৈরির অনুমতি পায় আইএসপিএবি। এক বছর পার হলেও ওয়ার্ড তিনটিতে নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে পারেনি সংগঠনটি।
আবার ২০২৪ সালের ১২ মার্চ তিন ওয়ার্ডের ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সিটি করপোরেশন। চুক্তির পর নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজও শুরু করে সামিট। একই ওয়ার্ডে আইএসপিএবি বিটিআরসির অনুমোদন পাওয়ায় আপত্তি জানায়। এতে সামিটের নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ থমকে যায়। জটিলতা নিরসনে চলতি বছরের ১৫ জুন বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি দেয় চসিক। চিঠিতে আইএসপিএবিকে আগের তিনটি ওয়ার্ডের পরিবর্তে নতুন তিনটি ওয়ার্ডে নেটওয়ার্ক স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
জানতে চাইলে আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক সমকালকে বলেন, তিনটি ওয়ার্ডে নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য বিটিআরসির অনুমোদন পেলেও সিটি করপোরেশনের অনুমোদন মেলেনি। তাই কাজ শুরু করা যায়নি। সিটি করপোরেশনের অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে।
সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তির পর তিনটি ওয়ার্ডের মূল সড়কে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি। আইএসপিএবির আপত্তির কারণে কাজটি স্থগিত হয়ে যায়। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের নতুন প্রশাসন বলেছে, বিটিআরসির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এখন আমরা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।
এদিকে গত ২০ মার্চ বেসরকারি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি বাহন লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে সিটি করপোরেশন। চুক্তি অনুযায়ী, নগরের ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ড ও ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে মাটির নিচ দিয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনের কথা ছিল। বর্ষার আগে একটি ওয়ার্ডের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের। তিন মাস পার হলেও প্রতিষ্ঠানটি কাজই শুরু করতে পারেনি।
বাহন লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাশেদ আমিন বিদ্যুৎ বলেন, চুক্তি হলেও সড়ক খনন করার জন্য সিটি করপোরেশনকে ফি দিয়ে অনুমোদন নিতে হয়। সেটি পাইনি। তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে পারিনি।
তিনটি ওয়ার্ডের নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ বাহন লিমিটেডকে দিলেও গত ১৮ জুন বেসরকারি আরেকটি এনটিটিএন অপারেটর ফাইবার অ্যাট হোমের সঙ্গে পাঁচটি ওয়ার্ডে চুক্তি করেছে সিটি করপোরেশন। তারা ডিশ ও ইন্টারনেট সংযোগের নেটওয়ার্ক মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শুরুতে আইএসপিএবি নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে পারেনি। এ কারণে সামিটকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তাদের অন্য তিনটি ওয়ার্ডে কাজ করার অনুমোদন দেওয়া হবে। কাজ শুরু হলে বাহন ও ফাইবার অ্যাট হোমের সঙ্গে বসেও ওয়ার্ডগুলোর কাজ সমন্বয় করা হবে।
অনুমোদন জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। মাটির নিচ দিয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য সড়ক ও অলিগলি খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে। তাতে জলাবদ্ধতা তৈরির হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ জন্য তখন অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বর্ষা শেষ হলে অনুমোদন পাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ন টওয় র ক র জন য র ঘটন নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান–ভারত যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করলেন আসিম মুনির
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গতকাল বুধবার উচ্চপর্যায়ের বিরল এক বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। এ সময় তিনি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ট্রাম্পের গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
হোয়াইট হাউসের ক্যাবিনেট কক্ষে মধ্যাহ্নভোজে ট্রাম্পের সঙ্গে আসিম মুনিরের বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ। ফিল্ড মার্শাল মুনিরের সঙ্গে ছিলেন ইসলামাবাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
পাকিস্তান আইএসপিআরের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে জিওনিউজ জানায়, সেনাপ্রধান মুনির মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাষ্ট্রনায়কসুলভ মানসিকতা ও বৈশ্বিক জটিলতা বোঝার ও মোকাবিলা করার দক্ষতার প্রশংসা করেন। ট্রাম্পও ফিল্ড মার্শাল মুনিরের নেতৃত্ব ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার প্রশংসা করেন। তিনি জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
প্রাথমিকভাবে বৈঠকটি এক ঘণ্টা নির্ধারিত থাকলেও তা দুই ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়, যার মধ্যে ছিল বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খনিজ সম্পদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জ্বালানি ইত্যাদি।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদারত্বের ভিত্তিতে লাভজনক বাণিজ্য চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
দুজনের বৈঠকে ইরান-ইসরায়েল সংকট নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। বৈঠকে চলমান সংঘাতের ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়োজনীয়তার’ ওপর জোর দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির।
উষ্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে ফিল্ড মার্শাল মুনির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘ফিল্ড মার্শাল মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাওয়া ছিল আমার জন্য সম্মানের। আমি তাঁকে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ইরানকে ভালো করে চেনে—বেশির ভাগ দেশের চেয়ে ভালো।’ তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আলোচনা চলছে।
মুনিরের সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ
ফিল্ড মার্শাল মুনিরের এই সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, গত মাসে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।
গত এপ্রিলে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর দিল্লি এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল। ইসলামাবাদ দিল্লির অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, তারা কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
ওই হামলার ঘটনার জেরে গত ৭ মে ভারত পাকিস্তানে চালায়। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। ওই সংঘাতে পাকিস্তানে ৪০ জন সাধারণ নাগরিক ও ১৩ জন সেনাসদস্য নিহত হন।
সংঘাতে পাকিস্তান ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে, যার মধ্যে তিনটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান।
শেষ পর্যন্ত গত ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, যা এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ইতি টানে। যুদ্ধবিরতির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করারও আগ্রহ দেখিয়েছেন।